রোজকারের মতো শনিবার সন্ধ্যায় কাজ থেকে ফিরে সাতটা নাগাদ স্নান করতে যাবেন বলে বেরোন তপসিয়া এলাকার এক তরুণ। আর ফেরেননি। রবিবার সকালে বাড়ির সামনেই একটি কুয়ো থেকে উদ্ধার হল তার রক্তাক্ত দেহ। এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে আনন্দপুর থানার প্রগতি ময়দান দমকল কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকায়। গোটা ঘটনাটি দুর্ঘটনা নাকি ওই তরুণকে খুন করা হয়েছে তাই নিয়ে দ্বন্দ্বে রয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানাচ্ছে, ওই মৃতের নাম সাদ্দাম হোসেন। তার বাড়ি সায়েন্স সিটি সংলগ্ন তপসিয়া এলাকায়। সেখানে তার বাবা এবং তার পরিবার থাকে। তবে সাদ্দাম ই এম বাইপাসের সাইন্স সিটির একেবারে কাছেই একটি সেতুর নিচে দিদিমার সঙ্গে থাকতেন। তার মূল পেশা ছিল প্লাস্টিক কুড়ানো। প্লাস্টিক কুড়িয়ে তা বিক্রি করেই পেট চালাতেন সাদ্দাম এবং তার পরিবার। তবে এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, প্রায়ই নেশা করতেন সাদ্দাম। মাঝেমধ্যেই চলে গিয়ে কয়েক সপ্তাহ পরে ফিরে আসতেন। মাঝেমধ্যে তাকে নেশার ঘোরে এদিক-ওদিক পড়ে থাকতেও দেখা গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন এলাকাবাসী।
পরিবার সূত্রে জানা যাচ্ছে, শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ প্লাস্টিক কুড়িয়ে প্রতিদিনের মতো ফিরেছিলেন সাদ্দাম। তারপর দিদিমাকে জানান, তিনি স্নান করতে যাচ্ছেন। এরপরে আর ফেরেননি। সারারাত খোঁজ করেও তার সন্ধান পাননি দিদিমা। রবিবার ভোরে কুয়ো থেকে জল তোলার সময় লাল জল উঠতে দেখে সন্দেহ হয় এলাকাবাসীদের। মেশিন লাগিয়ে জল তুলতে শুরু করেন তারা। জলস্তর খানিকটা নিচের দিকে যেতেই দেখা যায় কুয়োতে পড়ে রয়েছে সাদ্দামের মৃতদেহ। খবর দেওয়া হয় আনন্দপুর থানায়। কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও পৌছায় এলাকায়। সকাল আটটা নাগাদ কুয়া থেকে দেহ উদ্ধার করে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
অন্যদিকে বাসিন্দাদের দাবি, ওই সময় মাথার পিছন দিক থেকে রক্ত বেরোচ্ছিল। মৃতের দিদিমা রাবেয়া বেগম কান্নাভেজা চোখে বলছেন, সাদ্দাম এমন করেনি। কাজে যেত, আবার কাজ শেষ হয়ে গেলে ফিরেও আসতো। শনিবার রাতে না ফেরায় ভেবেছিলাম আবার কোথাও বেরিয়েছে। সময়মতো হয়তো ফিরে আসবে। আর ফেরেনি। পরিবারের লোকজনদের চোখে জল। বাসিন্দাদের দাবি, সাদ্দাম প্রায়ই নেশা করত। এদিক-ওদিক পড়ে থাকতে দেখেছেন অনেকেই। নেশার ঘোরে স্নান করতে গিয়ে কি তাহলে কুয়োয় পড়ে গিয়েছে? এই অনুমান করছেন একাংশ। তবে ওই তরুণের মাথার পিছনে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে কিনা, তা ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এনআরএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইতিমধ্যেই সাদ্দামের দেহের ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট সামনে এলেই মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছে আনন্দপুর থানার পুলিশ।