পুজোয় বিভেদের বাতাবরণ তৈরি হল খোদ কলকাতায়, বলছেন নেটিজেনদের একাংশ। এবার নাম জড়াল দক্ষিণ কলকাতার এক আবাসনের পুজোয়। অভিযোগ, বিধবা হওয়ার কারণে মায়ের বরণে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। এখানেই শেষ নয়, অহিন্দু শিশুদের দেওয়া হয়নি দুর্গা পুজোর অনুষ্ঠানে প্রবেশাধিকার। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই নেটমাধ্যমে তৈরি হয়েছে তীব্র চাপানউতোর।
মনো-সমাজকর্মী রত্নাবলী রায় তাঁর ফেসবুক পেজে অভিযোগ করেছেন এমন ঘটনার কথা। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, খোদ কলকাতার বুকে এমন ঘটনায় সর্বধর্ম সমন্বয়ের দুর্গোৎসব আজ পরিণত হয়েছে বিভাজনের উৎসবে। রত্নাবলী রায় তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেছেন, "কলকাতার একটু প্রান্তে 'বড়লোক' আবাসনে বিশেষ সম্প্রদায়ের কিছু ছোট ছেলেমেয়েদের ঠাকুর দেখতে দেওয়া হয়নি । অথচ, তাদের খুশীর উৎসব আসলেই, আমরা 'এ্যাই বিরিয়ানি খাওয়াও' বলে হ্যাংলামি করি, বাড়ীতে অনিমন্ত্রিত হয়ে প্রায় চড়াও হই! সেই একই আবাসনের একজন স্বামী হারা মহিলাকে ঠাকুর বরণ থেকে বিরত করা হয়েছে, বলা হয়েছে 'আপনি তো বিধবা' কিন্তু পুজোয় তাঁর মোটা টাকা চাঁদা হাত পেতে নিয়েছে আবাসনের পুজো কমিটি। যে পুজোয় বা উৎসবে সবার সামিল হবার অধিকার নেই, সেই উৎসব খুব সেকুলার বা কমুউনিটি কেন্দ্রিক সে সব বলা বন্ধ হোক।"
এই ঘটনা ইতিমধ্যেই নেটমাধ্যমে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। সূত্র মারফত খবর, ওই আবাসনের একজন ষাটোর্ধ্ব বিধবা মহিলাকে ষষ্ঠীর দিন মায়ের বরণে প্রাথমিক ভাবে বাধা দেওয়া হয়। বলা হয়, বৈধব্যের কারণে তিনি এই কাজ করতে পারবেন না। যদিও এই পুজো আয়োজনের অন্যতম হোতা তিনি। দিয়েছেন চাঁদাও। এই ঘটনার পর আবাসনের বাকি মহিলাদের একাংশ প্রতিবাদ করেন। তারপর সেই মহিলা সুযোগ পেয়েছেন বলে খবর। প্রাথমিক পর্যায়ে ভুল বোঝাবুঝি হলেও পরে সব সমস্যা মিটেও যায় বলে খবর। যদিও এই ঘটনাকে কোন অংশে ছোট করে দেখছেন না নেটিজেনদের একাংশ। দিনের পর দিন ধর্মের নামে অতিরিক্ত মূল্যবোধহীনতা প্রকট হয়ে উঠছে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।
এই ঘটনায় আর এক সমাজকর্মী দোলন গাঙ্গুলী তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছেন। তিনি ধিক্কার জানিয়েছেন 'হিন্দু বর্ণবাদী সমাজকে'। নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, "শুনলাম কলকাতার উপান্তে একটি অভিজাত সম্প্রদায়ের আবাসনে কতিপয় ইসলামধর্মাবলম্বী যুবককে ঠাকুর দেখার প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি। ঐ একই আবাসনে এক স্বামী-হারানো মহিলাকে ঠাকুর বরণ করতেও দেওয়া হয় নি। আর আমরা বড়াই করি, দুর্গাপুজো সকলের উৎসব! দুর্গাপুজোয় নাকি জাতিধর্ম নির্বিশেষে মানুষ আনন্দ করে!"
সমাজকর্মী দোলন গাঙ্গুলী আরও বলেছেন, "আসলে দুর্গাপুজো নিয়ে আমাদের বাড়াবাড়ি আদিখ্যেতাকে মান্যতা দেওয়ার জন্য আমরা তাকে 'শারদ উৎসব' নাম দিই। আমরা দেখেও দেখি না, বেশীরভাগ পুজোতেই ভোগ রাঁধেন ব্রাহ্মণ, পুরোহিত ব্রাহ্মণ, আচারগুলো বেশীরভাগই ব্রাহ্মণ্যবাদী, পিতৃতান্ত্রিক। ঈদে আমরা বিরিয়ানী খেতে মুসলমান বন্ধুদের বাড়ি বিনা দ্বিধায় চলে যাই, আর না যেতে পারলে তারা হিন্দু বন্ধুদের বাড়ি বাড়ি সেমুই, বিরিয়ানী পাঠান। আমরা কজন মুসলমান বন্ধুর বাড়ি ভোগ পাঠাই? কজনকে বলি, চল একসঙ্গে ঠাকুর দেখতে যাই? কজনকে নবমীর দিন খাসীর মাংস খেতে বাড়িতে দাওয়াত দিই? অন্তর্ভুক্তিকরণের সব দায় মুসলমান সম্প্রদায়ের?? আর নেমন্তন্ন তো দূরের কথা, আমরা তাদের নিজেদের আবাসনে ঠাকুর দেখতে ঢুকতে দিচ্ছি না!! আমাদের দ্বিচারিতা অন্তহীন! ধিক্কার ঐ আবাসনকে! ধিক্কার হিন্দু বর্ণবাদী সমাজকে!"