গাড়ি চালক এবং রাজমিস্ত্রি থেকে প্রাসাদের মালিক, কিভাবে রামপুরহাটের বেতাজ বাদশা হয়ে উঠলেন ভাদু-আনারুল?
রামপুরহাটের ঘটনার পর তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় স্তরের নেতাদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে
বীরভূমের বগটুই গ্রামের ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই তোলপাড় হয়ে উঠেছে গোটা পশ্চিমবঙ্গ। নিহত বরশাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখ এবং ধৃত তৃণমূল নেতা আনারুল হোসেন দুজনেই এই মুহূর্তে সকলের নজরে। দুজনেই প্রাসাদ প্রমাণ দুটি বাড়ির মালিক। কিন্তু একজন সামান্য ছোট ব্যবসায়ী কিংবা রাজমিস্ত্রি থেকে কিভাবে এই উন্নতি? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে নানা মহলে। তাহলে কি শুধুমাত্র রাজনীতি করেই এমন উল্কার গতিতে উত্থান হলো এই দুজনের? ভাদু এবং আনারুল দুজনের পূর্ব পরিচয় সামনে আসার পরেই নানা মহল থেকে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন।
সোমবার রাতে রামপুরহাটে খুন হয়েছিলেন ভাদু শেখ। তাকে বোমা মেরে দুষ্কৃতীরা খুন করে বলে অভিযোগ। এরপর ওই রাতেই বগটুই গ্রামের পুড়িয়ে মারা হয় কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা কে। ইতিমধ্যেই এই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, একটা সময় সামান্য মুরগির ব্যবসা করতেন ভাদু শেখ। কখনো কখনো ছোট গাড়ি চালিয়েছেন তিনি। আবার কখনো তাকে দেখা গেছে পুলিশের গাড়ি চালাতে। তবে সেই সময় সম্পূর্ণরূপে রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন তিনি। পরে নিজের একটি গাড়ির ব্যবসা শুরু করেন। এরপর পাথর এবং বালি খাদান এর গাড়ি থেকে নেওয়া টোলের দেখভাল করার চাকরি নেন তিনি। তারপরেই রাজনীতিতে পা দেওয়া। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপপ্রধান হয়ে যান ভাদু শেখ। তারপর থেকেই তার উত্থান। জানা গিয়েছে, বগটুই গ্রামে একটি পুরনো একতলা বাড়ি ছিল ভাদুর। সেখানে আবার একটা অংশ প্লাস্টার পর্যন্ত হয়নি। কিছুটা অংশের রঙ পর্যন্ত নেই।
কিন্তু সেই একই ব্যক্তির গ্রামের মোড়ের কাছে রাস্তার ধারে বেশ কিছুটা জায়গার উপরে একটি মার্বেল বসানো ঝাঁ-চকচকে তিনতলা বাড়ি রয়েছে। ওই বাড়ি যেন একেবারে রাজপ্রাসাদের মত। ফ্রিজ এসি থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর সমস্ত সরঞ্জাম রয়েছে সেই বাড়িতে। অন্যদিকে, এই একই কাণ্ডে নাম জড়ানো তৃণমূল নেতা আনারুল হোসেন এ রকমই একটি বাড়ি হাঁকিয়ে বসে রয়েছেন। একটা সময় তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। সেই সময় যদিও তিনি কংগ্রেসের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। পরবর্তীতে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন আনারুল। তারপরেই কার্যত রামপুরহাট এলাকার বোগটুই গ্রামের একেবারে বেতাজ বাদশা হয়ে ওঠেন আনারুল হোসেন। ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এবং রামপুরহাট এর বিধায়ক আসিস বন্দোপাধ্যায় এর। এরপর আনারুলকে রামপুরহাট এর ১ নম্বর ব্লকের সভাপতি হিসেবেও নিয়োগ করা হয়। সাংগঠনিক দিক থেকে ওই এলাকা ছিল তার আওতায়। তৃণমূলের একজন দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে উঠেছিলেন আনারুল।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধী দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও, রামপুরহাট লাগোয়া সন্ধিপুর এলাকায় আনারুলের একটি ঝাঁ-চকচকে দোতলা বাড়ি রয়েছে। এমন কিছুই বাড়ির সামনে একটি সাজানো গোছানো লন পর্যন্ত রয়েছে। এসি ফ্রিজ থেকে শুরু করে ঘর সাজানো সমস্ত উপকরণ তো আছেই। সঙ্গেই ভিতরে আবার সম্পূর্ণ মার্বেল বসানো এবং মোজাইক করা। যদিও, তৃণমূল কংগ্রেসে এই ঘটনা প্রথম নয়। এমনকি বিধানসভা নির্বাচনের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজস্ব নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ানের রাজ প্রাসাদের মতো বাড়ি দেখে রীতিমতো বিষয় প্রকাশ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও। পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর এর তৃণমূল নেতার নান্টু প্রধানের রাজ প্রাসাদের মতো বাড়ি নিয়ে একটা সময় প্রশ্ন উঠেছিল। ভাদু শেখের মতো তাকেও খুন হতে হয়। কিন্তু কিভাবে তৃণমূলের এত নিচু স্তরের নেতাদের এত বৃহৎ উন্নতি? এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে।