বিজেপির প্রার্থীতালিকা ঘোষণা হতেই জেলায় জেলায় ধুন্ধুমার বিক্ষোভ
রানিগঞ্জ, দুর্গাপুর, সিতাই, চাকুলিয়া, হরিশচন্দ্রপুর, পান্ডবেশ্বর, দমদম, জগদ্দল, জলপাইগুড়ি সদরে ব্যপক বিদ্রোহ
গতকালই ১৪৮ টি আসনের প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করল বিজেপি। বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে মনোনীত প্রার্থী অপছন্দের হওয়ায় বিক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাদের দলেরই একাংশ। বৃহস্পতিবার দুপুর গড়িয়ে বিকেল থেকেই জেলায় জেলায় দানা বাঁধে ব্যপক অসন্তোষ। দীর্ঘদিন দলের হয়ে মানুষের জন্য কাজ করা অঞ্চলের সুপরিচিত মুখ যাদের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের প্রার্থী হিসেবে আশা করেছিলেন স্থানীয় বিজেপি কর্মীরা, তারা প্রার্থীপদ না পাওয়ায় তীব্র বিক্ষোভে ফেটে পড়েন বিজেপি কর্মী সমর্থকরা। কোথাও আবার তৃণমূল থেকে সদ্য বিজেপিতে যোগদানকারী নেতার প্রার্থীপদ পাওয়াকে মেনে নিতে পারেননি বিজেপির একাংশ।
রানিগঞ্জ কেন্দ্রে ড.বিজন মুখোপাধ্যায়ের নাম ঘোষিত হওয়ায় স্থানীয় বিজেপির অভিযোগ, তিনি দলের কোনো কর্মীই নন। এর প্রতিবাদে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ও ২ নম্বর জাতীয় সড়কের সংযোগস্থলে বিক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে।
জগদ্দল বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থীপদ পেয়েছেন অরিন্দম ভট্টাচার্য। তিনি সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েই প্রার্থীপদ পেয়ে গেলেন, যা মানতে পারেননি স্থানীয়রা। বিক্ষোভকারীরা বিজেপি কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় এবং বাসুদেবপুর মোড়ে দলীয় পতাকা, ফ্লেক্স জ্বালিয়ে অবরোধ করে। জগদ্দলে অরুণ ব্রহ্মকে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান তারা।
দমদমে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে ঘোষিত হল বিমলশঙ্কর নন্দর নাম। অপছন্দের প্রার্থীর বিরুদ্ধে দমদম রোডে আন্দোলন করেন বিজেপি কর্মীরা।
জলপাইগুড়ি সদরে পছন্দের দীপেন প্রামানিকের বদলে অপছন্দের সুজিত সিংহকে প্রার্থী করায় বিজেপি পার্টি অফিস ভাঙচুর করে আগুন লাগায় কর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে শেষে দমকলের সহায়তায় সামাল দেওয়া হয়।
কোচবিহারের সিতাই কেন্দ্রে দেখা গেল আরেক নতুন ছবি। বিজেপি নেতা ও প্রার্থীপদের অন্যতম দাবিদার ভবেনচন্দ্রকে প্রার্থী না করে দীপক রায়কে প্রার্থীপদ দেওয়ায় ভবেনবাবু ও তার অনুগামীরা সরাসরি তৃণমূলে যোগদান করেন। পয়সা নিয়ে দীপককে প্রার্থী করেছে বিজেপি, ক্ষোভ উগরে দেন ভবেন অনুগামীরা।
প্রায় একই ধরনের অভিযোগ মালদায়। মালদায় ১২ আসনে ঘোষিত প্রার্থীপদ নিয়ে চূড়ান্ত অসন্তুষ্ট স্থানীয় বিজেপি। হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভা বিজেপি পার্টি অফিসে চলে ব্যপক ভাঙচুর। "টাকার বিনিময়ে টিকিট বিক্রি করা হয়েছে", সরাসরি অভিযোগ করেন মালদা বিজেপি জেলা সভাপতি গোবিন্দ মন্ডল।
তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগদানকারী দীপ্তাংশু চৌধুরীকে দুর্গাপুর-পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নাম ঘোষণার পরেই বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা দুর্গাপুরের বিদ্যাসাগর অ্যাভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন এবং তাদের দাবি দীপ্তাংশুকেই প্রার্থী হিসেবে রাখা হলে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করাবে ওই কেন্দ্র।
পান্ডবেশ্বরে আবারো জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে নিয়ে অসন্তোষ বাঁধে। বিজেপি কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়েও পরে খুলে দেয়া হয়।
এখনো বেশ কয়েকটি আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা বাকি রেখেছে বিজেপি। তবে প্রার্থী ঘোষণার পরই জেলায় জেলায় এই প্রকারের অসন্তোষ শেষমেশ কী বার্তা বয়ে আনবে গেরুয়াদলে, এখন সেটাই দেখার।