একটা সময় বাঙালীর অবসর সময় কাটানোর প্রধান বিনোদন ছিল সিনেমাহলে গিয়ে সিনেমা দেখা। শনিবারের দুপুর বা রবিবারের বিকেল হলেই ভিড় উপচে পড়ত শহরের নামীদামী প্রেক্ষাগৃহে। কিন্তু বর্তমানে সময় পাল্টেছে, সমাজ পাল্টেছে, পাল্টেছে মানুষের জীবনশৈলী, চিন্তাধারা। আর সে সবের মাঝেই কোথাও যেন ঠিক তাল মেলাতে পারেনি চ্যাপলিন, লাইটহাউস, এলিট, মিত্রা-র মতো সাবেকি সিনেমাহল গুলি। সাথে গতবছর থেকে অতিমারির বাড়বাড়ন্তে কার্যত দর্শকশূন্য সমস্ত প্রেক্ষাগৃহ। ফলে এই অবস্থায় সিনেমাহল গুলিকে চালিয়ে যাওয়া একপ্রকার অসাধ্যই হয়ে উঠেছে হল মালিকদের কাছে। তাই কারোর গেটে ঝুলেছে তালা, তো কেউ বিক্রি হয়ে গেছে পুঁজিপতিদের কাছে। কিন্তু তার মাঝেও ব্যতিক্রম সত্তর পেরনো প্রাচী।
শিয়ালদা ষ্টেশন থেকে নেমে মৌলালির দিকে যেতে ফ্লাইওভারের ডানহাতেই পড়ে ঐতিহ্যবাহী সিনেমাহল প্রাচী। ভারত স্বাধীন হওয়ার ঠিক এক বছর পর জিতেন্দ্র বসুর হাত ধরে পথ চলা শুরু হয়েছিল এই প্রেক্ষাগৃহের। তার পর থেকে গঙ্গায় বয়ে গিয়েছে বহু জল। মাল্টিপ্লেক্সের রমরমানিতে ঢাকা পড়েছে একসময়ের সুপারহিট সিনেমাহল গুলির জৌলুশ। প্রাচীও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে প্রাচীর বর্তমান কর্ণধারের হাত ধরেই আবার নতুন অবতারে শিয়ালদার সিনেমাপ্রেমীদের তথাকথিত আইনক্স, পিভিআর।
বিদিশা বসু। সম্পর্কে প্রাচী সিনেমাহলের প্রতিষ্ঠাতা জিতেন্দ্র বসুর নাতনী এবং প্রাচীর বর্তমান কর্ণধার। তিনি একপ্রকার দৃঢ়সংকল্প ছিলেন, কোনও মতেই এই স্মতিবিজড়িত সিনেমাহলকে ‘বন্ধ’ বা ‘বিক্রি’ করবেন না। তিনি কথা রেখেছেন। নতুন রুপে সাজিয়ে তুলেছেন প্রাচী’কে। প্রাচীর প্রাচীনতা আর নতুনত্বের মিশেলে এই সিঙ্গেলস্ক্রিনও যে এখন মাল্টিপ্লেক্সদের সাথে সমানে সমানে পাল্লা দিতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কিন্তু এই সিনেমাহলে নতুন সংযোজন কি? সিঁড়িতে বসেছে লাল কার্পেট। বসার চেয়ারে লাগানো হয়েছে আরামদায়ক গদি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থাও আছে নতুন ভাবে সেজে ওঠা প্রাচী সিনেমাহলে। টিকিট বুকিং-এও এসেছে আমুল পরিবর্তন। বাংলায় ছাপা টিকিটের বদলে এখন দর্শকরা মোবাইল ফোনে কাটা টিকিট দেখিয়েই ঢুকতে পারবেন প্রেক্ষাগৃহে। আপাতত, কোভিড বিধি মেনে দিনে চারটি শিফটে চলবে দুটি সিনেমা ‘মুখোশ’ এবং ‘বেলবটম’। তবে সিনেমা দেখানোর সময় বদল হবে প্রতি সপ্তাহেই। প্রাচী নবজীবন ফিরে পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত চলচ্চিত্রকর্মী থেকে চলচ্চিত্রপ্রেমীরা।