শান্তিনিকেতনে এবার জমজমাট বিকল্প পৌষমেলা
বাতাসে ভাসছে বাউল গানের উদাস সুর
শান্তিনিকেতনে পূর্বপল্লির মাঠ জুড়ে এখন মন খারাপের ঘন কুয়াশা। গত বারের মতো এবারেও এখানে বসেনি ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা। তবে বোলপুরের ডাকবাংলো ময়দান এখন জমজমাট। পুরনো জায়গায় মেলা করার অনুমতি না মেলায় এখানেই বিকল্প মেলার আয়োজন করেছে বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বোলপুর পুরসভা ও বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতি।
রীতি মেনে ৭ পৌষ অর্থাৎ ২৩ ডিসেম্বর ডাকবাংলো ময়দানে উদ্বোধন হয়েছে বিকল্প মেলার। উদ্বোধন করেছেন প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর। উপস্থিত ছিলেন বিশ্বভারতীর দুই প্রাক্তন উপাচার্য স্বপন দত্ত ও সবুজকলি সেন। মেলা চলবে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আপাতত পাঁচশোরও বেশি স্টল নিয়ে মেলা প্রাঙ্গন জমজমাট। রয়েছে রকমারি হস্তশিল্প আর মাটির জিনিসের মেলা। নাগরদোলা আর খাবারের দোকান ঘিরে ছোট-বড় সকলের আনন্দমুখর ভিড়। হোটেলের ঘরগুলিও ফাঁকা নেই। আগের চেয়ে সংখ্যায় কম হলেও মেলায় যোগ দিতে বাইরে থেকে পর্যটকরা এসে এখানে রয়েছেন।
হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে শান্তিনিকেতনের অর্থনীতি। সারা বছর এই মেলার দিকে তাকিয়েই বসে থাকেন এলাকার ছোট বড় ব্যবসায়ী, হস্তশিল্পী ও লোকশিল্পীরা। গতবছর কোভিডের কারণে মেলা বন্ধ ছিল। এবার রোগের প্রকোপ কমায় আশা ছিল, পুরনো চেহারায় দেখা মিলবে সকলের প্রিয় পৌষমেলার। কিন্তু পুর-প্রশাসক জানিয়েছেন, পুরসভার পক্ষ থেকে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও শান্তিনিকেতন ট্রাস্টকে মেলা করার অনুমতি চেয়ে চিঠি দিলেও উত্তর মেলেনি। এদিকে বিশ্বভারতীর উপাচার্য মেলা না হওয়ার দায় চাপিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের উপর।
এলাকার মানুষ চেয়েছিলেন মেলা ঘিরে এই দড়ি টানাটানি বন্ধ হোক। সেই ১৮৯৪ সাল থেকে চলে আসা পৌষমেলা তো নিছক একটা মেলা নয়, বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী সহ দেশের নানা রাজ্য, এমনকি বিদেশ থেকে আসা বহু মানুষের মিলনস্থল। তাই চিরাচরিত জায়গায় মেলা করার দাবিতে ১২ ডিসেম্বর পদযাত্রায় সামিল হয়েছিলেন স্থানীয় হস্তশিল্প ব্যবসায়ী ও লোকশিল্পীরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও অধ্যাপকরাও। কিন্তু অনুমতি মেলেনি। এই অবস্থায় বিকল্প মেলা করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ। আপাতত এতেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে মেলাপ্রেমীদের। সংস্কৃতি মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে কোনও মতেই মানুষের প্রাণের এই মেলা বন্ধ করতে দেওয়া হবে না।
বোলপুরের ডাকবাংলো ময়দান এবার তাই ভরে উঠেছে হস্তশিল্পের পসরায়। বাতাসে ভাসছে বাউল গানের উদাস সুর। এলাকা জুড়ে এখন মেলামুখী মানুষের খুশিয়াল ঢল।