প্রবল বৃষ্টিতে দুই মেদিনীপুর জলের তলায়, বাড়ছে বন্যার আশঙ্কা
কেলেঘাই, বাগুই, চন্ডীয়া প্রভৃতি নদীবাঁধে ভাঙন, বন্যা পরিস্থিতি
গত কয়েক দিনের রেকর্ড বৃষ্টিতে দুই মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা কার্যত জলের তলায়। বেশ কয়েকটি জায়গায় আবার বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। লাগাতার বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত বিঘের পর বিঘে চাষের জমি, মাছের ভেড়ি, সব্জির বাগান। প্রশাসনের তরফে খবর, কয়েক শো মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছে। বহু জায়গার মানুষ স্থানীয় স্কুল কিংবা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। কেলেঘাই, কংসাবতী, বাগুই, চন্ডীয়া ইত্যাদি বেশ কয়েকটি নদীর জলস্তর অত্যন্ত বিপদসীমার মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে। এর মধ্যে পটাশপুরের বাগুই নদী এবং ময়নার চন্ডীয়া নদীবাঁধের বেশ কয়েকটি জায়গায় ধ্বস নেমেছে। এরফলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সরকারি তরফে বেশ কয়েকটি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে খবর।
অন্যদিকে, পূর্ব আশঙ্কা মতোই বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কেলেঘাই নদীবাঁধ ভেঙেছে বলে সূত্রের খবর। গত কয়েক দিন ধরেই স্থানীয় মানুষ নদীবাঁধ আটকে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। বস্তায় মাটি ভরে ত্রিপল ফেলে পরপর মাটির বস্তা রেখে নদীবাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন অসংখ্য মানুষ। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি বলে সূত্রের খবর। গতকাল রাত ১ টা নাগাদ পটাশপুরের তালছিটকিনীর কাছে নদীবাঁধ ভেঙেছে বলে সূত্রের খবর। এরফলে পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর ১, ভগবানপুর, চন্ডীপুর প্রভৃতি এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সাধারণ মানুষ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এছাড়া হলদিয়া, তমলুক, মহিষাদল, এগরা, কাঁথি প্রভৃতি এলাকার বেশিরভাগ জায়গা জলের তলায়। এমনকী পুরসভা এলাকাগুলিও জলমগ্ন।
জেলার শ'য়ে শ'য়ে পুকুর ভেসে গেছে। ভেসে গিয়েছে অসংখ্য মাছের ভেড়ি। বিভিন্ন এলাকার চাষের জমির ৯০ শতাংশ এখনও জলের তলায়। এরমধ্যে বাগুই, চন্ডীয়া এবং কেলেঘাই নদীবাঁধে ভাঙন ধরায় আরও বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পটাশপুরের ১ ও ২ ব্লক, এগরার ১ ও ২ ব্লক, ভগবানপুর, দেশপ্রাণ, কাঁথি ১ ও ৩ ব্লকের বেশিরভাগ মৌজা প্লাবিত। সূত্রের খবর, অধিকাংশ এলাকার কৃষিকাজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি উৎসবের মরসুমে পাঁশকুড়ার ফুলচাষীরা মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতির মুখোমুখি। সব মিলিয়ে দুই মেদিনীপুরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
উল্লেখ্য, কেলেঘাই নদীবাঁধের ভাঙন নিয়ে সাধারণ জনমানসে তীব্র চাপানউতোর তৈরি হয়েছে। সরকার নদী সংস্কার করলেও নদীর পাড়ে গজিয়ে উঠেছে ইটভাটা, বাড়ি, দোকান প্রভৃতি। এরফলে নদীপথ ধীরে ধীরে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রতি বছরই বন্যার আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে। সাধারণ মানুষ কেলেঘাই নদীর দখলমুক্তের তীব্র দাবি তুলেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা আশিস প্রামাণিক জানিয়েছেন, "প্রবল বৃষ্টির ফলে নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীর দুই তীরে গজিয়ে উঠেছে ইটভাটা, দোকান, বাজার। ধীরে ধীরে নদীপথ আরও সংকীর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রত্যেক বছর বন্যা পরিস্থিতি বাড়ছে। প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া।"