"আমি যাকে খুঁজে মরি, সে তো আমার বালির ঘড়ি", ঠিক এইভাবেই একটি বালির কণার মত সময়ের সঙ্গে, জড়িয়ে থাকার মানুষেরাও উদ্বায়ী হয়ে যায়। পড়ে থাকে কেবল স্মৃতি। থেকে যায় মুহূর্তেরা। কালের নিয়মে শৈশবের প্রথম প্রেম বিলীন হয়ে যায়, কিন্তু তাঁকে নিয়ে এক রঙিন সংসারের প্রথম দেখা স্বপ্নগুলো যেন আজীবন স্মৃতির বোঝাকে ভারী করে তোলে। যেমন হয়েছে বৃদ্ধা ইন্দুবালার ক্ষেত্রেও। যাঁকে বর্তমানেও তাঁর অতীতের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে। এমনই এক দৃশ্যপট অঙ্কিত হয়েছে 'ইন্দুবালা ভাতের হোটেল' (Indubala Bhaater Hotel) সিরিজের "দেহতরী" (Dehotori) গানে।
নারী দিবসের দিন অভিনেত্রী (Tollywood Actress) শুভশ্রী গাঙ্গুলী (Subhashree Ganguly) অভিনীত এই সিরিজ মুক্তি পেলেও, সম্পূর্ন গানটি মুক্তি পেল সম্প্রতি। যাঁরা ইতিমধ্যে সিরিজটি দেখেছেন, তাঁরা ঠিক এই গানটির অপেক্ষাতেই ছিলেন। "দেহতরী" গানটি একটি ভাটিয়ালি গানের ওপর ভিত্তি করে সিরিজের প্রয়োজনে নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। মূলত নদীমাতৃক দেশে ভাটিয়ালি গানের প্রচলন ছিল। যেমন বাংলাদেশে এই গানগুলি গাঁথা হত সামাজিক বিভিন্ন যাপনকে কেন্দ্র করে। অবশ্যই দেহতত্ত্বও থাকত এই গানের অন্যতম মূল ভিত। তৎকালীন নারীদের জীবন-যন্ত্রণা, প্রেম, বিচ্ছেদকে কেন্দ্র করে গানগুলির কথা বুনতেন শিল্পীরা। আলোচ্য সিরিজে ইন্দুবালা একজন 'রিফিউজি' নারী। জীবনসংগ্রামের জন্য পূর্ববঙ্গ থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসে বেছে নিয়েছেন তাঁর রন্ধন কলাকে। অল্প বয়সে বৈধব্যকে নিত্যসঙ্গী করলেও, তাঁর স্মৃতিতে এখনও পূর্ববঙ্গের ধানক্ষেত জুড়ে খেলে বেড়ায় কিশোরী ইন্দুবালা এবং তাঁর প্রেমিক।
"দেহতরী" গানটি জুড়ে ফুটে উঠেছে ইন্দুবালার পুরাতন স্মৃতি। তাঁর জীবনের বালির ঘড়িতে আর কয়েকটি বালির কণা অবশিষ্ট রয়েছে। কিছুদিন পর তারাও নিচের প্রান্তে ভরে উঠে, ওপরের প্রান্তকে শুন্য করে তুলবে। অর্থাৎ জীবনের শেষ প্রান্তে রয়েছেন ইন্দুবালা। তবুও এখনও পূর্ব স্মৃতিতে বেঁচে থাকেন তিনি। সেই স্মৃতিকেই জীবনের সত্য ভাবেন এই বৃদ্ধা। তাঁর এই স্মৃতি রোমন্থনে সামিল হয়েছেন দর্শকও। ইন্দুবালার অতীতে মিশে গেছেন তাঁরা। তাই তো সিরিজে গানটির সামান্য স্বাদ পেলেও মন ভরেনি তাঁদের। সম্পূর্ন গানটি মুক্তি পেতেই আবেগপ্রবণ হয়ে উঠেছেন শ্রোতারা। স্বয়ং পরিচালক দেবালয় ভট্টাচার্যের (Debaloy Bhattyacharya) কথায়, চক্রপানি দেবের (Chakropani Dev) কণ্ঠে, গানটি যেন সকলের হৃদয়ে গেঁথে গেছে। কমেন্ট বক্স জুড়ে শুরু হয়েছে বাংলা গানের জয়জয়কার।