অভিনব চুরি, বাড়ির আত্মীয় সেজে লক্ষাধিক টাকা হাতানোর অভিযোগ
চুরির এই ঘটনা শুনে তাজ্জব এলাকাবাসী
অভিনব কায়দায় চুরি। কী বলিউড, কী হলিউড - সব চোরেদের ঘোল খাইয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এই 'বিশ্বাসী' চোর। এলাকার কমবয়সী ছেলেদের মুখে মুখে এখন, "এইসব ধূম-টুম এখন অতীত। এই চুরির কাছে সব চুরি বিদ্যাই ফেল!" প্রথমে দূর সম্পর্কের আত্মীয় সেজে বাড়িতে আসা, অতীত স্মৃতিচারণার মধ্য দিয়ে বাড়ির লোকেদের মন গলানো, সেই বাড়ির সাংসারিক কাজে আনন্দের সঙ্গে অংশগ্রহণ, এমনকী যাদের বাড়ির আত্মীয় সেজে এ বাড়িতে আসা সেই বাড়িতে গিয়েও রীতিমতো কথার জালে সবাইকে বশ করে নিয়ে দিন দশ-বারো পরে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক টাকা নিয়ে চম্পট দেওয়া - এ তো পুরো একটা সিনেমার চিত্রনাট্য। তবে এই সিনেমার নায়ক এবং ভিলেন কিন্তু একজনই। বাকি চরিত্রগুলো বিশ্বাসভঙ্গের শরিকমাত্র।
ঘটনাটি নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জের। সূত্রের খবর, এই কৃষ্ণগঞ্জের দুর্গাপুর এলাকার পুকুরপাড়ার বাসিন্দা অমর বিশ্বাস। তিনি পেশায় একজন কৃষক। ধান, পাট-সহ অন্যান্য কৃষিকাজের মাধ্যমেই তাঁর দিন গুজরান হয়। অমরের বড়ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে স্থানীয় অসীম সিকদারের মেয়ে অদিতির। হঠাৎ-ই এই অসীম সিকদারের বাড়িতে এক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির আবির্ভাব হয়। তিনি নিজেকে অসীম সিকদারের দূর সম্পর্কের ভাই বলে পরিচয় দেন। নিজের নাম বলেন বাবলু সিকদার। সেই বাড়িতে থেকে ধীরে ধীরে সেই বাড়ির লোকের মন জয় করে ফেলেন। এমনকী অসীমের বাড়ির বাজার-হাট করা, ঘরের কাজকর্ম সবই খুশি মনে করতে থাকে সেই 'বহুরূপী' বাবলু।
এর মধ্যে অসীম তাঁর মেয়ে অদিতিকে এই অযাচিত কাকার কথা জানান। এমনকী অদিতিও গদগদ হয়ে এই নতুন কাকাকে দেখার প্রত্যাশায় তার শ্বশুরবাড়িতে আমন্ত্রণ জানায়। অসীম এবং বাবলু যথারীতি অদিতির বাড়িতে হাজির হন। সেখানে গিয়েও বাবলুর সে কী মিষ্টি ব্যবহার। সেখানেও অল্পেতেই বাড়ির লোকজনের সঙ্গে মিশে যান। অসীম তাঁর মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরে এলেও বাবলু কিন্তু আরও দিনকতক থাকার প্রত্যাশায় থেকে যান।
বাবলু সিকদার অমরের বাড়িতেও 'জামাই' আদরে থাকতে শুরু করেন। এমনকী অদিতির শ্বশুর অমর বাবলুর পরামর্শে লক্ষাধিক টাকার পাট বিক্রি করেন। আর বাবলুর পরামর্শ মতোই পাটের টাকা এবং জমানো টাকা মিলিয়ে নতুন দালানের ছাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরপরই শুরু হয় বাবলুর আসল খেল। একদিন হঠাৎ বাবলু জানায় কাজের সূত্রে তাকে একটু বাইরে যেতে হবে। বাড়ির সকলে খুশি মনে বিদায় দেন। এমনকী বাড়ির লোকেরা তাকে স্টেশন পর্যন্ত বিদায় জানিয়ে আসেন। কিন্তু কথায় আছে সর্ষের মধ্যে ভূত! ঘরে ফিরে অমর দেখেন বাড়িতে কানাকড়িও নেই। সবার তো মূর্ছা যাওয়ার অবস্থা। এমন সরল বিশ্বাসে কেউ ছুরি মারতে পারে তা স্বপ্নেও ভাবেনি।
এই বাবলু শিকদার নামধারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। বিশ্বাস ভঙ্গের জ্বালায় কৃষ্ণগঞ্জের বিশ্বাস পরিবারে এখন হাহাকার অবস্থা!