করোনা আবহেই হবে ৫ রাজ্যের নির্বাচন, ঘোষণা হল দিনক্ষণ ও বিধি-নিষেধ

নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত: 08/01/2022   শেষ আপডেট: 08/01/2022 4:57 p.m.
নির্বাচন কমিশন

করোনাভাইরাস আবহে ৫ রাজ্যের নির্বাচনের ক্ষেত্রে একাধিক ঘোষণা করল জাতীয় নির্বাচন কমিশন

ভারতে ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ। আর তার মধ্যেই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ভারতের পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। আর কয়েক দিনের মধ্যেই উত্তরাখণ্ড, গোয়া, পাঞ্জাব, মনিপুর এবং ভারতের সবথেকে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশে নির্বাচন হওয়ার কথা। প্রথমদিকে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা হলেও শেষমেষ নির্বাচনে নির্ঘণ্ট বাজিয়ে এই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বৃদ্ধিকে মাথায় রেখে বিধি-নিষেধ আরোপ করে ৫ রাজ্যের নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।

আজকের সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এই পাঁচটি রাজ্যে। উত্তরপ্রদেশে নির্বাচন গ্রহণ করা হবে সাতটি দফায়। অন্যদিকে মণিপুরে ২ দফায় নির্বাচন গ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন। বাকি তিনটি রাজ্য অর্থাৎ উত্তরাখণ্ড, গোয়া এবং পাঞ্জাবে এক দফাতেই ভোট গ্রহণ করা হবে। উত্তরপ্রদেশে প্রথম দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ১০ ফেব্রুয়ারি। দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি। উত্তরপ্রদেশে তৃতীয় দফায় নির্বাচন হবে ২০ ফেব্রুয়ারি। চতুর্থ দফা নির্বাচন হবে ২৩ ফেব্রুয়ারি। পঞ্চম দফায় নির্বাচন হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি। ষষ্ঠ দফায় নির্বাচন হবে ৩ মার্চ এবং সবশেষে সপ্তম দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৭ মার্চ।

অন্যদিকে উত্তরাখণ্ডে ১৪ ফেব্রুয়ারি মাত্র একটি দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তার পাশাপাশি মণিপুর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে দুই দফায়। প্রথম দফায় নির্বাচন হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি এবং তৃতীয় দফা হবে ৩ মার্চ। গোয়ায় একদফায় বিধানসভা নির্বাচনে হতে চলেছে। পাঞ্জাবেও এক দফাতেই নির্বাচন গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। গোয়ায় এবং পাঞ্জাবে নির্বাচন গ্রহণ করা হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি। পাঁচটি রাজ্যে নির্বাচন ফলাফল প্রকাশিত হবে ১০ মার্চ।

তবে এবারে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সংক্রমণ রুখতে বুথের সংখ্যা অনেকটা বৃদ্ধি করা হবে। প্রত্যেকটি বুথ হবে একদম গ্রাউন্ড ফ্লোরে। এছাড়া একটি বুথে সর্বোচ্চ ১২৫০ জন ভোটার থাকতে পারবেন। গতবারের তুলনায় এবছর ইতিমধ্যেই পোলিং বুথ এর সংখ্যা ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এছাড়াও ৫ রাজ্যে সর্বমোট বুথের সংখ্যা হবে ২ লক্ষ ১৫ হাজার ৩৬৮টি। ভোটারদের মাস্ক পরে তবে ভোট দান করতে হবে। এছাড়াও স্যানিটাইজার এবং থার্মাল স্ক্যানার এর ব্যবস্থা থাকবে প্রত্যেকটি ভোটিং বুথে। ভোটের সময় কাল এক ঘন্টা বাড়ানোর ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।

এছাড়াও করোনাভাইরাস আক্রান্ত ও ৮০ বছর বয়সের বৃদ্ধ ব্যক্তিদের জন্য পোস্টাল ব্যালট সুবিধা থাকবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রার্থীদের অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের প্রধান। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, যেহেতু মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় প্রার্থী বিশাল একটি জনসভা করে অনুগামীদের সঙ্গে নিয়ে তারপর মনোনয়ন কেন্দ্রে যান, তাই সেই বিষয়টাকে বন্ধ করার জন্যই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও সমস্ত জনসমাগম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন।

পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের সমস্ত ধরনের নিয়ম মেনে চলা হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে ৯০০ জন পর্যবেক্ষক গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তীতে আরও বিশেষ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা এবং অন্যান্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এছাড়াও নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এবারের নির্বাচনে কোনো রকম রোড শো, পদযাত্রা, কিংবা বাইক মিছিল করা যাবে না ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। আপাতত এই নির্দেশ চালু থাকবে। তবে ১৫ জানুয়ারির পরে পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। রাত ৮টা থেকে পরের দিন সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রচার এর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। পরে কোন সভার অনুমতি দেওয়া হলে রাজনৈতিক দলগুলিকে অবশ্যই মাস্ক এবং স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এছাড়াও দরজায় দরজায় গিয়ে প্রচারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ জনকে নিয়ে যাওয়া যাবে বলে জানানো হয়েছে। যদি, কোন প্রার্থী জাতীয় নির্বাচন কমিশনের লাগু করা এই বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থা ভাঙেন তাহলে বিপর্যয় মোকাবিলা আইন অনুযায়ী তাদের উপরে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুশীল চন্দ্র। তিনি বললেন, করোনাভাইরাস আবহে সমস্ত ভোট কর্মীদের করোনাভাইরাস যোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও ভোট কর্মীদের করোনাভাইরাস এর টিকার তৃতীয় ডোজ অর্থাৎ প্রিকশনারি ডোজ দেওয়া হবে। পাশাপাশি, এই ৫ রাজ্যে সাধারণ মানুষের টিকার গতি বৃদ্ধি করার ঘোষণা করেছেন তিনি। এছাড়াও এই ৫ রাজ্যে জেলা স্তরে স্বাস্থ্য নোডাল অফিসার মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নির্বাচন কমিশনার সুশীল চন্দ্র।