একদিকে তখন সিন্ধু ঘায়েল করতে ব্যস্ত তাঁর চৈনিক প্রতিদ্বন্ধি বিংজিয়াওকে, ভারতীয় পুরুষ হকি টিম তখন নেমে পরেছেন তাঁদের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে। প্রতিপক্ষ্য গ্রেট ব্রিটেন। সামনে ৬০ মিনিট। পিছনে ৪১ বছরের ব্যর্থতার ইতিহাস। শেষবার ১৯৮০-সালে ভারতীয় হকি দল উঠেছিল অলিম্পিকের সেমিফাইনালে। সেই শেষ। তারপর প্রতি চার বছর অন্তর অলিম্পিক আসে। হকির দল আশায় বুক বাধে আর ঘরে ফেরে একরাশ নিরাশাকে সঙ্গী করে। তার উপর এবছর আবার শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭-১ এর ধাক্কা খেয়েছে ভারত। কিন্তু সে সব চিন্তা, গ্লানিকে কার্যত ধুয়ে দিল আজ মনপ্রীত অ্যান্ড কোম্পানি। আর ৪১ বছরের ফাঁড়া কাটিয়ে ফের একবার ভারত সেমিফাইনালের দোরগোড়ায়।
টস জিতে ম্যাচ শুরু করে গ্রেট ব্রিটেন। প্রথমে নিজেদের পসেশনও ধরে রেখেছিল ব্রিটেন। কিন্তু ঝোপ বুঝেই কোপ মারে ভারতীয় দল। প্রথম কোয়ার্টারেই গোল করে ভারতকে ১-০-এ আগিয়ে দেন দিলপ্রীত সিং। সেকেন্ড কোয়ার্টারে আরও একটি গোল করে ব্যাবধান ২-০ করেন গুর্জান্ত সিং। চাপ বাড়তে থাকে গ্রেট ব্রিটেনের খেলোয়াড়দের উপর। কিন্তু হাফ টাইমের পর তৃতীয় কোয়ার্টার শুরু হলে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ভারতের বিরুদ্ধে ঝাঁপায় ব্রিটেনের প্লেয়াররা। তৃতীয় কোয়ার্টারেই একসাথে পরপর তিনটি পেনাল্টি কর্নার পায় গ্রেট ব্রিটেন। প্রথম দুটি পেনাল্টি সুমিতের দক্ষতায় মিস করলেও তৃতীয় পেনাল্টিতে গোল পায় ব্রিটেন। তাঁদের হয়ে গোল করেন স্যাম ওয়ার্ড। চতুর্থ কোয়ার্টার শুরু হলে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলা শুরু করে ভারত। খেলা শেষ হওয়ার মিনিট পাঁচেক আগেই অসামান্য দক্ষতায় ভারতের হয়ে তৃতীয় গোলটি করেন হার্দিক সিং। এই গোলের মাধ্যমেই গ্রেট ব্রিটেনের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দেয় ‘মেন ইন ব্লুজ’। এদিন বাকি সব খেলোয়াড়দের থেকে খানিকটা বেশি প্রসংশার দাবী রাখেন ভারতীয় গোলকিপার রাভিন্দ্রান। তিনি আজ একা কুম্ভের মতো সামাল দিয়েছিলেন ভারতীয় গোলপোস্টকে। তবে আজকে সমগ্র ম্যাচ জুড়েই ছিল যাচ্ছেতাই রেফারিং-এর নিদর্শন। অলিম্পিকের মতো বড় প্লাটফর্মে এরম রেফারিং যথেষ্ট প্রশ্নচিন্হ তুলে দেয়। তবুও ভারতের এই দুরন্ত জয় একাই সমস্ত প্রশ্নকে ভুলিয়ে দিতে সক্ষম।
ব্রিটেন বধের পর সেমিফাইনালে ওঠার উচ্ছ্বাস ছিল ভারতীয় খেলোয়াড় থেকে শুরু করে কোচের চোখেমুখে। আনন্দাশ্রুতে তাঁরা একে অপরকে আলিঙ্গন করেন ম্যাচের শেষে। সোশ্যাল মিডিয়াতে তাঁদের অভিনন্দন জানান রাজনীতিবিদ থেকে ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা। পরের ম্যাচে প্রতিপক্ষ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বেলজিয়াম। তাঁদের হারিয়ে ফাইনালে ওঠাই এখন মুল লক্ষ থাকবে মনপ্রীত, রুপিন্দ্রার, রাভিন্দ্রান-দের। অলিম্পিকে ৮ বার সোনা জয়ীদের কি নবম বারের জন্যও স্বর্ণপদক প্রাপ্তি হবে? তা সময়ই বলবে!