চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত এবং পাকিস্তান (Ind VS Pak) এবারে দ্বিতীয়বার মুখোমুখি হতে চলেছে এশিয়া কাপ ২০২২- এ। লীগ স্টেজের ম্যাচে রোহিত শর্মার ভারত পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দিলেও, এখন দুটি দলেরই অবস্থান পাল্টেছে। চোটের কারণে এশিয়া কাপ (Asia Cup) থেকে ছিটকে গিয়েছেন ভারতের তারকা অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা। একই সঙ্গে পাকিস্তানের উঠতি ফাস্ট বোলার শাহনাওয়াজ দাহানিও ভারতের বিরুদ্ধে এই ম্যাচ খেলবেন না। এছাড়াও ভারতের প্রধান কোচ রাহুল দ্রাবিড় জানিয়ে দিয়েছেন, ভারতীয় ফাস্ট বোলার আবেশ খানও এই মুহূর্তে পুরোপুরি ফিট নন। তাই হয়তো তিনিও এই ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নামবে না। এমতাবস্থায় দুই দলের প্লেইং ১১-য় পরিবর্তন আসাটা অবশ্যম্ভাবী।
ওপেনিং-এ বাবর এবং রিজওয়ান
ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে বাবর আজম খুব একটা ভালো পারফরম্যান্স না করতে পারলেও বাবর এবং রিজওয়ানের ওপেনিং জুটি পাকিস্তানের জন্য বিগত ২ বছর ধরে হয়ে থেকেছে একটা এক্স ফ্যাক্টর। বিগত ২৪ মাসে এই দু'জন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পাকিস্তানের হয়ে এক হাজারের উপর রান করেছেন। বাবর খুব একটা ফর্মে না থাকলেও, রিজওয়ান হংকং এর বিরুদ্ধেও একটা দারুন ইনিংস খেলে সকলকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি এখনো ফর্মে রয়েছেন। ভারতের ওপেনিং জুটির দুজনের গড়ই এই মুহূর্তে পঞ্চাশের উপরে রয়েছে। অন্যদিকে, ওপেনিং জুটি ভারতীয় দলের জন্য সব সময় হয়ে থেকেছে একটি সমস্যার কারণ। একটা সময় শিখর ধাওয়ান এবং রোহিত শর্মার জুটি ভারতের সবথেকে ভালো ওপেনিং পার্টনারশিপ হলেও, শিখর ধাওয়ান ভারতীয় এ টিম থেকে ছিটকে যাওয়ার পর, ওপেনিং জুটি খুঁজতে সমস্যা হয়েছে ভারতের। কে এল রাহুলের বারবার চোটের কারণে টিম ইন্ডিয়া ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে ঈশান কিষান, ঋষপ পন্থ, সূর্যকুমার যাদবের মতো খেলোয়াড়দের নিয়ে চেষ্টা করেছে। তবে এখনো পর্যন্ত ভারতীয় দলের প্রথম পছন্দ কে এল রাহুল এবং রোহিত শর্মা। তবে শেষ দুই ইনিংসে খুবই হতাশাজনক পারফর্মেন্স ছিল এই দুই খেলোয়াড়ের। ফলে, ওপেনিং পার্টনারশিপ যে ভারতের জন্য একটা বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
মিডিল অর্ডারে পাকিস্তানের থেকে দুই ধাপ এগিয়ে ভারত
ভারতের মিডল অর্ডারে এই মুহূর্তে ভালো ফর্মে রয়েছেন বিরাট কোহলি। শেষ দুই ইনিংসে ৩৫ এবং অপরাজিত ৫৯ রানের ইনিংস খেলে আবারো ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন কিং কোহলি। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রায় সময়ই তার ব্যাট চলে। ২০১২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা তার ১৮৩ রানের ইনিংস কোন ক্রিকেটপ্রেমী ভুলতে পারবেন না। একইসঙ্গে চার নম্বরে থাকা সূর্য কুমার যাদব বর্তমানে বিশ্বের অত্যন্ত বিপজ্জনক একজন খেলোয়াড়। মাঠের প্রত্যেকটি দিকে শট মারতে তিনি সক্ষম।
অন্যদিকে তিন নম্বরে পাকিস্তানের হয়ে খেলতে নামেন ফখর জামান। তিনি ফর্মে থাকলেও অনেক সময়ই এমন হয় তার ব্যাট চলে না। তা সত্ত্বেও তিনি পাকিস্তানের তৃতীয় সব থেকে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান। এরপরে রয়েছেন ইফতেখার আহমেদ এবং খুশদিল শাহ। এনাদের বড় ফোরামে খেলার খুব একটা বিশেষ অভিজ্ঞতা নেই। তাই পাকিস্তানের মিডিল অর্ডার এখনো পর্যন্ত রয়েছে তাদের জন্য সমস্যার কারণ।
ফিনিশার হিসেবে হার্দিক এবং কার্তিক
