১৯ এপ্রিল, ২০২৪
সাক্ষাৎকার

এক সাধারণ ছেলের স্বপ্ণপূরণের অসাধারণ গল্প

অজ পাড়াগাঁয়ের চাষির ঘরের ছেলে আজ নামকরা ইউটিউবার
MD 360 Khalek Rahaman Bengali News
নিজস্ব ছবি
srirupa-banerjee
শ্রীরূপা বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রকাশিত: ২০ জানুয়ারি ২০২৩
শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:৩১

প্রথমে স্বপ্ণ দেখতে হয়৷ তারপর সেই স্বপ্ণের দিকে দু’হাত বাড়িয়ে একরোখা জেদ নিয়ে ছুটে চলতে হয়৷ পায়ে পায়ে কঠিন বাধা হয়তো পথ আটকায়৷ তবু থামতে নেই৷ বন্ধ করতে নেই স্বপ্ণ দেখা৷ অবশেষে আসে বহু–প্রতীক্ষিত সাফল্য৷

ঠিক এটাই ঘটেছে খালেক রহমানের জীবনে। উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত এক গ্রামের ছেলে খালেক। কে বা তাঁকে জানতো চিনতো! আজ কিন্তু এক ডাকে অনেকেই চেনে ইউটিউবার খালেক রহমানকে। ইউটিউবে Md 360 চ্যানেলের কনটেন্ট ক্রিয়েটর তিনি। এক আধ জন নয়, তাঁর চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ১২ লক্ষ! তাঁর এই Md 360 চ্যানেল বহু তথ্য ও খবরাখবর যোগান দিয়ে নানাভাবে ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ-তরুণী সহ সমাজের সমস্ত অংশের মানুষকে সাহায্য করে চলেছে। মাসে নয় নয় করেও খালেকের রোজগার এখন গড়ে ৩৫ হাজার টাকারও বেশি।

কী করে এল এই অসাধারণ সাফল্য? পরিদর্শক প্রশ্ন রেখেছিল খালেকের কাছে। জানতে চেয়েছিল তাঁর জীবনের গল্প। শুনিয়েছেন খালেক রহমান।

সাধারণ এক ছেলের সে এক অসাধারণ কাহিনী!

কোচবিহারের মাথাভাঙ্গা-১ ব্লকের একটি গ্রাম পঞ্চায়েত শিকারপুর। সেখানকার দরিবশ গ্রামের ছেলে খালেক। পরিবার কৃষিজীবী। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে চাষের কাজ করে বাবা যা রোজগার করতেন তাই দিয়ে ছোটবেলাটা খুব সাধারণ ভাবে কেটেছে খালেকের। সংসারে হয়তো কিছুটা অভাব ছিল, কিন্তু মা-বাবার স্নেহ-ভালবাসায় কোনও ঘাটতি ছিল না।

বাড়ির পাশের প্রাথমিক স্কুলে শুরু হল পড়াশোনা। সেখান থেকে পাশ করে খালেক ভর্তি হন এক কিলোমিটার দূরের এক হাই স্কুলে। শহরের বড় স্কুলে ভর্তি হওয়ার সাধ ছিল। ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করে তালিকায় নামও উঠেছিল। কিন্তু সে স্কুল যে অনেক দূরে! যাতায়াতের এত খরচ বহন করা, কৃষিজীবী বাবার পক্ষে ছিল সাধ্যের অতীত। তাই শিকেয় তুলে রাখতে হল নামি স্কুলে পড়ার স্বপ্ন।

কিন্তু ছোট থেকেই খালেক একরোখা, হার মানতে রাজি নয়। গ্রামের হাই স্কুল থেকে একদিন উচ্চমাধ্যমিক পাশ করলেন। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পড়াশোনা এগোয়। মাথাভাঙ্গা কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। আপাতত বিএড পড়া চলছে। সঙ্গে চলছে ইউটিউবের কাজকর্ম।

কিন্তু ইউটিউবে কিভাবে আসা? খালেক জানালেন, উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর তিনি ভর্তি হয়েছিলেন ডিএলএড কোর্সে। সেই সময় নানা চাকরির পরীক্ষাতেও বসতেন তিনি। নিয়মিত খোঁজ রাখতে হত কোথায় কোন চাকরির বিজ্ঞাপনের খবর প্রকাশিত হল। এছাড়া কী কী স্কলারশিপ আছে, যা পেলে পড়াশোনায় একটু সুবিধা হয়, সেসব নিয়েও সেই সময় খোঁজাখুঁজি করছিলেন খালেক। তখনই তাঁর মনে হয়, কোনও একটা জায়গা থেকে এই ধরনের খবরাখবর সহজে পাওয়ার যদি কোনও উপায় থাকত, কতই না ভালো হতো! শুধু খালেক নিজে তো নয় আরও বহুজনই এগুলি সম্পর্কে জানতে চান। সেই সময়ই খালেকের মাথায় আসে ইউটিউবে একটি চ্যানেল শুরু করার কথা। কিন্তু কী করে তা হবে? সেইসময় খালেকের নিজের একটা স্মার্টফোন পর্যন্ত ছিল না যে!

