বাংলাকে পৃথক রাষ্ট্র মনে করে তৃণমূল, ট্যাবলো বিতর্কে খোঁচা শমিকের
পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবলো বাতিল হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সৌগত রায় এবং কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী
বিগত কয়েক বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের (Republic Day) দিন বাংলার ট্যাবলো নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্যের সংঘাত চরমে উঠেছে। বিগত কয়েক বছরে প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন বাংলার ট্যাবলো (West Bengal Tableau) দেখা যায়নি দিল্লির রাজপথে। এবারে আশা ছিল হয়তো এবারে বাংলার ট্যাবলো দিল্লির রাজপথে স্থান করে নিতে পারবে, কারণ এবারের থিম ছিল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে(Netaji Subhash Chandra Bose) নিয়ে। কিন্তু এবারেও তেমনটা হলো না। পশ্চিমবঙ্গে প্রস্তাবিত ট্যাবলেটে এবারও লালকেল্লার সামনে দিয়ে যেতে দেখা যাবে না। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর থিম নিয়ে এবার ট্যাবলো সাজিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ, বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পূর্ণ মানানসই। কিন্তু তাও বাতিল হলো বাংলার ট্যাবলো। যদিও, লিখিতভাবে ট্যাবলো বাতিলের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোন আলোচনা করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। নিয়মমাফিক প্রতিরক্ষা কমিটি তৈরি একটি কমিটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে রাজ্য সরকার দাবি করছে, ট্যাবলো তৈরি সংক্রান্ত বৈঠকে ডাকা হয়নি রাজ্য সরকারের কোনো প্রতিনিধিকে।
যদিও এই প্রথম নয় গত কয়েক বছরের মধ্যে বারংবার বাংলার ট্যাবলো বাতিলের ঘটনা প্রজাতন্ত্র দিবসে ঘটে যাচ্ছে। এর আগেও কন্যাশ্রী, এবং বাংলা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে তৈরি ট্যাবলো বাতিল হয়েছে। তবে এবারে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল ট্যাবলো। স্বাধীনতার হীরক জয়ন্তী উপলক্ষে প্রজাতন্ত্র দিবসের থিম সাজানো হয়েছিল আজাদী কা আমৃত মহোৎসব হিসেবে। কিন্তু সেখানেই বাদ পড়ে গেলেন নেতাজি। বাংলা প্রস্তাবিত ট্যাবলোতে স্থান পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ, সুভাষচন্দ্র, আজাদ হিন্দ বাহিনী, ত্রিপুরা কংগ্রেসের গান্ধীজির সঙ্গে নেতাজির ছবি সহ একাধিক কাটাউট। এছাড়াও যখন ট্যাবলো যাওয়ার কথা ছিল, সেইসঙ্গে 'কদম কদম বাড়ায়ে যা' গানটির বাজার কথা ছিল। বাংলার প্রস্তাবিত এই নেতাজি থিমের ট্যাবলো বাদ পড়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন তৃণমূল নেতারা। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সাংসদ সৌগত রায় দাবি করছেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে অপমান করছে মোদি সরকার।
তবে এই ট্যাবলো বিষয় নিয়ে রাজ্য সরকারকে খোঁচা দিতে ছাড়েনি রাজ্য বিজেপি। বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, "রাজ্যের তৃণমূল সরকার মনে করে বাংলা একটা পৃথক রাষ্ট্র। কেন্দ্রে তো বিজেপি সরকার রয়েছে। কেন্দ্রে রয়েছে ভারত সরকার। এখন যদি তৃণমূল সরকার মনে করে, নিজের মত ইচ্ছা খুশি যা খুশি করবে, তাহলে তো কিছু করার নেই। তাহলে তো বিরোধ হবেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো আগেরবার বলেছিলেন কন্যাশ্রী নিয়ে ট্যাবলো বানিয়ে পাঠাবেন। যা চাইবেন তা হবে নাকি।"
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বললেন, "বাংলার সঙ্গে চিরকালই এই ধরনের আচরণ করা হয়েছে। বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং বাংলার মানুষকে অপমান করা হয়েছে এর মাধ্যমে। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করছি। এই ট্যাবলো যেন কোনোভাবেই বাতিল না করা হয় সেই নিয়ে আবারও আমরা কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানাবো।" অন্যদিকে রাজ্য সরকারের কিছুটা সমর্থন করে কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী কেন্দ্র সরকার কে কটাক্ষ করেছেন। বাংলার ট্যাবলো অনুমতি নেই কেন, সেই প্রশ্ন তুলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং কে চিঠি লিখেছেন অধীর চৌধুরী। অধীর চৌধুরী বলেছেন, "আমি তো চিঠি দিয়েছি। বাংলার প্রতিনিধি হিসেবে আমি চিঠি দিয়েছি। এখন জানিনা কি উত্তর আসবে। তবে আমাদের রাজ্য সরকারেরও সমস্যা রয়েছে। কোন কিছুই বলেনা, কি করা হচ্ছে, কি পরিস্থিতি!"