বেশ কিছুদিন ধরেই বিরাট কোহলি এবং ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে একেবারে জোরদার। ভারতীয় ক্রিকেটের এক দিবসীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে বিরাট কোহলিকে ছেঁটে ফেলার পর থেকেই সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছে বিরাট কোহলি এবং ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই এর মধ্যে এই সমস্যাটি। তবে তার থেকেও এবারে বড় মাত্রায় সামনে চলে এলো বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং ভারতীয় এক দিবসীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলির মধ্যে বাদানুবাদ।
আজ একটি প্রেস কনফারেন্সে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এর একেবারে বিপরীত মন্তব্য করে রীতিমতো বোমা ফাটালেন ভারতীয় এক দিবসীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তার সঙ্গেই তিনি জানিয়ে দিলেন, বর্তমান অধিনায়ক রোহিত শর্মার সঙ্গে খেলার ক্ষেত্রে তার কোনো রকম সমস্যা নেই। এছাড়াও তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, রোহিত শর্মার সাথে তার কোনো রকম ব্যক্তিগত সমস্যা নেই, তাই দক্ষিণ আফ্রিকা সফর তো আছেই ভবিষ্যতে রোহিত শর্মার অধিনায়কত্ব খেলতে বিরাট কোহলির কোন সমস্যা হবে না। কিন্তু, সব ঠিক থাকলেও বিরাট কোহলির একটি মন্তব্যে রীতিমত ঝড় উঠেছে নেট পাড়ায়। ভারতীয় ক্রিকেটের বিভাজনকে কার্যত স্পষ্ট করে দিল এই মন্তব্য।
আজকের প্রেস কনফারেন্সে বিরাট কোহলি বললেন, "টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে আমি যখন আমার ইস্তফা দিতে যাই তখন তা সাদরে গ্রহণ করেন বোর্ড কর্তারা। আমার সঙ্গে অধিনায়কত্ব না ছাড়ার জন্য কোন কথাই হয়নি বোর্ড কর্তাদের। আমাকে বলা হয়, এটা একটা প্রগতিশীল পদক্ষেপ। আমি নিজে জানিয়েছিলাম, আমি একদিনের ক্রিকেট এবং টেস্ট দলকে নেতৃত্ব দিতে পারি, যদি বোর্ড কর্তাদের কোন অসুবিধা না থাকে। আমার সঙ্গে বোর্ড কর্তাদের কথাবার্তা একেবারে পরিষ্কার ছিল। আমি তাদেরকে দুটি অপশন দিয়েছিলাম, সিদ্ধান্ত তাদের হাতে ছিল। আমি জানিয়ে দিয়েছিলাম, নির্বাচকরা যদি মনে করেন তাহলে আমাকে অন্য ফরম্যটে গ্রহণ করতে পারেন।"
কিন্তু এখানেই শুরু হয়ে যায় সমস্যা। দিন কয়েক আগে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, "টি-টোয়েন্টি ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচে অধিনায়কত্ব না ছাড়ার জন্য বোর্ড কর্তারা অনুরোধ জানিয়েছিল বিরাট কোহলি কে। তার পরেও যখন বিরাট কোহলি নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে, তখন আমরা তার পদত্যাগ গ্রহণ করি। যদিও পরবর্তীতে তারা বলে ক্রিকেটে দুই অধিনায়ক না থাকার পক্ষে মত গৃহীত হয়। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় টেস্ট দলের অধিনায়ক থাকবেন বিরাট কোহলি। অন্যদিকে সাদা বলে ক্রিকেটে ভারতের অধিনায়কত্ব করবেন রোহিত শর্মা। বিসিসিআই সভাপতি হিসেবে আমি নিজে বিরাট কোহলির সঙ্গে কথা বলেছি। নির্বাচক প্রধান তার সঙ্গে কথা বলেছেন।'
যদিও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার কোনো কথা হয়েছিল কিনা সে বিষয়ে বুধবার কোন কিছু বলতে চাননি বিরাট কোহলি। তবে যেভাবে একদিনের ক্রিকেট থেকে বিরাট কোহলি কে সরিয়ে দেওয়া হলো, তার পদ্ধতি অত্যন্ত খারাপ ছিল বলেই জানিয়েছেন বিরাট কোহলি। বিরাট কোহলি বললেন, 'ভারতীয় টেস্ট দলে নির্বাচনের জন্য আমার সঙ্গে মাত্র দেড় ঘন্টা আগে যোগাযোগ করা হলো। আমার সঙ্গে কোন নির্বাচকের কোনো কথাবার্তা হয় নি। প্রধান নির্বাচক (টেস্ট দলের) আমার সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করলেন। ফোন রাখার আগে পাঁচজন নির্বাচক জানান যে আমি একদিনের ক্রিকেটে আর অধিনায়ক থাকতে পারবোনা। আমি ঠিক আছে বলে ফোন রাখি।' এখন এখানেই প্রশ্ন উঠছে, সত্যি কথা আসলে কে বলছেন? সত্যিটা কি বিরাট বলছেন, নাকি সত্যি বলছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়? এই নিয়েই বর্তমানে সরগরম হয়ে উঠেছে নেট দুনিয়া। অনেক বিরাট ভক্ত আবার খোদ বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পদত্যাগ পর্যন্ত দাবি করেছেন। বোর্ডের তরফ থেকে সরাসরি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সম্পূর্ণরূপে সত্যি কথা বলছেন না বিরাট কোহলি। যদিও সেই বিষয়টি নিয়ে এখনো পর্যন্ত খোলসা করে কেউ কথা বলতে চাইছেন না। আদৌ কি কেউ সত্যি কথা নাকি মিথ্যা কথা স্বীকার করবেন? নাকি ভারতীয় ক্রিকেটের আরো একটি কলঙ্কময় অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত থাকবে বিরাট কোহলি এবং বিসিসিআইয়ের দ্বন্দ্ব? উত্তরটা দেবে সময়।