হাল ছাড়ার পাত্র নন খালেক রহমান। মাকে অনেক বুঝিয়ে, আবদার করে কিনলেন একটা স্মার্টফোন। একটু একটু করিয়ে জমিয়ে রাখা আট-নয় হাজার টাকা ছেলের হাতে তুলে দিলেন মা। ভিডিও তৈরির কাজ শুরু করলেন খালেক। ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর প্রথম ভিডিও বানালেন খালেক রহমান। শুরু হলে অসাধ্য সাধন। না আছে ভালো মানের মোবাইল ফোন, না একটা ক্যামেরা। রেকর্ড করার জন্য উপযুক্ত ঘর তো দূরের কথা। কখনও বাড়ির পাশে মাঠে গিয়ে ভিডিও করেন, কখনও বা নিরিবিলি জায়গা পেতে সাইকেল চেপে এক কিলোমিটার দূরে কোনও এলাকায় চলে যেতে হয়। অসীম ধৈর্য আর নিষ্ঠা নিয়ে লাগাতার পরিশ্রম করে যেতে থাকেন খালেক।

Youtube MD 360 Khalek Rahaman Bengali News
নিজস্ব ছবি

সে একদিন গেছে। নিজেই বিষয় খুঁজছেন, একা হাতেই রেকর্ড, এডিটিং, আপলোড-- সমস্ত কিছু করছেন। ফলে সারাদিন মোবাইল নিয়েই পড়ে থাকতে হচ্ছে খালেককে। এদিকে নানা জনে নানা কথা বলছে। কেউ বলছে ছেলেটার মাথা খারাপ হয়ে গেছে, সারাদিন মোবাইলে হাত-পা নেড়ে কি সব কথা বলতে থাকে! কেউ আবার সন্দেহ প্রকাশ করছে যে, না জানি খালেক মেয়েদের খপ্পরে পড়লো কিনা! হয়তো তাদের সঙ্গেই দিনরাত ফোনে কথা বলে! মা- বাবা পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে উঠছেন ছেলের প্রতি, তার মোবাইল আসক্তি দেখে। বকাবকি করছেন ছেলেকে। বন্ধুদের কয়েকজনকে ইউটিউবে ভিডিও বানানোর কথা বলেছিলেন খালেক। অনেকে উৎসাহ দিলেও অনেকে আবার তাঁকে খুব নিরুৎসাহ করেছিল। বলেছিল 'ওসব করে কী হবে? কে দেখবে? তুই কি আর ভালো ভিডিও বানাতে পারবি?'

মুখ বুজে খালেক সমস্ত নিন্দা মন্দ কটূক্তি সহ্য করে গেছেন। আর এক মনে চালিয়ে গেছেন নিজের কাজ। অবশেষে যেদিন তাঁর চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ১০ হাজার ছুঁল, সেদিন মা-বাবাকে নিজের ইউটিউব চ্যানেলের কথা জানালেন খালেক। সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটে ছেলের এই সফলতার কথা শুনে বাবা-মার চোখে তখন খুশির ঝলক। মুখে আনন্দের হাসি।

পরিদর্শকের পক্ষ থেকে খালেকের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, সচরাচর ইউটিউবে যেমন দেখা যায় হাসি মজা হইহুল্লোড় খাওয়া দাওয়া ইত্যাদির ভিডিও, সেখানে Md 360-এর ভিডিওগুলি সম্পূর্ণ অন্য ধরনের কেন? খালেক রহমান জানিয়েছেন, ছোট থেকেই তিনি সমাজের মানুষকে নিয়ে ভাবেন। নিজে যেটুকু ভালো পেয়েছেন সকলের মাঝে তা ছড়িয়ে দিয়ে খুব আনন্দ পান। তাই তাঁর চ্যানেলে চাকরি সংক্রান্ত কিংবা রেশন কার্ড আধার কার্ড ইত্যাদি সরকারি নথি সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়। এগুলির মধ্যে দিয়ে দর্শকদের নিত্যপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলি সরবরাহ করেন খালেক। ভিডিওগুলি দেখে বহু মানুষ উপকৃত হন। ফলে শুধু রোজগার নয়, এই কাজ করে খালেক অনেক মানসিক তৃপ্তিও পান।

MD 360 Khalek Rahaman gold button Bengali News
নিজস্ব ছবি

খালেক রহমানের সঙ্গে কথা বলে মানুষের প্রতি তাঁর ভালবাসার খবরও পাওয়া গেল। তিনি চান এমন একটা সমাজ যেখানে মানুষের মানুষে ভেদাভেদ থাকবে না। ধর্ম নিয়ে, জাতপাত নিয়ে লড়াই না করে মিলেমিশে থাকবে মানুষ, একে অপরকে সহযোগিতা করবে। তিনি চান, দেশের সমস্ত বেকার যুবক-যুবতী যেন কাজ পায়। এ ব্যাপারে সরকার যেন তাদের পাশে দাঁড়ায়। এখন বিএড কোর্সে পড়াশোনা করছেন খালেক। আগামী দিনে শিক্ষকতা করার ইচ্ছা আছে। তাছাড়া ব্যবসাও করতে চান তিনি। পাশাপাশি ইউটিউবের কাজ তো রয়েছেই, যেটার সঙ্গে গভীর আবেগ নিয়ে তিনি যুক্ত। তাঁর চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবাররা এখন তাঁর কাছে পরিবারের মানুষের মতোই। ইউটিউব শুধু তাঁকে অনেক মানুষের কাছে নিয়ে গেছে তাই নয়, সেখান থেকে সিলভার প্লে বাটন ও গোল্ডেন প্লে বাটন-এর মত নামজাদা পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।

