আরও একটি বসন্ত পেরিয়ে ৩৪-এ পা দিলেন অরিজিৎ সিং। মন খারাপ হোক বা কিংবা আনন্দ, যাকে ছাড়া এখনকার জেনারেশন কিছু ভাবতেই পারে না, তিনি হলেন এক এবং একক অরিজিৎ সিং। তবে শুধু কী নবীন প্রজন্মরাই তাঁকে ভালোবাসেন? নাহ! তা একেবারেই নয়। বরং আট থেকে আশি সকলেই তাঁর গান ভালবাসেন। তবে এত ভক্ত থাকতেও বরাবরই ইন্ডাস্ট্রির লাইমলাইট থেকে একদম দূরে থাকেন অরিজিৎ।
তবুও মুর্শিদাবাদের এই ছেলেকে নিয়ে মানুষের উত্তেজনার শেষ নেই। কিন্তু তবুও তাঁর জীবন সম্পর্কে জানতে উৎসুক তাঁর অনুরাগীরা, আর তাই আজ কিছুটা হেঁটে দেখা যাক অরিজিতের জীবনের কিছুটা। অরিজিৎ সিং, টলিউড থেকে বলিউড সবেতেই একনামে আমরা যাকে চিনি। বিখ্যাত এই গায়ের জন্ম ১৯৮৭ সালের ২৫শে এপ্রিল মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে। তাঁর বাবা পাঞ্জাবী, কিন্তু মা বাঙালি হিন্দু ছিলেন। আর তাই ছোটো থেকেই বাংলার প্রতি টান রয়েছে তাঁর। বাংলা ভাষা, বাংলা গান, সবই রপ্ত তাঁর। এই কারণে ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা নয়, বরং গানের প্রতি মোহ ছিল অরিজিতের।
মাত্র তিন বছর বয়স থেকেই শুরু হয় তাঁর সঙ্গীত চর্চা। এরপর ধ্রুপদী সঙ্গীত থেকে শুরু করে রবীন্দ্র সঙ্গীত, ক্লাসিক্যাল, এমনকি পপ গানেরও তালিম নিয়েছেন তিনি। ছোটো থেকেই গুলাম আলি খাঁ, জাকির হুসেন, উস্তাদ রশিদ খান, আনন্দ চট্টোপাধ্যায়ের মতো দিকপাল সঙ্গীত শিল্পীরাই হয়ে ওঠেন তাঁর আদর্শ।
অরিজিৎ প্রথম নজরে আসেন ছোটপর্দার গানের রিয়্যালিটি শো ' ফেম গুরুকুল'-এ অংশগ্রহণের মাধ্যমে। যেই সময়টা ছিল ২০০৫, এই রিয়্যালিটি শো'তে না জিততে পারলেও অরিজিতের প্রতিভা নজর কেড়েছিল অন্যদের। এই শো'তে ষষ্ঠ হয়েছিলেন অরিজিৎ। এরপরে এই রিয়্যালিটি শো থেকে প্রাপ্ত টাকা দিয়েই মুম্বইতে রেকর্ডিং স্টুডিও খোলেন অরিজিৎ। সঙ্গীত প্রযোজনার পাশাপাশি করেছেন রেডিও, বিজ্ঞাপনে সঙ্গীত পরিচালনার কাজও। কেরিয়ারে প্রথম ব্রেক পান ২০১১ সালে ‘মার্ডার টু’ ছবিতে ‘ফির মহব্বত করনে চলা’ গান দিয়ে।
এরপর ‘আশিকী টু’ ছবিতে ‘তুম হি হো’ গানের মাধ্যমেই খুব খ্যাতিলাভ করেন অরিজিৎ। সকলের মুখেই গুন গুন হতে থাকে এই গান। এই গানের জন্য পেয়েছিলেন ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডসও। এরপর তাঁকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক হিট গান উপহার দিয়েছেন তিনি দর্শককে। একাধিক বিখ্যাত পরিচালকের সঙ্গে গান করেছেন তিনি। এমনকি সঞ্জয় লীলা বনশালির ছবি ‘রাম লীলা’তে ‘লাল ইশক’ হোক বা ইমতিয়াজ আলির ছবি ‘তামাশা’র ‘কিউ কি তুম সাথ হো’, সব গানেই মুগ্ধ হয়েছেন আপামর জনতা।
তবে এরপর অরিজিতের কেরিয়ার ভালো দিকে এগোলেও ঝড় আসে ব্যক্তিগত জীবনে। ২০১৩ সালে বিয়ে করেন অরিজিৎ সিং। শোনা যায়, তিনি ইন্ডাস্ট্রির কেউ ছিলেন। তবে গুগল হোক কিংবা বলিউডের বাকি সদস্যরা কেউই অরিজিতের প্রথম বিয়ে নিয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারেননি। এরপর বিয়ের এক বছর না কাটতেই ডিভোর্স হয় অরিজিতের। এরপরেই ২০১৪ সালে কাউকে না জানিয়ে তারাপীঠে গিয়ে ছোটোবেলার বান্ধবী কোয়েল রায়কে বিয়ে করেন অরিজিৎ। অনেকেই বলেন, অরিজিৎ এবং কোয়েল দুজন একে অপরকে ভালোবাসতেন। কিন্তু অরিজিতের মুম্বাই চলে আসা, এবং সেই সময় তখনও বর্তমানের মতোন পরিচিতি না পাওয়ার দরুন কোয়েলের বাড়ি থেকে অরিজিতের জন্য অপেক্ষা করতে চায়নি। এরপর কোয়েলের অন্যত্র বিয়ে হয়, কিন্তু সে সম্পর্ক টেকেনি। পরে অবশেষে অরিজিৎ এবং কোয়েলের বিয়ে হয়। বর্তমানে তাঁরা তিন সন্তানকে নিয়ে সুখে সংসার করছেন।