নজরে আইএসআই, পাক মদতপুষ্ট লস্কর-ই-তইবার হাতও থাকতে পারে, ধারণা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের

নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত: 28/06/2021   শেষ আপডেট: 28/06/2021 9:41 a.m.

ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জঙ্গি হামলায় শহিদ অবন্তীপোরায় স্ত্রীসহ এক পুলিশ আধিকারিক

জম্মুর বায়ুসেনা ঘাঁটি তথা বিমানবন্দরে (Jammu Airport) নাশকতার পেছনে কাদের হাত রয়েছে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ইতিমধ্যেই গোয়েন্দাদের দাবি, এই ঘটনার পিছনে পাক মদতপুষ্ট লস্কর-ই-তইবার হাত আছে। শুধু তাই নয়, আধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন ব্যবহার করে ধারাবাহিক ভাবে নাশকতার ছক কষেছিল জঙ্গিরা। তাদের লক্ষ্য ছিল সেনাঘাঁটিতে থাকা সামরিক বিমানে আঘাত করা। এক্ষেত্রে বিশ্লেষক একাংশের বক্তব্য, এমন নিখুঁত ড্রোন (Drone) হামলার পেছনে যথেষ্ট প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইর হাত থাকতে পারে। ভারতীয় গোয়েন্দাদের ধারণা, হয়তো এই বিমানবন্দরের কোন কর্মী এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে, নাহলে এমন নিখুঁত নাশকতার ছক সম্ভব নয়। গোটা বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা।

গতকালের ঘটনার পর পুরো উপত্যকা অঞ্চল থমথমে। জম্মু-কাশ্মীরের প্রতিটি কোনায় চলছে চিরুনি তল্লাশি। কড়া প্রহরায় চলছে জঙ্গিযোগ প্রমাণের খোঁজ। সব মিলিয়ে উপত্যকার মানুষ আছেন চাঞ্চল্যের মধ্যে। এর পাশাপাশি গতকাল জম্মুর একটি জনবহুল স্থান থেকে উদ্ধার হয়েছে আরও একটি বোমা। যা থেকে গোয়েন্দাদের অনুমান, গোয়েন্দাদের সিরিয়াল নাশকতার ছক থাকতে পারে। পুলিশ বোমাটি উদ্ধার করায় আপাতত স্বস্তিতে সাধারণ মানুষ। এই ঘটনা সামনে আসার পরই গোটা এলাকায় নিরাপত্তা আরও আঁটোসাঁটো করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে আরও সেনা জওয়ান। চলছে চিরুণি তল্লাশি। কোথাও কোনও জঙ্গি লুকিয়ে রয়েছে কি না বা আর কোথাও জঙ্গিরা বোমা রেখেছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ২ বছর উপত্যকা মোটামুটি শান্ত। জম্মু-কাশ্মীরের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের পর থেকেই উপত্যকার মানচিত্রের বদল ঘটেছে। এরমধ্যেই জম্মু-কাশ্মীরের নেতৃত্বের সঙ্গে সর্বদলীয় বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই ঘটনার পর উপত্যকায় অস্থিরতা তৈরিতে পাক মদতপুষ্ট লস্কর-ই-তইবার হাত থাকতে পারে বলে অনুমান ভারতীয় গোয়েন্দাদের।

এই ড্রোন হামলার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ফের জঙ্গি হামলা। জঙ্গিরা এক পুলিশ আধিকারিকের বাড়িতে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে। স্ত্রীসহ এক পুলিশ আধিকারিকের মৃত্যু ঘটেছে। গুলিতে জখম তাঁদের মেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। সূত্রের খবর, রবিবার রাত ১১ টা নাগাদ অবন্তীপোরায় স্পেশাল পুলিশ অফিসার ফয়াজ আহমেদের বাড়িতে হামলা করে জঙ্গিরা। রক্তাক্ত অবস্থায় ৩ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক ফয়াজ আহমেদ এবং তাঁর স্ত্রীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

বিশেষ সূত্রে খবর, গতকালের ঘটনায় ২ ড্রোন দিয়ে হামলা চালানো হয়েছিল। যেগুলিতে শক্তিশালী আরডিএক্স মজুত থাকতে পারে। তবে ফরেন্সিক রিপোর্ট ছাড়া সঠিক ভাবে বলা সম্ভব নয়। মনে করা হচ্ছে ১০০ মিটার উপর থেকে এই বিস্ফোরক নীচে ফেলা হয়। ড্রোনগুলি আকারে এতটাই ছোট যে রেডারে ধরা সম্ভব হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর থেকেই জম্মু ও পাঞ্জাব সীমান্তে পাক ড্রোনের আনাগোনা বাড়তে শুরু করেছিল। গোড়ায় প্রতি মাসে গড়ে ১০-১৫টি পাক ড্রোনের ভারতে প্রবেশের প্রমাণ মিললেও, এ বছর সেই সংখ্যাটি এক ধাক্কায় বেড়ে গিয়েছে। যে ভাবে সীমান্ত থেকে ১৪ কিলোমিটার ভিতরে প্রবেশ করে হামলা চালানো হয়েছে তার পিছনে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও দীর্ঘ দিনের প্রশিক্ষণ রয়েছে বলেই মত স্বরাষ্ট্রকর্তাদের।