এত খ্যাতি পরিচিতির পরেও ইউটিউবার খালেক কিন্তু সেই আগের মতোই রয়ে গিয়েছেন। আজও ছোটবেলার সেই স্কুলে যাওয়ার দিনগুলির কথা মনে পড়ে তাঁর। বর্ষাকালে বন্ধুদের সঙ্গে মিলে স্কুল পালিয়ে পুকুরে ছিপ ফেলে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করা, আর শেষে, না রুই-কাতলা নয়, ছোট ছোট পুঁটি মাছ ধরে বাড়ি ফেরার আনন্দের কথা এখনও মনে পড়ে হাসি আসে। আজও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবার কথা ভাবেন তিনি। সাধ্যমত দাঁড়ানও। যতটা পারা যায় তাঁদের দিকে সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।

দেশের যে অসংখ্য তরুণ-তরুণী নিজের পায়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে, রোজগারের কোনও একটা ব্যবস্থা করার জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলছে, খালেক রহমানের এই সাফল্য তাদের কাছে একটা শিক্ষা। খালেক তাদের বলতে চান, পৃথিবীতে কোনও কাজই ছোট নয়। এখন অনলাইনে নানা ধরনের কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। শুধু সরকারি চাকরির দিকে তাকিয়ে বসে না থেকে বেকার তরুণ-তরুণীরা এই পথেও রোজগারের চেষ্টা করতে পারেন। তবে খালেকের মতে, যে কাজই যে করুন না কেন, সবার আগে প্রয়োজন ধৈর্য নিষ্ঠা এবং পরিশ্রম করার ইচ্ছা। মন স্থির করে কোনও একটা কাজ বেছে নিয়ে তাতে লেগে-পড়ে থাকলে একদিন না একদিন সাফল্য হাতের মুঠোয় আসবেই, জানালেন খালেক।

ইউটিউবার খালেক রহমানের প্রতি টিম পরিদর্শকেরও অকুন্ঠ শুভেচ্ছা রইল। তিনি তাঁর লক্ষ্যে এগিয়ে যান। আরও বহু মানুষ তাঁর ইউটিউব চ্যানেল থেকে উপকৃত হন এবং তাঁকে অনুসরণ করে আরও অনেক ছেলেমেয়ে জীবনে মাথা উঁচু করে বাঁচার রাস্তা খুঁজে নিন।

আরও খবর

বিজ্ঞাপন দিন

[email protected]

১৪ এপ্রিল

স্বাগত ১৪৩১! সকলকে শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছা

living room home interior
১০ এপ্রিল

নায়িকাদের মত ঈদের দিনে সেজে উঠুন আপনিও, রইল ঈদের শুভেচ্ছা

Mehazabien eid
৫ এপ্রিল

আগত সন্তানের উদ্দেশ্যে কী বললেন ইয়ামি গৌতম?

Yami wedding
৫ এপ্রিল

মুক্তি পেয়েছে 'আলাপ' ছবির প্রথম গান 'আবহাওয়া বলে দেয়'

Mimi white saree new
২৫ মার্চ

রঙ মাখলেই মুখ ভরে যায় র‍্যাশে? রইল সমাধান

holi celebration
২৩ মার্চ

আজ শনিবার বেলা বারোটার সময় মরদেহ আনা হবে টেকনিশিয়ানস স্টুডিওতে

Partha Sarathi Deb
২২ মার্চ

জিৎ-রুক্মিণীকে জুটিতে দেখতে মুখিয়ে রয়েছে দর্শক

jeet Rukmini
১৬ মার্চ

হুগলি থেকে তৃণমূলের হয়ে প্রার্থী হয়েছেন টলি তারকা রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়

Rachana 1
২৩ ফেব্রুয়ারি

আমি আপ্লুত, ধন্যবাদ : লিখলেন সোনু সুদ

Sonu new
২৩ ফেব্রুয়ারি

বাংলা থেকে আসন্ন লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

Narendra Modi
১৯ ফেব্রুয়ারি

দুর্দান্ত অ্যাকশন নিয়ে আসছেন জন আব্রাহাম

John Arjun
১৬ ফেব্রুয়ারি

মাত্র দেড়শো টাকার বিনিময় উপভোগ করুন এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

Book my show
১৪ ফেব্রুয়ারি

'দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে' থেকে 'জব উই মেট', পছন্দের ছবির সঙ্গে উপভোগ করুন বিশেষ দিনগুলি

DilwaleDulhaniaLeJayenge