রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Rajib Banerjee) তৃণমূল কংগ্রেসে (TMC) প্রত্যাবর্তন ঘিরে রাজ্য-রাজনীতি সরগরম। দলত্যাগের জন্য জনসমক্ষে নিজেই জানালেন, "আমি লজ্জিত, অনুতপ্ত, ভুল স্বীকার করছি।" আবার কখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে প্রণতি জানিয়ে বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেবী, গোটা ভারতের মা।" বিজেপির তরফেও কম কটাক্ষ আসেনি। বিজেপি নেতা অনুপম হাজরার প্রতিক্রিয়া 'পাপ বিদায় হল' কিংবা বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ এক ফেসবুক বার্তায় পরোক্ষে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে 'দালাল' বলেই চিহ্নিত করেছেন। এবার সেই বাক্ যুদ্ধে জড়াতে দেখা গেল তৃণমূল কংগ্রেসের তরুণ নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যকে। কিন্তু কার সঙ্গে? সিপিএমের একজন তরুণ তুর্কি শতরূপ ঘোষের সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে হল কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির লড়াই!
ঠিক কী কাণ্ড ঘটেছিল? চলতি বছরের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্-কালে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে আসার হিড়িক লেগেছিল। তৃণমূল কংগ্রেসের অসংখ্য হেভিওয়েট নেতা রাতারাতি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। এরপরই তৃণমূল কংগ্রেসের তরুণ নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন, "গদ্দারেরা ফিরে এলে আমি তৃণমূল ভবনের সামনে শুয়ে থাকব।" এরপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে গত কয়েক মাসে। ফের বিপুল ক্ষমতা নিয়ে সেই তৃণমূল কংগ্রেসই রাজ্যে সরকার গঠন করেছে। একে একে তৃণমূল কংগ্রেসের দলবদলুদের 'ঘরওয়াপসি'-র ঘটনা ঘটেছে। যার সর্বশেষ সংযোজন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসে প্রত্যাবর্তনে সিপিএমের তরুণ নেতা শতরূপ ঘোষের এক ফেসবুক পোস্টে প্রতিক্রিয়া, "ওরে, একটা কচি ছেলে দরজার বাইরে শুয়ে আছে। আর কতজন পেটের ওপর দিয়ে মাড়িয়ে যাবি?" এ কটাক্ষ যে পক্ষান্তরে দেবাংশু ভট্টাচার্যকেই তা বলাই বাহুল্য। এ ঘটনার পর দেবাংশু ভট্টাচার্যও কম যান না। তিনি ফেসবুকেই এর প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন দীর্ঘ বক্তব্য।
এই বাক্-যুদ্ধে দেবাংশু ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, "গদ্দারেরা ফিরলে আমি তৃণমূল ভবনের সামনে শুয়ে থাকব বলেছিলাম। আবেগে বলেছিলাম। সেই সময় দাঁড়িয়ে কর্মীদের উৎসাহ দেখে বলাটা প্রয়োজন ছিল এবং বিশ্বাস থেকেই বলেছিলাম। কারণ তখন যন্ত্রনাটা কাঁচা ছিল। ঠিক যেমন "গলি গলি মে শোর হ্যায়, রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়" বলাটাও সিপিএমের সেই সময় প্রয়োজন ছিল, তার পরেও কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে হয়েছিল পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে।" এখানেই শেষ নয়, তিনি আরও বলেছেন, "আমিতো তৃণমূল ভবনের সামনে শুয়ে পড়ছি, উঠে পড়ছি.. আমাদের দলের অফিস আমাদের মন্দির। আবেগ, অভিমান, কষ্ট, ব্যথা, ভালোবাসা সবটাই দলের মধ্যে। কিন্তু বঙ্গ সিপিএমের আমাকে ছাড়া চলেনা। ভগবান বাই চান্স আমাকে মিসকল মেরে তাড়াতাড়ি ডেকে নিলে কোন রকমে শিবরাত্রির সলতের মত ফেসবুকে বেঁচে থাকা সিপিএমটাও উঠে যাবে! তাদের কচি লেনিন, চৌবাচ্চা স্তালিনরা কর্মহারা হবে।"
এখানেই শেষ নয়, তৃণমূল কংগ্রেসের এই তরুণ নেতা পক্ষান্তরে সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষকেও যে কটাক্ষ করেছেন, তা বলাই বাহুল্য। তিনি সেই পোস্টেই লিখেছেন, "তৃণমূল কংগ্রেস ভবন কসবা বিধানসভায় অবস্থিত। সেখানে একজন কচি লেনিন সেই যে ১৫ বছর ধরে শুয়ে আছে, আর উঠতেই পারছে না! কেউ তার গায়ে ইটালিয়ান তেল ঢালুন প্লিজ, একটু উঠে দাঁড়াক..." এই 'কচি লেলিন' যে শতরূপ ঘোষকেই কটাক্ষ করে প্রত্যুত্তর তা বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই স্যোসাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সব মাধ্যমেই উঠেছে তুমুল সমালোচনার ঝড়। আর সামাজিক মাধ্যমে তো মিমের বন্যা!