গ্রীষ্মকালের নাম শুনলে আমাদের কপালে যতই ভাঁজ পড়ুক না কেন, এই সময়ের একটি গুণ কিছুতেই আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। তা হল পাকা আমের ফলন। আম প্রিয় নয়, এমন মানুষ বোধ হয় হাতে গুনলে তবেই পাওয়া যাবে। স্বাদে মিষ্টি, রসালো এই ফলের গুণাগুণ সম্পর্কে জানলেও আপনি আরও একবার প্রেমে পড়তে বাধ্য হবেন এই ফলের। চোখের দৃষ্টিশক্তিকে প্রখর করা হোক, কিংবা ডায়েবেটিস অথবা ক্যান্সার প্রতিরোধ, এমনকী হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতেও পাকা আম একাই একশো। সম্প্রতি পুষ্টিবিদ রুজুতা দিওয়াকার (Rujuta Diwekar) এমনই এক তথ্য প্রকাশ করেছেন তাঁর সামাজিক মাধ্যমে (Social Media)। তিনি জানিয়েছেন ফাইবার, পলিফেনল বা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের জন্য যতই আমরা অন্য খাবার বেছে নিই না কেন, আম এই সবকিছুর চাহিদা একাই পূরণ করে।
আরও বেশ কিছু সমীক্ষাতেও পাকা আমের গুণাগুণ নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন পুষ্টিবিদরা। যে যে ক্ষেত্রগুলিতে আমের জুড়ি মেলা ভার, সেগুলি নিয়েই এখন আলোচনা করা হবে।
•প্রখর দৃষ্টিশক্তি - পাকা আমে রয়েছে ভিটামিন A। আমরা সকলেই জানি ভিটামিন A এর অভাবে চোখ শুকনো হয়ে যায় এবং 'রাতকানা' রোগে পর্যন্ত ব্যাক্তি আক্রান্ত হতে পারেন। পাকা আম গ্রহণের ফলে ভিটামিন A এর চাহিদা পূরণ হয়। এছাড়াও পাকা আমে, লুটেইন এবং জেক্সন্থিন নামক দুটি পুষ্টি উপাদান থাকার দরুন, এটি চোখের রেটিনাকে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে। এর ফলে দৃষ্টিশক্তিতে কোনওরকম ব্যাঘাত ঘটে না, এবং দৃষ্টিশক্তি প্রকট হয়।
•ডায়াবেটিস রোধ - পাকা আম খাওয়ার সঙ্গে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার কোনও তথ্য এখনও প্রমাণিত হয়নি। তবে টাটকা ফল বা সবজি সবসময়ই মানবদেহের জন্য উপকারী। তাই এক টুকরো আম কখনওই ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে না। উপরন্তু টাটকা অবস্থায় খেলে এই ফলের মাধ্যমে ভিটামিন C এবং কেরটিনয়েড মানব দেহে প্রবেশ করে, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে।
•অনাক্রম্যতা প্রতিরোধ - এক কাপ (১৬৫ গ্রাম) আম আপনার দৈনিক ভিটামিন A এর দশ শতাংশ প্রদান করে, যা আপনাকে স্বাস্থ্যকর রাখার জন্য বেশ উপযোগী। এছাড়াও পাকা আম থেকে প্রায় ৭৫ শতাংশ ভিটামিন C শরীরে গৃহীত হয় যা রক্তে রোগ প্রতিরোধী শ্বেত রক্তকণিকা গড়ে তুলতে সাহায্য করে, এবং শরীরে অনাক্রম্যতা বজায় রাখে।
•হৃদয়কে সুস্থ রাখা - পাকা আমে পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মত খনিজ উপাদান থাকে। বলা বাহুল্য এই উপাদানগুলি হৃদযন্ত্রকে সুস্থতা প্রদান করতে বিশেষ সহায়ক। এছাড়াও পাকা আমে রয়েছে সুপার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ম্যাঙ্গিফেরিন যা হৃদযন্ত্রের সচলতার জন্য বেশ উপকারী। এই উপাদান, হৃৎপিণ্ডের কোষকে প্রদাহের হাত থেকে রক্ষা করা, কোষের মৃত্যুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, রক্তে কোলেস্টেল, ট্রাইগ্লিসাাইড এবং ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে বিশেষ সাহায্য করে।
•বিশেষ ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ - শুনলে অবাক হবেন, পাকা আমের মধ্যে উপস্থিত রয়েছে ক্যান্সার বিরোধী উপাদান। এটির মধ্যে রয়েছে পলিফেনল যা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এর ফলে লিউকেমিয়া, কোলন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, এমনকী ফুসফুসের ক্যান্সারের হাত থেকেও রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
•হজমে সহায়ক - পাকা আমের মধ্যে থাকে আমাইলেজ নামক হজমে সহায়ক উৎসেচক। এই উৎসেছকগুলি জটিল কার্বোহাইড্রেটকে গ্লুকোজ এবং মলটোজের মত শর্করাতে ভেঙে দিতে সাহায্য করে। যার ফলে পরিপাকে বিশেষ সহায়তা করে এই পদ্ধতি। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণ জলের এবং ফাইবারের উপস্থিতির জন্য পাকা আম কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়া প্রতিরোধ করতেও সহায়তা করে।
সতর্কতা অবলম্বন: আম নিঃসন্দেহে স্বাদ এবং গুণের দিক দিয়ে সেরার আসন লাভ করতে পারে। কিন্তু এটিও মনে রাখতে হবে, কোনও জিনিস অত্যধিক গ্রহণে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতই, উপযুক্ত পরিমাণ মত আম গ্রহন করলে, তবেই সঠিক উপকার পাওয়া যাবে।