মোদী সরকারের সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্প যেন 'মৃত্যুদুর্গ', দিল্লি হাইকোর্টে সওয়াল আইনজীবীর
মোদীর সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পকে হিটলারের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের সঙ্গে তুলনা
অতিমারিতে মোদী সরকারের সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্প নিয়ে ইতিমধ্যেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে। দেশের এমন পরিস্থিতিতে ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এমন প্রকল্প নিয়ে সরব হয়েছেন নানা পক্ষ। এবার দিল্লি হাইকোর্ট এই প্রকল্পকে 'সেন্ট্রাল ফোর্টেস অফ ডেথ' অর্থাৎ 'কেন্দ্রীয় মৃত্যুদুর্গ' বলে আখ্যায়িত করল। শুধু তাই নয়, হিটলারের আউশভিৎজের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
সোমবার দিল্লি হাইকোর্টে সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্প নিয়ে দায়ের করা এক জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে এমনই কথা বলতে শোনা গেল।ইতিহাসবিদ সোহেল হাশমি এবং অনুবাদক অন্যা মালহোত্রাসহ বেশ কয়েকজন মোদী সরকারের সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্প বন্ধের দাবিতে দিল্লি হাই কোর্টে এক জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, দেশের এই অতিমারি পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্যের কথা ভেবে এই প্রকল্প অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। মামলাকারীদের পক্ষে আইনজীবী সিদ্ধার্থ লুথরা বলেন, তাঁরা শুধু দিল্লির মানুষের জনস্বাস্থ্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন। শ্রমিকদের জন্য তাঁবু খাটানো হয়েছে। সেখানে বিছানাপত্র কিছুই নেই। চিকিৎসার পরিষেবা, কোভিড বিধি নিয়ে মিথ্যে তথ্য দিচ্ছে কেন্দ্র। বলা হচ্ছে, শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় কাজের জায়গায় থেকে গিয়েছেন, কিন্তু সেটা বাস্তবে সত্য নয়। এরপরই মামলাকারীদের আইনজীবী এই প্রকল্পকে 'মৃত্যুদুর্গ' বলে আখ্যায়িত করেন।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা অভিযোগ তুলেছেন, প্রথম থেকেই এই প্রকল্পের কাজে কিছু মানুষ বাধা দিতে চাইছেন। প্রকল্প আটকাতে তাঁরাই জনস্বার্থ মামলার আড়ালে বাধা দিতে চাইছেন। প্রকল্পের দায়িত্ব পাওয়া শাপুরজি পালনজি সংস্থাও জনস্বার্থ মামলার বিরোধিতা করে বলেছেন, তাঁরা শ্রমিকদের সব ধরণের পরিষেবার ব্যবস্থা করেছেন। যদিও মামলাকারীদের পক্ষের আইনজীবী সে কথা মানতে নারাজ। তাঁদের স্পষ্ট দাবি, দিল্লিতে লকডাউন চললেও কেন্দ্র এই প্রকল্পকে 'অত্যাবশ্যকীয় প্রকল্প' অ্যাখ্যা দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। এতে শ্রমিকদের মধ্যে কোভিড ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জবাব পাল্টা জবাবে আদালত আপাতত রায়দান স্থগিত রেখেছে।
মোদী সরকারের সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্প নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে প্রতিবাদ উঠেছে। বর্তমানে সরকারি নির্দেশে এই প্রকল্পের কোন ছবি অথবা ভিডিও তোলা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। পাশাপাশি এই প্রকল্প তৈরি করতে গিয়ে দিল্লির ভারতীয় জাদুঘর, ইন্দিরা গাঁধী ন্যাশনাল সেন্টার ফর আর্টস ও ন্যাশনাল আর্কাইভের অ্যানেক্স ভবনও ভাঙা পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দেশের এমন পরিস্থিতিতে মোদী সরকারের এমন প্রকল্পের গোয়ার্তুমি মানতে পারছেন না একাংশ। মোদী সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেন্ট্রাল ভিস্টা প্রকল্পে দিল্লির ভারতীয় জাদুঘর, ইন্দিরা গাঁধী ন্যাশনাল সেন্টার ফর আর্টস ও ন্যাশনাল আর্কাইভের অ্যানেক্স ভবনও ভাঙা পড়বে। ঐতিহাসিক রোমিলা, গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক, ওরহান পামুকের মতো শিক্ষাবিদ-সাহিত্যিক থেকে শুরু করে অবসরপ্রাপ্ত ফৌজিরাও মোদী সরকারের কাছে এই প্রকল্প বন্ধ করার আবেদন জানিয়েছেন। যদিও দেশের ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের কথা মনে রেখে এই প্রকল্প রূপায়ণে অনড় মোদী সরকার।