গর্ভাবস্থা (Pregnancy), নারী তথা তাঁকে ঘিরে তাঁর পরিজনদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। নতুন একটি প্রাণকে বাইরে থেকে লালন পালন করা, তাতে যেমন থাকে শরীরের যত্ন নেওয়া, তেমন নজর রাখতে হয় খাদ্যাভ্যাসের দিকে। শীতকাল একটি সংবেদনশীল মরশুম। এই সময় যেকোনও মানুষকেই শরীরের জন্য সচেতনতা অবলম্বন করতে হয়। একজন গর্ভবতী নারীকে যেমন শরীর নিয়ে সতর্ক থাকতে হয়, তেমনই তাঁর খাদ্যতালিকায় কিছু খাদ্যের উপস্থিতি আবশ্যক। আজ সেরকমই কিছু খাদ্যের সন্ধান করা হল।
•দই -
গর্ভবতী নারীর (Pregnant Women) দেহের সবচেয়ে বেশি চাহিদা হয় ক্যালসিয়ামের (Calcium)। কারণ গর্ভস্থ ভ্রূণের জন্য এই ক্যালসিয়াম ভীষণ গুরুত্বপূর্ন। তার গঠন, বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য ক্যালসিয়ামের ভূমিকা অনস্বীকার্য। দই অত্যন্ত ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য সামগ্রী, যেটি হাড় গঠনেও বিশেষ সহায়ক। সবচেয়ে বড় কথা, দই ব্যাকটেরিয়া দমনে বেশ সক্রিয়। তাই গর্ভবতী নারীর খাদ্যতালিকায় দইয়ের স্থান নির্দ্বিধায় অদ্বিতীয় হতে পারে।
•ডিম -
প্রোটিনের অন্যতম উপকারী উৎস হল ডিম। এটি বাজারে যেমন সহজলভ্য, তেমন ডিম দিয়ে তৈরি নানাবিধ পদ বেশ সুস্বাদুও। ডিমের মধ্যে থাকে কোলিন (Choline), লুটেইন (Lutein) ভিটামিন বি ১২ (Vitamin b12) এবং ভিটামিন ডি'সহ (Vitamin D) নানা উপকারী উপাদান। এই কারণে গর্ভাবস্থায় হবু মায়েদের ডিম খাওয়ার উপদেশ দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়া ডিমের এই উপাদান গুলি শিশুর পেশী ও হাড় গঠনে সহায়তা করে।
•মাছ -
ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ মাছ গর্ভাবস্থায় বেশ উপাদেয়। যেমন টুনা, স্যামন ইত্যাদি। এটি DHA এবং EPA এর চমৎকার উৎস। এই উপাদানগুলি মূলত প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধক কোষগুলিকে সক্রিয় করে তোলে।
• বাদাম -
আখরোট, কাজু, এবং সাধারণ বাদাম ফাইবার, শর্করা, ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ। বাদামে শরীরে জলের চাহিদা পূরণ হয় বলে, ফলের বিকল্প হিসেবে অনেকেই বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। খেঁজুরও ঠিক সমান উপকারী। এই ধরনের পুষ্টি দ্রব্যগুলিতে পটাসিয়াম, আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে, যা মা এবং শিশুর শরীরের বিকাশে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা গ্রহণ করে। মনে রাখতে হবে, উচ্চ শর্করাজাত খাদ্য কিন্তু সকলকেই এড়িয়ে চলা উচিত।
• মিষ্টি আলু -
মিষ্টি আলুতে বিটা ক্যারোটিনের (β-Carotene) উপস্থিতি লক্ষ করা যায়, যেটি ভিটামিন এ (Vitamin A) সমৃদ্ধ। ভ্রূণের কোষ, চোখ, প্রভৃতি অঙ্গ বিকাশের জন্য ভিটামিন এ'র ভূমিকা গুরুতর। গর্ভবতী নারীদের খাদ্যতালিকায় ১০০-১৫০ গ্রাম মিষ্টি আলুর পরিমাণ থাকতে পারে।
• সবুজ শাকসবজি -
গর্ভবতী নারী হোক কি আর পাঁচজন মানুষ, খাদ্যাভ্যাসে উপস্থিত সবুজ শাকসবজির তুলনা হয় না। ব্রকলি, মেথি, পালং শাক ইত্যাদি, শীতকালীন উপাদানগুলি পুষ্টিগুণের দিক দিয়ে বেশ উন্নত। ভিটামিন সি, কে, এ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফোলেট (Folate), পটাসিয়ামের মত উপকারী উপাদানের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এই উপাদানগুলি হবু মায়ের দেহে ফলিক অ্যাসিড সরবরাহে সহায়তা করে। এইগুলি শিশুর মস্তিষ্কের এবং মেরুদণ্ডের জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি কমায়।
•মটরশুঁটি -
শীতকালের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন, ফাইবার, খনিজ বা আয়রনের উৎস হল মটরশুঁটি। এটি শিশুর জন্য মায়ের শরীরে উচ্চ মানের দুধ প্রস্তুত করতে সাহায্য করে।
সতর্কতা - উপরিউক্ত পরামর্শগুলি কখনই এক এবং অদ্বিতীয় নয়, এবং সকলের পক্ষে সবরকম সমান ভাবে প্রযুক্তও হয় না। সেই কারণে প্রয়োগ করার আগে, অবশ্যই আপনার পরিচিত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে নেওয়া উচিত।