আকস্মিক বিস্ফোরণ বেরুটে, চিন্তায় চেন্নাই

পৃথ্বীশ ব্যানার্জী
প্রকাশিত: 08/08/2020   শেষ আপডেট: 08/08/2020 2:51 a.m.
By Mehr News Agency, CC BY 4.0, https://commons.wikimedia.org/w/index.php?curid=92996957

৭৪০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুত চেন্নাই বন্দর এ, কাছাকাছি বাস করেন প্রায় ১২,০০০ মানুষ

গত মঙ্গলবার বিকেলে হঠাৎই জোড়া বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে লেবাননের রাজধানী বেরুট। সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে বেরুটের নৌবন্দর এলাকায় একটি বিস্ফোরক দ্রব্য সংরক্ষিত করার গুদামে ২৭৫০ টনের মতো আমোনিয়াম নাইট্রেট প্রায় ছয় বছর ধরে মজুত করে রাখা ছিল। গত মঙ্গলবার দিন হঠাৎ সেই গুদামে বিস্ফোরণ ঘটায় গোটা লেবানন সহ আশপাশের এলাকা কেঁপে ওঠে এবং কার্যত ধ্বংস হয়ে যায় লেবানন শহরের একাংশ। স্থানীয় সূত্রে খবর ২০১৩ সালে একটি জাহাজ থেকে ২৭৫০ টন আমোনিয়াম নাইট্রেট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। সেই আমোনিয়াম নাইট্রেট বন্দরের একটি ওয়্যার হাউসে মজুত করে রাখা ছিল, যেখান থেকে মঙ্গলবার এই ভয়াবহ বিস্ফোরণটি ঘটে। এই বিস্ফোরণ স্থলের মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ভবন। বাংলাদেশ দূতাবাসের এক আধিকারিক ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, হটাৎ ভুমিকম্পের মতো সারা শহরটা কেঁপে ওঠে। নিমেষের মধ্যে শহরের ছবিটা পাল্টে যায়। তিনি আরো জানান এই বিস্ফোরণের সময় নোঙর করে রাখা রাষ্ট্রপুঞ্জ শান্তি রক্ষা কার্যক্রম বা UNIFIL মেরিটাইম টাস্ক ফোর্সের অধীনে লেবাননে নিয়োজিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ 'বিএনএস বিজয়' যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৩ নৌসেনা অফিসারের মৃত্যুও ঘটেছে ও আহত হয়েছেন ২১ জন। এছাড়াও এই বিস্ফোরণে বেরুটের বহু মানুষ আহত হয়েছেন। তবে আহত ব্যক্তি ও তাদের পরিজনদের দাবি তারা চিকিৎসা পরিসেবা ঠিক ভাবে পাচ্ছেন না। বিস্ফোরণের ফলে মৃত্যুও হয়েছে শতাধিক মানুষের। এই মৃতের সংখ্যাটা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে লেবানন সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বেরুটে এই ভয়াবহ ঘটনারপর আতঙ্ক বাড়তে শুরু করেছে ভারতের চেন্নাইয়েও। আতসবাজি ও সার শিল্পে আমোনিয়াম নাইট্রেট ব্যবহার হয়ে থাকে। শিবকাশীর আতসবাজির একাধিক কারখানা থাকায় আমোনিয়াম নাইট্রেটের যথেষ্ট চাহিদাও রয়েছে। তবে ২০১৫ থেকে ৩৭টি কন্টেনারে ৭৪০টন আমোনিয়াম নাইট্রেট মজুত করে রাখা রয়েছে চেন্নাই বন্দরের কাছেই এক বিস্ফোরক দ্রব্য সংরক্ষিত করার গুদামে। সূত্র মারফৎ জানা গেছে ২০১৫ সালের ২৭ শে সেপ্টেম্বর তামিলনাড়ু কারুর থেকে 'আমন কেমিকেলস' নামক সংস্থাটি দক্ষিণ কোরিয়ায় ৭৪০ টন আমোনিয়াম নাইট্রেট রপ্তানি করার সময়, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে না পারার কারণে শুল্ক দপ্তর সেগুলি বাজেয়াপ্ত করে। বেরুটের ঘটনার পর বিভিন্ন মহল নড়ে চড়ে বসলে, শুল্ক আধিকারিক টি. সমায়া মুরালি জানান আমোনিয়াম নাইট্রেটের কন্টেনারগুলি মূল শহরের থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সুরক্ষিত জায়গায় মজুত আছে। যে এলাকার দু' কিলোমিটারের মধ্যে কোনো জনবসতি নেই। তিনি আরো জানান মাদ্রাজ কোর্টের নির্দেশ মতো কন্টেনারগুলি নিলামের প্রক্রিয়াও সম্পূর্ণ হয়েছে কিছু দিনের মধ্যে তা নিষ্ক্রিয় করার কাজও শুরু করা হবে। দু' কিলোমিটারের মধ্যে কোনো জনবসতি নেই এই তথ্য মেনে নিতে নারাজ তামিলনাড়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। তারা এই ঘটনা সামনে আসার পর সমীক্ষা করে যে রিপোর্ট পেশ করেছে তাতে তারা দাবি করেছে, যেখানে আমোনিয়াম নাইট্রেটের কন্টেনারগুলি মজুত করা আছে তার ৭০০ মিটার উত্তরে মানালি নিউ টাউন এলাকা ও ১৫০০ মিটার পূর্বে সদায়নকুপম নামের একটি গ্রাম আছে। সেই দুটি জনবসতি এলাকার সর্বমোট জন সংখ্যা ১২,০০০ এর মতো।

পরিবেশবিদ জি. সুন্দারাজন বলেন এক জায়গায় বহু দিন ধরে এত পরিমান আমোনিয়াম নাইট্রেট মজুত করে রাখা মোটেই সুরক্ষিত নয়। বরং তা অল্প অল্প পরিমাণে ভাগ করে একাধিক জায়গায় মজুত করে রাখাই উচিত। এই ব্যাপারে পিএমকে দলের প্রধান অম্বুমণি রামাডস টুইট করে বলেন "বড়ো ধরণের বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েই যায়। এই ঘটনা যাতে না হয়, সে কারণে অবিলম্বে এই বিস্ফোরকে অন্য কাজে লাগানো উচিত।"