আজকের ম্যাচে রবীন্দ্র জাদেজার অনুপস্থিতিটা অনুভব করতে পারে ভারত। গত ম্যাচে যখন পাকিস্তানের বোলাররা যখন অনেকটাই ভারতের ব্যাটসম্যানদের উপরে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছিল, সেই সময় নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ভারতের ইনিংসকে সামলে ছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। নিজে ম্যাচ ফিনিশ না করতে পারলেও, ভারতকে একটা ভালো জায়গায় এনে স্থাপিত করেছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। তারপরে বাকি কাজটা করেছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। তবে আজকের ম্যাচে রবীন্দ্র জাদেজা নেই। এই কারণে একটু বেশি দায়িত্ব আসতে পারে হার্দিক পান্ডিয়া এবং তারপরে খেলতে নামা দীনেশ কার্তিকের কাঁধে। হার্দিক পান্ডিয়া এই মুহূর্তে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন। অন্যদিকে দীনেশও রয়েছে মোটামুটি ভালো ফর্মে। তাই, অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে তারা ভারতের ফিনিশিং লাইনআপটাকে ভালো ভাবেই সামলাতে পারবেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অন্যদিকে পাকিস্তানের হয়ে ফিনিশারের ভূমিকা পালন করে থাকেন আসিফ আলী। ভারতের বিরুদ্ধে তার পারফরমেন্সের রেকর্ড খুব একটা ভালো ছিল না কখনোই। ফিনিশার হলেও তার পারফমেন্স সবসময় গড়পরতা থাকে। তাই ফিনিশারের দিক থেকেও পাকিস্তান রয়েছে কিছুটা পিছিয়ে।
স্পিন বোলিংয়ে মোহাম্মদ নওয়াজ এবং শাদাব খান
স্পিন বোলিং এর দিক থেকে ভারত কিছুটা হলেও কিন্তু পিছিয়ে রয়েছে পাকিস্তানের থেকে। পাকিস্তানের বিপজ্জনক লেগ স্পিনার শাদাব খান একজন বড় ম্যাচ উইনার। ভারতের বিরুদ্ধে মাত্র ১৯ রান দিয়েছিলেন তিনি এবং হংকং এর বিরুদ্ধে ৪টি উইকেট নিয়ে খেলা সম্পূর্ণ মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন শাদাব। অন্যদিকে, দুই ম্যাচে এখনো পর্যন্ত নয় উইকেট সংগ্রহ করেছেন নওয়াজ। তবে বোলিং এর পাশাপাশি দুই খেলোয়াড় ব্যাটিং করতেও পারদর্শী।
তবে স্পিন বোলিং এর দিক থেকে ভারত পাকিস্তানের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে। জাদেজা ছিটকে যাওয়ার কারণে তার স্থান গ্রহণ করতে চলেছেন ভারতীয় স্পিনার অক্ষর প্যাটেল। একইসঙ্গে দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে রয়েছেন যুজবেন্দ্র চাহাল। স্পিন বোলিং ভালো করলেও, এত বড় ময়দানে খেলার অভিজ্ঞতা খুব একটা বেশি নেই এই দুই খেলোয়াড়ের। তার উপর, চাহাল একেবারেই ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত নন। তার পাশাপাশি যাদেজার মত ব্যাটিং করতে পারেন না অক্ষর প্যাটেল। ফলে, বোলিং অলরাউন্ডারের দিক থেকেও ভারত রয়েছে খানিকটা এগিয়ে।
নাসিম শাহ বনাম ভুবনেশ্বর কুমার ফাস্ট বোলিং প্রতিদ্বন্দ্বিতা
এশিয়া কাপের আগেই শাহিন শা আফ্রিদি, এবং মোহাম্মদ ওয়াসিমের মত তারকা বোলাররা চোখের কারণে ছিটকে গিয়েছেন পাকিস্তানের প্লেয়িং ১১ থেকে। অন্যদিকে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলার আগেই দল থেকে ছিটকে গিয়েছেন নতুন ফাস্ট বোলার শাহনাওয়াজ দাহানি। ফলে, এবারে পাকিস্তানের ফাস্ট বোলিংয়ের সম্পূর্ণ দায়িত্ব থাকতে চলেছে নাসিম শাহ এবং হ্যারিস রউফের কাধে। দুজনেই বলার হিসেবে অত্যন্ত অভিজ্ঞ এবং ভারতের বিরুদ্ধে বড় ম্যাচে খেলার অভিজ্ঞতাও রয়েছে দুজনের।
অন্যদিকে ভারতের হয়ে ফাস্ট বোলিং এর দায়িত্বটা সামলাবেন ভুবনেশ্বর কুমার। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে চারটি উইকেট নিয়ে পাকিস্তান ব্যাটিং লাইন আপের কোমর ভেঙে দিয়েছিলেন ভুবনেশ্বর। তার সাথেই রয়েছেন অর্শদিপ সিং, যিনি ধীরে ধীরে ফর্মে ফিরতে শুরু করেছেন। আবেশ খান এই মুহূর্তে মাঠের বাইরে। তবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে তার হতাশা জনক পারফরমেন্সের জন্য এমনিও হয়তো এই ম্যাচে তাকে বাদ পড়তে হতো। তাই তার বদলে হয়তো জায়গা পেতে পারেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। যদি তিনি ভারতীয় একাদশে আসেন, তাহলে ভারতীয় স্পিন বোলিং অনেকটাই জোরদার হয়ে যাবে। ফলে পাকিস্তানের বোলিং এর সঙ্গেও জোর টক্কর দিতে পারবে ভারতীয় বোলিং।