রাজ্যের আন্তর্জাতিক সীমান্তে বাড়বে সুরক্ষা, রাজ্যের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের

নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত: 13/11/2021   শেষ আপডেট: 13/11/2021 8:07 a.m.
aljazeera

পশ্চিমবঙ্গের আন্তর্জাতিক সীমান্তে সুরক্ষা বৃদ্ধি করার জন্য পশ্চিমবঙ্গের উচ্চ পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে গেলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা

ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশ-নেপাল এবং ভুটান এই তিনটি দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত সংযুক্ত রয়েছে। পাশাপাশি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যাওয়ার জন্য একমাত্র গেটওয়ে হিসেবে ধরা যেতে পারে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর অংশকে। তাই ভারতের অর্থনৈতিক উন্নতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এই রাজ্যের সুরক্ষায় এবারে বাড়তি জোর দিতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় তরফ থেকে পশ্চিমবঙ্গের তিনটি আন্তর্জাতিক সীমান্তে সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার প্রচেষ্টা চলছে। জানা যাচ্ছে বাণিজ্যে গতি আনতে এবং আন্তর্জাতিক সুরক্ষা বৃদ্ধি করার জন্য সীমান্ত বরাবর কয়েকশো কিলোমিটার বরাবর কাঁটাতারের বেড়া তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

তার পাশাপাশি সাতটি নয়া ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট তৈরি এবং সে সমস্ত চেকপোষ্টে অত্যাধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য যৌথভাবে কাজ করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার। জানা যাচ্ছে ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের উচ্চ পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা। রাজ্যের মুখ্যসচিব হরি কৃষ্ণ দ্বিবেদী, এবং স্বরাষ্ট্রসচিব বি গোপালিকা সহ আরো অনেক প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে। সেই বৈঠকে রাজ্যের সীমান্ত বরাবর সাতটি নতুন ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট তৈরি এবং কাঁটাতারের বেড়া তোলা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে।

সূত্রের খবর, ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট তৈরি করার জন্য ইতিমধ্যেই রাজ্য এবং কেন্দ্রের মধ্যে কথা এগিয়েছে। ল্যান্ড পোর্ট অথরিটি জমি চিহ্নিত করার পরে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে এই চেকপোস্ট তৈরির কাজ শুরু করে দেওয়া হবে। তবে জানা যাচ্ছে রাজ্য সরকারের সহযোগিতা নিয়েই এই কাজটি করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব এই বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের মুখ্য সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন। এছাড়াও সীমান্তে অবস্থিত স্থলবন্দর বা ল্যান্ড পোর্ট গুলির আধুনিকীকরণ নিয়ে তাদের মধ্যে কথাবার্তা হয়েছে বলে খবর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, ভারত-নেপাল সীমান্তে অবস্থিত পানিট্যাঙ্কি, ভারত এবং ভুটান সীমান্তে অবস্থিত জয়গাঁও এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত পেট্রাপোল বন্দরের দ্রুত আধুনিকীকরণ করা হবে। এছাড়াও বিমানবন্দর সমুদ্রবন্দরের মতোই বিভিন্ন স্থলবন্দর তৈরি করা হবে, যাতে খুব সহজেই পশ্চিমবঙ্গ হয়ে দেশের অন্যান্য প্রান্তে চলে যাওয়া যায়। পাশাপাশি, রাজ্যে সুরক্ষার সুনিশ্চিত করতে অতিরিক্ত বিএসএফ নজরদারির জন্য আউটপোস্ট তৈরি করার জমি চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে খবর।

জেলা আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার একসাথে পশ্চিমবঙ্গের সুরক্ষার বিষয়টির খেয়াল রাখবে বলে জানা যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের একটা বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে  অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের সীমানা রয়েছে। তাই ভারতের সুরক্ষার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি রাজ্য। তাই পশ্চিমবঙ্গের সুরক্ষা যাতে সবথেকে ভালো ভাবে করা যায় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সীমান্তে অনুপ্রবেশ কিংবা সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে চোরাচালান কমানোর জন্যও কাজ করতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্য সরকারের তরফ থেকেও রাজ্যের সুরক্ষার দাবি জানানো হয়েছে এবং সীমান্তে বাড়তি নজরদারি ও সতর্কতার দাবি জানানো হয়েছে। সূত্রের খবর, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী কিছুদিনের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের আশেপাশে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হবে, যার পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের সুরক্ষায় একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।