করা হয়েছিল ব্ল্যাকমেল, ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’, সহকর্মীর বিরুদ্ধে আনা ধর্ষণের অভিযোগে জানালেন মহিলা বায়ুসেনা অফিসার
সহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগে গত ২৬ শে সেপ্টেম্বর বায়ুসেনার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট অমিতেশ হরমুখকে গ্রেফতার করে কোয়েম্বাটোরের মহিলা পুলিশ বিভাগ
কয়েকদিন আগেই ভারতীয় বায়ুসেনার এক অধিকর্তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন তাঁরই এক সহকর্মীনী। ঘটনাকে কেন্দ্র করে আলোড়ন পরে যায় দেশে। মহিলা আইএএফ অধিকর্তাটি অভিযোগ করেন, কোয়েম্বাটোরের আইএএফ ইন্সিটিউটে প্রশিক্ষণ চলাকালীন তাঁকে ধর্ষণ করেন অভিযুক্ত বায়ুসেনা অফিসার। ধর্ষিতার অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত আইএএফ অফিসারটিকে গ্রেফতার পুলিশ। এবার পুলিশকে দেওয়া ধর্ষিতার বয়ানে উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশের কাছে মহিলা জানিয়েছেন, তাঁকে আদৌ ধর্ষণ করা হয়েছিল কিনা তা পরীক্ষা করবার জন্য তাঁর উপর ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ করানো হয়। উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্ট বহুকাল আগেই এই পরীক্ষাপদ্ধতি বাতিল করে দিয়েছেন।
পুলিশের কাছে দায়ের করা এফআইআর-এ মহিলার উপর নির্যাতনের তথ্য সামনে এসেছে। সেখানে ধর্ষিতা উল্লেখ করেছেন, ধর্ষণের পর থেকেই তাঁকে বারংবার ব্ল্যাকমেল করা হত। তিনি আরও জানিয়েছেন, অভিযুক্ত বায়ুসেনা অধিকর্তা একা নয়, এই ধর্ষণের পিছনে আরও বেশ কয়েকজন অধিকর্তার যোগসাযোগ আছে।
উল্লেখ্য, সহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগে গত ২৬শে সেপ্টেম্বর বায়ুসেনার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট অমিতেশ হরমুখকে গ্রেফতার করে কোয়েম্বাটোরের মহিলা পুলিশ বিভাগ। পুলিশের কাছে নির্যাতিতা জানান, গত ১০ই সেপ্টেম্বর গোড়ালিতে চোট লাগে তাঁর। সেজন্য তিনি পেনকিলারও খান। সেদিন রাত্রে সহকর্মীদের সাথে তিনি মদ্যপান করেন। সেখানেই অভিযুক্ত, তাঁর গ্লাসে কোনপ্রকার মাদক মিশিয়ে দেয়। এরপরেই তাঁর শরীর ক্রমশ খারাপ হতে শুরু করে। তিনি একাধিকবার বমি করেন। পরিস্থিতি দেখে তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে ঘরে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেন। মহিলা অভিযোগ করেছেন, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ঘরে ঢোকেন অভিযুক্ত এবং তাঁকে যৌন হেনস্থা করেন। মহিলার কথায়, অর্ধচৈতন্য অবস্থায় অভিযুক্তকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। তবে তাঁর সারা শরীর অবশ হয়ে যাওয়ার কারনে তিনি তাঁকে আটকাতে পারেননি।
পরেরদিন সকালবেলায় মহিলার এক বন্ধু তাঁকে গতরাতের ঘটনা সম্পর্কে অবগত করান। এমনকি তিনি আগেরদিন রাতের ঘটনায় অভিযুক্ত অমিতেশের জড়িত থাকার প্রসঙ্গও তোলেন। এরপরেই অমিতেশকে জেরা করেন নির্যাতিতা। জেরায় অমিতেশ ঘটনার কথা স্বীকার করে ক্ষমাপ্রার্থনাও করেন। তাঁর ক্ষমাপ্রার্থনার ভিডিও তোলেন ধর্ষিতার বন্ধুরা।
মহিলা অভিযোগ করেছেন, এই ঘটনার কথা বাকি অধিকর্তাদের জানাতে তাঁরা অভিজুক্তের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য জোর করতে থাকেন। এরপরেও তিনিই অভিজগ করার উদ্দেশ্য থেকে পিছু না হটলে বায়ুসেনার চিকিৎসকেরা তাঁকে অভিযুক্তের ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করে। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারা নিষিদ্ধ করা ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’-ও করায় মহিলার উপর। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে পুলিশের দ্বারস্থ হন ধর্ষিতা।
ইতিমধ্যেই কোয়েম্বাটোর পুলিশ গ্রেফতার করেছে অভিযুক্তকে। পুলিশের কাছে ভিডিও প্রমান জমা দিয়েছেন নির্যাতিতার বন্ধুরা। তবে অভিযুক্ত অমিতেশের বিচার করার অধিকার কার আছে তা নিয়ে অ্যাডিশনাল কোর্টে বচসায় জড়িয়েছেন পুলিশ এবং বায়ুসেনা কর্মীরা। আপাতত পুলিশের হেফাজতেই আছে অমিতেশ।