বাংলা চলচ্চিত্রে যেন এক যুগের অবসান, টালিগঞ্জের মহীরুহ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chatterjee) যে আর নেই, তা বোঝার উপায় নেই। কিংবদন্তি শিল্পী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলতেই এখনও অভ্যস্ত বাঙালি। 'উত্তম' সমসাময়িক যুগেও বাঙালির মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছিলেন 'সৌমিত্র'। ছয় দশকেরও বেশ দীর্ঘ সময় ধরে তাঁর চলচ্চিত্র জীবন।
অভিনেতার রুপোলি সফর শুরু হয়, ১৯৫৯ সালে। ছবির নাম অপুর সংসার, যা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়। সেই পথচলা শুরু এই জুটির। সত্যজিৎ পরিচালিত ৩৪টি ছবির ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, যা বাংলা চলচ্চিত্রের পরম ও বিরল প্রাপ্তি।
শুধু সিনেমায় নয়, এর পাশাপাশি মঞ্চাভিনয়, নাট্য পরিচালনা ও নাট্য রচনাতেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সফল হন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আবার সাহিত্য জগতেও ছিল তাঁর অনায়াস পদচারণ, আঁকতেন ছবিও। তবে এসবের মাঝেও অভিনয় ছিল তাঁর জীবনের অক্সিজেন। তিনি বলতেন, "আমি অভিনয় করছি বলেই তো সুস্থ আছি।" আর সেই মতোনই লডকাউন পরবর্তী সময়ে শেষ করেছেন নিজের বায়োপিক 'অভিযান'-এর শ্যুটিং।
কাজ করেছেন একটি ডকুমেন্ট্রারি ফিল্মেও। সৌমিত্রবাবু বলতেন "কাজ ছাড়া আমি আর কিচ্ছু করতে চাই না।" আর তাই ৬১ বছরের দীর্ঘ ফিল্মি কেরিয়ারে প্রায় ৩০০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
শিল্পীর এই অসামান্য সফরকেই পর্দায় তুলে ধরেছেন পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় (Parambrata Chatterjee)। যার মূল কাহিনী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনকে নিয়েই। আগেই প্রকাশ্যে এসেছিল পরমব্রত পরিচালিত ‘অভিযান’ (Abhijaan Trailer) ছবির টিজার।তবে এবার প্রকাশ্যে এল ট্রেলার। কিন্তু এবার সাথে নেই সৌমিত্রবাবু। আর তাই আবেগঘন হয়ে ট্যুইটারে পরমব্রত লিখলেন, “মাথা নুইয়ে হার মেনে নেওয়া নয়, সোজা শিরদাঁড়ায় ঘুরে দাঁড়ানো এক প্রতিভার গল্প!”
উল্লেখ্য ১৯৩৫ সালে কৃষ্ণনগরে জন্ম হয় সৌমিত্রবাবুর। বাবা মোহিত কুমার চট্টোপাধ্যায় কলকাতা হাইকোর্টের নামকরা উকিল ছিলেন। তবে নাটকের চর্চা নিয়মিত ছিল পরিবারে, বাবা নাটকের দলে অভিনয় করতেন। কাজেই ছোট থেকেই সেই পরিবেশে বড় হওয়া তাঁর। তখন থেকেই অভিনয়ের প্রতি ছিল তাঁর শ্রদ্ধা।
এরপর কলকাতার সিটি কলেজ থেকে প্রথমে আইএসসি এবং পরে বিএ অনার্স(বাংলা) পাশ করার পর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ অফ আর্টসে দু-বছর পড়াশোনা করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। পরবর্তীতে সিনেমাজগতে পা রাখেন তিনি। সত্যজিৎ রায় থেকে তপন সিনহা, মৃণাল সেন, অজয় কর, তরুণ মজুমদার থেকে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অতনু ঘোষ, সুমন ঘোষ সহ একাধিক পরিচালকদের সাথে অভিনয় করেছেন তিনি। কাজেই, সময়ের ‘শাখা প্রশাখা’য় এখনও অষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে তাঁর রুপোলি স্মৃতি। আর সেই স্মৃতিকেই উসকে দিয়েছেন পরিচালক পরমব্রত।
জানা যাচ্ছে, তরুণ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন যিশু সেনগুপ্ত। মহানায়ক উত্তমকুমারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের। সৌমিত্রকন্যা পৌলমী বসুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোহিনী সেনগুপ্ত। আর নিজের প্রবীণ বয়সের চরিত্রে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নিজেই (করোনা পরবর্তী সময়ে), যা মূলত আকর্ষণ হতে চলেছে। এছাড়াও এই ছবিতে রয়েছেন রুদ্রনীল ঘোষ, সোহিনী সরকার, তনুশ্রী চক্রবর্তী, সুজন মুখোপাধ্যায়, ত্রিধা চৌধুরী, পাওলি দাম, পায়েল সরকার, তুহিনা দাস, পদ্মনাভ দাশগুপ্ত, সমদর্শী দত্ত, জয়রাজ ভট্টাচার্য, দুলাল লাহিড়ী, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ বসু, সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, অনিন্দিতা বসুর মতো তারকারা।