তাঁর সাবলীল অভিনয়ের প্রধান ভিতগুলির মধ্যে, মিষ্টি হাসি এবং 'সেন্স অফ হিউমার' অন্যতম। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া হওয়া সত্ত্বেও অভিনয়কে ভবিষ্যত হিসেবে বেছে নেন বর্ধমানের অঙ্কুশ হাজরা (Ankush Hazra)। বাংলা ছবির জগতে পা রেখে প্রথমেই 'কেল্লাফতে' করে দেন অঙ্কুশ। সেই শুরু। তারপর থেকে যোগ হতে থেকেছে তাঁর সাফল্যের মুকুটে একটি করে পালক।
১৯৮৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্ধমানে জন্মগ্রহণ করেন অঙ্কুশ। সেখানকার হলি রক স্কুল এবং ইস্ট-ওয়েস্ট মডেল স্কুল থেকে পড়াশুনা করে, কলকাতায় চলে আসেন অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। কলকাতা থেকেই দ্য হেরিটেজ একাডেমি থেকে বিবিএ পড়ার সঙ্গে, নাচের তালিম নিতে শুরু করেন বিখ্যাত কোরিওগ্রাফার বাবা যাদবের কাছ থেকে।
বাংলা ছবির গ্রাফ যখন জিৎ, দেবকে নিয়ে এগিয়ে চলেছে, সেই সময় আবির্ভাব ঘটে অঙ্কুশের। নিজের মত অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ২০১০ সালে 'কেল্লাফতে' (Kellafate) ছবি দিয়ে তাঁর আত্মপ্রকাশ। পীযুষ সাহা পরিচালিত এই ছবিতে অঙ্কুশের নাম হয় শিবু। শুধু অভিনয়েই নয়, প্রথম ছবিতে নাচের দিক দিয়ে দর্শকের মন জয় করে, অভিনেতা দেবের একজন শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠেন তিনি।
২০১২ সালে 'ইডিয়ট' (Idiot) ছবিতে সম্রাটের চরিত্রে, ২০১৩ সালে 'কানামাছি' (Kanamachi) ছবিতে আবিরের চরিত্রে, ২০১৪ সালে 'আমি শুধু চেয়েছি তোমায়' (Ami Shudhu Cheyechi Tomay) ছবিতে অভিজিতের চরিত্রে অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দেন অঙ্কুশ। বলা বাহুল্য, প্রতি ছবিতে শ্রাবন্তী, শুভশ্রী থেকে বিভিন্ন নায়িকার সঙ্গে তাঁর 'অন স্ক্রিন' রসায়ন দর্শকের মন ছুঁয়ে যায়।
এছাড়া 'জামাই ৪২০' (Jamai 420) এর মত হাসির মোড়কের ছবিতে জয়ের চরিত্র হোক, অথবা সৃজিত মুখার্জীর পরিচালনায় 'জুলফিকার' (Zulfiqar) ছবিতে আখতার আহমেদের মত সিরিয়াস চরিত্র, যেকোনও চরিত্রেই অঙ্কুশ শিল্পী হিসেবে তাঁর জাত চিনিয়েছেন। 'ভিলেন' (Villain) ছবিতে জয় এবং রাজা হিসেবে করেছেন দ্বৈত চরিত্রে অভিনয়ও।
অঙ্কুশের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও সামাজিক মাধ্যমে কম চর্চা হয় না। কারণ তাঁর প্রেমিকা ঐন্দ্রিলা সেন টেলি জগতের অন্যতম জনপ্রিয় মুখ। দুজনের সম্পর্কের বয়স দশ বছরের বেশি হলেও, তাঁদের আপাতত হাতে গোনা কয়েকটি ছবিতেই একসঙ্গে দেখা গেছে। 'ম্যাজিক' (Magic)ছবিতে প্রথম অঙ্কুশের বিপরীতে অভিনয় করেন ঐন্দ্রিলা। এছাড়াও মাস কয়েক আগে মুক্তিপ্রাপ্ত 'লাভ ম্যারেজ' (Love Marriage) ছবিতে জুটি বাঁধেন এই 'অফ স্ক্রিন' যুগল। বলা বাহুল্য, পর্দার বাইরের মতই পর্দার ভেতরেও তাঁদের রসায়নে মজে ওঠেন তাঁদের অনুরাগীরা।
২০১৯ সালে বিরসা দাশগুপ্তের পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছিল 'বিবাহ অভিযান' (Bibaho Obhijaan)। অঙ্কুশ ছিলেন অন্যতম মুখ্য চরিত্রে। এই ছবির দ্বিতীয় ভাগ 'আবার বিবাহ অভিযান' (Abar Bibaho Obhijaan) মুক্তি পেয়েছে সম্প্রতি।
অঙ্কুশের ঝুলিতে পুরস্কারের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ২০১১ সালে নবাগত তারকা এবং সেরা নর্তক হিসেবে 'কেল্লাফতে' ছবির জন্য পুরস্কার পান তিনি। এছাড়া নুসরাত জাহান এবং মিমি চক্রবর্তীর বিপরীতে অভিনয় করে একাধিক বার সেরা জুটির শিরোপায় সম্মানিত হয়েছেন অঙ্কুশ। ২০২৩ সালে অঙ্কুশ অভিনীত প্রথম ওয়েব সিরিজ 'শিকারপুর' (Shikarpur) এনে দিয়েছে তাঁকে সেরা অভিনেতার পুরস্কার।
অভিনয়, নাচের সঙ্গে অঙ্কুশ প্রশিক্ষণ নেন মার্শাল আর্টেরও। বলিউড অভিনেতা টাইগার শ্রফ আর তিনি একই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা, বলিউডের একটি ছবির জন্যও সুযোগ আসে অঙ্কুশের কাছে। স্বয়ং আমির খান অভিনীত 'লাল সিং চাড্ডা' এ একটি চরিত্রের জন্য অঙ্কুশকে নির্বাচন করা হয়। কিন্তু এই ছবি ছিল একটি হলিউড ছবির অনুকরণে নির্মিত। তাই বলিউডে প্রথম ছবি হিসেবে, অন্য ছবির রিমেকে অভিনয় করতে চাননি এই টলি-তারকা।
এই মুহূর্তে অঙ্কুশকে দেখা যাচ্ছে জনপ্রিয় নৃত্যানুষ্ঠান 'ডান্স বাংলা ডান্স' এ (Dance Bangla Dance) সঞ্চালকের ভূমিকায়। তাঁর আগত কাজগুলির মধ্যে রয়েছে 'মৃগয়া', 'মির্জা', 'ভয়', 'মন খারাপ' প্রভৃতি। সম্প্রতি 'মহানায়ক' সম্মানে ভূষিত হয়েছেন অভিনেতা।