জনতা কার্ফুর বর্ষপূর্তীতে আরও ভয়ঙ্কর পুনরাবৃত্তি!
পশ্চিমবঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪২২। সুস্থ হয়েছে ২৯৫ জন। মৃতের সংখ্যা ৩।
ফিরে এল একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ঠিক এক বছর আগে ২১মার্চ সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, "আগামীকাল ২২মার্চ জনতা কার্ফু। খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া বাড়ি থেকে বোরোবেন না।" সে সময় মূলত আছড়ে পড়েছিল করোনার প্রথম ঢেউ, কী এই করোনা! কীভাবে ছড়ায়! করোনা হলে কী হয়! এ সম্পর্কে সে সময় খুব একটা স্পষ্ট ধারণা ছিল না আমজনতার। সকলে কখনও ভাবেননি জনতা কার্ফুর পর হঠাৎই ভীড় ঠাসা ট্রেন গুলি ফাঁকা হয়ে যাবে, স্কুলের বাইরে দেখা যাবে না শিশুদের, শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম রাস্তাতেও একটা মানুষ দেখা যাবে না -এমনটা সে সময় কল্পনা করেনি কেউই।
বাইরের দেশগুলি সে সময় মৃত্যুপুরীতে অবস্থান করলেও, ভারতেও যে এদিন আসবে তা বিশ্বাস করেননি অনেকেই। ভাইরাল হওয়া ইতালির মানুষের আর্তনাদের ভিডিও বেশ ভালোই মন কেড়েছিল ভারতের মানুষের অথচ তার তাৎপর্যতা বুঝতে অপারক ছিল সকলেই। আর তার ফল স্বরূপ আজও স্বাভাবিক হয়নি ভারতের করোনা পরিস্থিতি। বরং করোনা সংক্রমণের সংখ্যা কলকাতায় শূণ্যতে এসে ঠেকলেও, জনতা কার্ফুর বর্ষপূর্তিতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নতুন করে বেড়েছে ৪৬৯৫১ জন। মৃতের সংখ্যা ২১২ জন। এদিকে পশ্চিমবঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪২২। সুস্থ হয়েছে ২৯৫ জন। মৃতের সংখ্যা ৩।
গত বছর পশ্চিমবঙ্গে প্রথম করোনা রোগীর সন্ধান পাওয়া যায় ২০২০ সালের ১৭ মার্চ। নবান্নের এক উচ্চপদস্থ আমলার বিদেশ ফেরত ছেলের শরীরে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর হাবড়ার এক তরুণীর, আর তারপর উল্লিখিত কেউ নয়, শ'য়ে শ'য়ে আক্রান্তের পর তা হাজারের গণ্ডি পেরোতে থাকে। এই সংক্রমণের অন্যতম খারাপ প্রভাব পড়েছিল দেশের অর্থনীতিতে। তাই বাধ্য হয়েই একটা সময়ের পরে আনলক পর্যায় শুরু হয়। চড়া দামে বিক্রি হয় মাদক দ্রব্য, সংক্রমণের মাঝেও খুলে যায় মন্দির-রেঁস্তরা। কারণ, চাঙ্গা করতে দেশের অর্থনীতি।
গত বছর এই একই দিনে ৪০হাজারের কাছাকাছি ছিল সংক্রমণের হিসেব। অথচ এক বছর পরে তার চেয়েও বেশি পরিমানে সংক্রমণ হলেও নেই কোনো কার্ফু বা লকডাউন। উল্টে ভ্যাকসিনের খবর আসতেই মানুষের মধ্যে ফিকে হয়েছে সাবধানতার জের। এখনও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হয়নি, এখনও মানুষ অজুহাত দিয়ে বলেন "মাস্ক নেই"। এদিকে গত বছর করোনার জেরে মৃত্যু হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষের, কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ, সমস্ত উৎসবে পড়েছিল ভাঁটা। এমনকি বাঙালির শ্রেষ্ঠ পুজো, দূর্গাপুজোতেও প্যান্ডেলের ভিতর প্রবেশ ছিল নিষেধাজ্ঞা। তেমনই সামনেই গনতন্ত্রের সবচেয়ে বড়ো উৎসব, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন। নির্বাচনের মঞ্চে খেলা তো অবশ্যই হবে, তবে তা যেন রাজনৈতিক রঙের ভিতরেই থাকে। এই খেলা যেন কখনোই আপনার জীবনের সাথে না হয়। তাই সামাজিক নিরাপত্তা মেনে, সাবধানে চলাফেরা করুন।