বৃষ্টি থামলেও ছাড়া জলে তীব্র হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি, বাড়ছে বাঁধ ভাঙার আতঙ্ক
আজ আকাশপথে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন মুখ্যমন্ত্রী
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, "অতি বৃষ্টি আমি সামলাতাম, কিন্তু বন্যাটা হচ্ছে জল ছাড়ার ফলে। এটা ম্যান মেড ফ্লাড।" অন্যদিকে বিরোধীদের কটাক্ষ, এই বন্যা ম্যান মেড নাকি রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা? কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেছেন, ইডি, সিবিআইয়ের হাত থেকে বাঁচতে সরকার সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে, এই বন্যা যদি ম্যান মেড হয়, তাহলে সুপ্রিম কোর্টে যান, না জানিয়ে জলছাড়ার জন্য কমপক্ষে হাইকোর্টে যান। এই অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগের মধ্যেই শনিবার সকালে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ৪০০ কিউসেক জল ছাড়ার কথা। অন্যদিকে মাইথন ৭০ হাজার কিউসেক এবং পাঞ্চেত ৫৫ হাজার কিউসেক জল নতুন করে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবহাওয়া এমন থাকলে ধীরে ধীরে জল ছাড়ার পরিমাণ কমবে বলে জানা গেছে।
বাঁকুড়া এবং পশ্চিম বর্ধমানের পরিস্থিতি অতি উদ্বেগজনক। বৃষ্টি কমার ফলে জলস্তর ক্রমশ নামছে। তবে নতুন করে বাঁধ ভাঙার ফলে ফের একাধিক জায়গা প্লাবিত হওয়ার খবর এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, "বাঁকুড়া পুরোটা ডুবেছে। পুরুলিয়া, আসানসোল জলের তলায়। মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমানের অনেকটাই জলে ভাসছে।" বাঁকুড়ার মূল শহরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখনও জলমগ্ন। কিছু কিছু জায়গায় জল নামার খবর এসেছে। বাঁকুড়ার ২২৯ টি পঞ্চায়েতে অন্তত ৬০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। ১৫ হাজারের বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে। বাড়ির দেওয়াল চাপা পড়ে ২ জন, সাপের কামড়ে ১ জন এবং জলের তোড়ে তলিয়ে ১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম, কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট প্রভৃতি বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন। বীরভূমের বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায়। অজয় নদের নদীবাঁধ ভাঙনের ফলে হুহু করে জল ঢুকেছে এলাকায়।
অন্যদিকে ডিভিসির জল ছাড়ার ফলে হুগলির আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন। তার পাশাপাশি দ্বারকেশ্বর, দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী নদীর জলস্তর বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে চলেছে। কিছু কিছু স্থানে নদীবাঁধ ভেঙেছেও বটে। তারকেশ্বর, খানাকুল প্রভৃতি এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল ফের জলের তলায়। নতুন করে জল ছাড়ার ফলে ফের বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর, পটাশপুর, চন্ডীপুর এলাকায় নতুন করে জলস্তর বেড়েছে। এইসব এলাকায় একরের পর একর জমি জলের তলায়। নষ্ট হয়েছে ধানজমি, কৃষিক্ষেত্র। বন্যার পর বাড়ছে রোগের প্রকোপ। পটাশপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় এখনও বিদ্যুৎ পরিষেবা মেলেনি।
জল ছাড়ার ফলে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর, আমতা প্রভৃতি এলাকা প্লাবিত। উদয়নারায়ণপুরের বহু মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উদ্ধার কাজে সেনা নামানো হয়েছে। এরমধ্যেই আজই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আকাশপথে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন বলে সূত্রের খবর।