খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে চলেছে, কমতে চলেছে মদের দাম
নীতি-পত্র তৈরি হয়ে গেছে, এখন দরকার শুধু নবান্নের অনুমতি
বাজারে আলু, সবজি, মাছের আকাশছোঁয়া দামে রাজ্যের মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। দু'বেলা ডাল-ভাত জোগাড় করা দুষ্কর হয়ে উঠছে খেটে খাওয়া মানুষের। এই অবস্থায় রাজ্যবাসী আশা করেছিল দাম বৃদ্ধি রুখতে সরকার দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু পরিবর্তে দেখা গেল, মদ্যপায়ীদের মুখে হাসি ফোটাতে সরকার বেশি তৎপর।
যে সরকার কম দামে খাদ্যদ্রব্য দেওয়ার ব্যবস্থা করছে না, সেই সরকারেরই আবগারি দফতর কম দামে দিশি মদ বাজারে আনার পরিকল্পনা করছে! নীতি-পত্র তৈরি হয়ে গেছে, এখন দরকার শুধু নবান্নের অনুমতি। তা মিলে গেলেই মদ্যপায়ীদের কেল্লা ফতে। বাজারে মাত্র পঞ্চাশ টাকায় পাওয়া যাবে দেশি মদের বোতল। ভেতর থেকে হলদে রঙের তরল হাতছানি দেবে মদ সেবনকারীদের। দফতরের আশা, সব কিছু ঠিকঠাক চললে আগামী বিধানসভা ভোটের আগেই বাজারে এসে আসর জাঁকিয়ে বসবে সরকারি স্ট্যাম্প লাগানো এই নতুন দিশি মদ।
কেন হঠাৎ এমন উদ্যোগ আবগারি দফতরের? তাদের বক্তব্য, বাজারে যেসব দিশি মদ পাওয়া যায়, সেগুলির দাম গত কয়েক বছরে বেশ বেড়েছে। এক বোতল দিশি মদের দাম এখন কম-বেশি শ' খানেক টাকা। রাজ্যে মোটামুটি বছরে দিশি মদ বিক্রি হয় 40 কোটি বোতল, যার ক্রেতারা অধিকাংশই গরিব খেটে-খাওয়া মানুষ। দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের একটা বড় অংশই চোলাই মদের দিকে ঝুঁকছেন। এমনিতেই দেশজুড়ে অর্থনীতির বেহাল দশা বেকারত্বের ভয়াবহতায় বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষ। তার ওপর করোনা অতিমারি বিরাট সংখ্যক শ্রমজীবী মানুষের রোজগারে থাবা বসিয়েছে। অথচ দিনের শেষে সারা দিনের ক্লান্তি, হতাশা, ব্যর্থতা ভুলে ঘুমের অতলে তলিয়ে যেতে এই মদের বোতলই দীন দরিদ্র মানুষগুলির পরম বন্ধু। এ না হলে চলে না তাঁদের। আর সেই সুযোগটাই নিচ্ছে সরকার। যুক্তি দিচ্ছে, তাদের এই পরিকল্পনায় বিষাক্ত চোলাই মদ খেয়ে মৃত্যুর ঘটনা কমে যাবে এবং সরকারের হাতে রাজস্ব আসবে।
পোড়-খাওয়া মানুষদের কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, মদের দাম কমানোর সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধিতে বেড়ে ওঠা ক্ষোভ কমানোর কোনও সম্পর্ক নেই তো?