বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি কিনলেই অতিরিক্ত সুবিধা দিচ্ছে ভারত সরকার, জানেন কি সেই সুবিধা?
ভারত সরকারের তরফ থেকে বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির জন্য একটি আলাদা সেকশন নিয়ে আসা হয়েছে আয়কর আইনের মধ্যে, এবং সেখানেই করা হয়েছে বেশকিছু নতুন পরিবর্তন
বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি বর্তমানে পেট্রোল এবং ডিজেলের চালিত গাড়ির একটি বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বহু মানুষের কাছে। অনেকেই এখন প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত গাড়ির পরিবর্তে বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির দিকে বেশি ঝুঁকতে শুরু করেছেন। এই বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি একাধারে পরিবেশবান্ধব হওয়ার পাশাপাশি অনেকটা সাশ্রয়ীও বটে। তার সাথেই, বর্তমানে ক্রমবর্ধমান গতিতে বৃদ্ধি পেতে থাকা পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম কার্যত বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির প্রচলনের ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করছে।
বর্তমানে ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের কাছে বিদ্যুৎ চালিত পরিবহন শুধুমাত্র যে খরচ কমায়, সেটুকু না, এই ধরনের গাড়ির বেশ কিছু আর্থিক সুবিধাও রয়েছে। বর্তমানে ভারতের আয়কর আইন অনুযায়ী নিজের ব্যবহারের জন্য ক্রয় করা গাড়ি একটি স্ট্যাটাস সিম্বল বা বিলাসবহুল একটি জিনিস হিসেবে চিহ্নিত হয়। তাই গাড়ির জন্য যদি কোন ঋণ গ্রহণ করা হয় সে ক্ষেত্রে কোনরকম আয়করে সুবিধা পাওয়া যায় না। কিন্তু অন্য দিকে দেখতে গেলে, যারা বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি ক্রয় করেন অথবা তার জন্য ঋণ গ্রহণ করেন তাদের ক্ষেত্রে আয়কর আইন অনুযায়ী কিছুটা সুবিধা থাকে। বর্তমানে আয়কর আইনের ৮০ইইবি ধারায় বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি সংযুক্ত হয়েছে। যারা বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি কেনার জন্য কোন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ করেন তারা ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করের সুবিধা গ্রহন করতে পারবেন। ওই বিশেষ বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির মর্টগেজ ব্যালেন্সের উপরে এই সুবিধা আপনি পাবেন।
বর্তমানে ভারতের বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির বাজারে একাধিক বিকল্প আপনি দেখতে পাবেন। বিক্রি বৃদ্ধি হতে শুরু করার কারণে, বহু নামিদামি প্রথম সারির অটোমোবাইল কোম্পানিগুলিও বর্তমানে বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির দিকে নজর দিতে শুরু করেছেন। সময় যত বাড়ছে, ততোই ভারতের বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির মডেলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর যদি কোনো ক্রেতা বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি কিনে থাকার পরিকল্পনা করেন তাহলে তারাই পেয়ে যাবেন অতিরিক্ত আয়কর বেনিফিট। চার চাকার গাড়ি অথবা দু'চাকার মোটরসাইকেল, সব ক্ষেত্রেই এই আয়কর বেনিফিট কাজ করবে। কেবলমাত্র একবার প্রতি আইকর দাতা এই আয়কর বেনিফিট গ্রহণ করতে পারবেন। অর্থাৎ সোজা কথায়, আজ অব্দি যাদের কাছে কোন বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি ছিল না, তারাই কেবলমাত্র কোন নতুন বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি কিনলে এই আয়করের সুবিধা পাবেন।
তদুপরি, যদি কোনো ক্রেতা ব্যাংকিং অথবা নন-ব্যাংকিং আর্থিক সংস্থা থেকে এই বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির ফাইন্যান্সিং করিয়ে থাকেন, তাহলেই শুধুমাত্র এই বেনিফিট কাজ করবে। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে এই আয়কর বেনিফিট পাওয়া যাবে না। শুধুমাত্র যদি একক কোন ব্যক্তি একটি বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি ক্রয় করতে চান তাহলেই, এই বেনিফিট মিলবে। এপ্রিল ১, ২০১৯ থেকে মার্চ ৩১, ২০২৩ এর মধ্যে যদি কোন বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির ফাইন্যান্সিং করানো হয়, তাহলে শুধুমাত্র এই আয়কর বেনিফিট পাওয়া যাবে। ২০২০-২১ অর্থ বর্ষ থেকে আয়করের নতুন সেকশনে অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে এই বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি আইনের। তার পাশাপাশি, যদি আপনি বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি কেনেন তাহলে আয়কর বেনিফিট ছাড়াও, জিএসটির দিক থেকেও আপনাকে বেশ খানিকটা সুবিধা দেবে ভারত সরকার। বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির উপরে জিএসটির পরিমাণ মাত্র ৫ শতাংশ, যেখানে অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত গাড়ির উপরে জিএসটির পরিমাণ ৫ শতাংশের থেকে বেশি হয়। তাই, যদি আপনি জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত গাড়ির পরিবর্তে বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি ক্রয় করেন তাহলে পরিবেশের লোকসান তো কম হচ্ছেই, তার সঙ্গেই আপনার উপার্জিত টাকারও হচ্ছে ভারী সাশ্রয়।