ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেটে মোদির ছবি কেন? রাজ্যসভায় আজ উত্তর দিল কেন্দ্র
কেন্দ্র জানিয়েছে অক্সিজেনের অভাবে করোনার সময় মৃত্যু হয়েছে মাত্র "এক" জনের
গত বছরের মার্চ মাস থেকে করোনা (Corona) সংক্রমণ অতিষ্ঠ করে তুলেছে গোটা দেশবাসীর জীবনযাত্রা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য প্রায় গৃহবন্দী সকল মানুষ। তবে চলতি বছরের শুরুর দিক থেকে গোটা দেশজুড়ে চলছে ভ্যাকসিনেশন পর্ব (Vaccination Campaign)। টিকার ডোজ নিলেই প্রমানপত্র হিসেবে মিলছে টিকাকরণ সার্টিফিকেট। সেই সার্টিফিকেটের নিচের দিকে জায়গা পেয়েছে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) একটি ছবি এবং বার্তা। তবে প্রথম থেকেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে যে টিকাকরণ সার্টিফিকেটের নিচে প্রধানমন্ত্রীর ছবি কেন থাকবে? বারংবার এই ইস্যুতে উত্তাল হয়েছে রাজ্যসভা। অবশেষে আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার সেই প্রশ্নের উত্তর দিল কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ভারতী প্রবীণ পাওয়ার জানিয়েছেন, "টিকাকরণ সার্টিফিকেটে প্রধানমন্ত্রীর ছবি ও বার্তা দেওয়া হয়, সচেতনতার বার্তাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য। বৃহত্তর জনস্বার্থে টিকাকরণের পরেও কোভিড প্রোটোকল মেনে চলা খুবই জরুরী। এই বার্তা প্রত্যেক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেই প্রধানমন্ত্রীর ছবি এবং ওই লেখা ব্যবহার করা হয়।"
এছাড়াও সরকারের পক্ষে জানানো হয়েছে যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO এর গাইডলাইন অনুযায়ী কোউইন অ্যাপে সার্টিফিকেটের ফরম্যাট তৈরি করা হয়েছে। এরপর বিরোধীরা এই বিষয়ে কি বলেন, সেটাই দেখার। অন্যদিকে, কিছুদিন আগেই কেন্দ্রের তরফে দাবি করা হয়েছিল যে অক্সিজেন ঘাটতির জন্য করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে খুব একটা বেশি মৃত্যু হয়নি। এই পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রের তরফে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যাতে তারা অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর পরিসংখ্যান জানায়। তবে সকলকে চমকে দিয়ে অধিকাংশ রাজ্য কেন্দ্রের সুরেই সুর মিলিয়ে জানিয়েছে, "অক্সিজেনের অভাবে তাদের রাজ্যে কোনও কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়নি।"
আসলে করোনা দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর বিরোধী দলগুলি কেন্দ্র সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছিল অক্সিজেন অভাব প্রসঙ্গ নিয়ে। সেইজন্য কত জনের মৃত্যু হয়েছে এই হিসাব চেয়ে পাঠানো হয়েছিল রাজ্যগুলির মুখ্যসচিবের কাছে। তাদের উত্তরের ভিত্তিতে আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্ম-সচিব বলেছেন, "অক্সিজেন সংক্রান্ত বিষয়ে মৃত্যু হয়েছে কিনা তা রাজ্যগুলির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। এখনও অব্দি আমরা যা রিপোর্ট পেয়েছি সেখানে একটি রাজ্য মাত্র একজন রোগীর অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছে। বাকি রাজ্যে অক্সিজেনের অভাবে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।" তবে এখানে প্রশ্ন উঠছে যে এপ্রিল মাসে দেশের রাজধানী দিল্লিতে অক্সিজেনের অভাবে মানুষের হাহাকার তাহলে কি মিথ্যা ছিল? অক্সিজেনের অভাবে ক্যামেরার সামনে মৃত্যু কি ছলনা ছিল?
কেন্দ্রের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে ১৩ টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত প্রদেশগুলি। তারা হল ওড়িশা, উত্তরাখণ্ড, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর, অসম, লাদাখ, সিকিম, ত্রিপুরা, ঝাড়খন্ড, হিমাচল প্রদেশ, অন্ধপ্রদেশ এবং পাঞ্জাব। শুধুমাত্র পাঞ্জাব জানিয়েছে যে তাদের রাজ্যে একজনের অক্সিজেনের অভাবে "সম্ভবত" মৃত্যু হয়েছে। এখনও অব্দি কেন্দ্রের প্রশ্নের জবাব দেয়নি পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি, মহারাষ্ট্র ইত্যাদি রাজ্যগুলি। তাদের উত্তরের পর এই পরিসংখ্যান যে ব্যাপক পরিমাণে পরিবর্তিত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।