হাজার হাজার ভুয়ো রেশন কার্ডের মতো এবারে শুরু হয়েছে লক্ষীর ভাণ্ডারের ভুয়ো সুবিধাভোগীর প্রাদুর্ভাব। পুজো অনুদান প্রকল্পে একলাফে ১০ হাজার টাকা বাড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সরকারি মঞ্চ থেকে উদ্যোক্তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন সেই একই মঞ্চে তিনি ঘোষণা করলেন, রাজ্যের ভাড়ার কিন্তু শূন্য। আর রাজ্য অর্থনীতির এই অবস্থার প্রভাব পড়তে চলেছে লক্ষীর ভান্ডার এর উপর। ভুয়ো প্রাপক সনাক্ত করে ওই প্রকল্পে শুরু হয়েছে দুর্নীতি প্রতিবিধান।
নবান্ন সূত্রে খবর, পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ১.৬ কোটি পরিবার ইতিমধ্যেই লক্ষীর ভান্ডারের সুবিধা পেতে শুরু করেছেন। তবে এই প্রকল্পের ব্যাপারে একেবারে হাত খোলা না হয়ে এবারে এই প্রকল্প নিয়ে কিছুটা চিন্তাভাবনা করতে শুরু করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই জনমুখী প্রকল্পের একজন শীর্ষকর্তা বলছেন, 'মহিলাদের স্বনির্ভর করার এই সামান্য টাকার প্রকল্পের উপরে দুর্নীতির লম্বা ছায়া পড়তে শুরু করেছে। তাই সেই দুর্নীতি রুখতে এবারে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চলেছে রাজ্য সরকার।'
বিরোধী শিবিরের আশঙ্কা, রাজ্যজুড়ে যেরকম ভাবে শিক্ষা এবং গরু পাচার নিয়ে দুর্নীতি দুর্নীতি হয়েছে লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্প নিয়েও। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, এই লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের দুর্নীতির প্রধান উৎস মূলত জাল শংসাপত্র। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের গৃহিণীদের স্বাবলম্বী করতে মাসিক ১ হাজার টাকা এবং ৫০০ টাকা অনুদান চালু করেছিল সরকার। নিয়ম অনুসারে বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলাদের এই অনুদান পাওয়ার কথা। বরাদ্দের অংক তপশিলি জাতি-উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর মহিলাদের ক্ষেত্রে পরিবারপিছু ১ হাজার টাকা এবং জেনারেল কাস্ট বা সাধারণ শ্রেণীভুক্ত মহিলাদের ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা। অনুদানের শর্ত, প্রাপক মহিলার অন্য কোন উপার্জনের সংস্থান থাকা চলবে না এবং অন্য কোন সরকারি প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা অনুদানের আওতায় আসবেন না।
তবে সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া সত্ত্বেও লক্ষী ভান্ডার প্রকল্পের টাকা দিব্যি নিয়ে চলেছেন বিভিন্ন মহিলা। এমনকি যারা চাকরি করছেন তাঁরাও কিন্তু এই প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণ করছেন। এবারে প্রশ্ন হল, এই ধরনের মহিলার নাম লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের তালিকাভুক্ত হলো কিভাবে? এই প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত একজন কর্তা বলছেন, 'দুর্নীতিটা এতটাই স্পষ্ট।' বিভিন্ন সাধারন শ্রেণীভুক্ত মহিলা তপশিলি জাতি এবং জনজাতির জাল শংসাপত্র দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন। এমন অভিযোগ আছে, ব্যক্তিগত একাউন্ট না দেখিয়ে অনেক মহিলা পরিবারের অন্য সদস্য অনেকের সঙ্গে থাকা অ্যাকাউন্ট দেখিয়ে লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করছেন। আবার প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা একজন কর্তা বলছেন, 'অনেক ক্ষেত্রে মহিলার পরিবারের কেউ নন এমন কারো অ্যাকাউন্টে জয়েন্ট হোল্ডার বা যুগ্মভাবে নাম ঢুকিয়ে টাকা তোলা হচ্ছে। তাহলে প্রশ্ন উঠছে, সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত বা পৌরসভা কি নথিপত্র খুঁটিয়ে না দেখেই তাদের নাম নথিভুক্ত করলেন? নাকি সব দেখেও তারা চোখ বুজে ছিলেন। এই ধরনের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে কিভাবে দুর্নীতি প্রবেশ করল এখন সেটাই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকারের।'