অবশেষে পুরভোটে বেসুরোদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করার পথে হাঁটল তৃণমূল কংগ্রেস। যারা দলের সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে নির্দল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন লড়েছিলেন, কিংবা যারা দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের আত্মীয়দের প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে বহিষ্কার করল তৃণমূল কংগ্রেস। একাধিক অভিযোগে মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের ১৫ জন বিক্ষুব্ধ প্রার্থীসহ ২০ জন নেতা-নেত্রীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে শুধু তৃণমূল একা নয়, একই পথ ধরেছে ভারতীয় জনতা পার্টিও। তারাও এই বিক্ষুব্ধ প্রার্থীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মেদিনীপুরের জেলা তৃণমূলের দুই কো-অর্ডিনেটর মানস ভুঁইয়া এবং অজিত মাইতি আজ দলের দুই সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজয় হাজরা এবং আশিষ হুদাইতকে পাশে বসিয়ে দল বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রীতিমতো হুঙ্কার করতে শুরু করলেন। বিক্ষুব্ধদের দল থেকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করা হয়েছে এই বৈঠকে। এই বহিষ্কৃতদের তালিকায় খড়্গপুরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিবিআই প্রার্থী রীনা শেঠ, ২১, ২৪, ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র পেশ করা জগদম্বা গুপ্তা, তপন প্রধান, সুমিতা দাস এবং ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী জয়া পাল আছেন। অন্যদিকে, জয়া পাল অন্য একটি ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থী জহর পালের সম্পর্কে বৌমা। জহর বাবুর অন্য ছেলে অসিত পাল খড়গপুর শহর যুব তৃণমূল সভাপতি পদে এতদিন ছিলেন। তাকেও নিজের পদমর্যাদা থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। মেদিনীপুর পৌরসভার নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানো ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী এরশাদ আলী, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী অর্পিতা রায় নায়েক এবং তার স্বামী বিশ্বেশ্বর নায়েককে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। এই তালিকায় রয়েছেন ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সোমা মাইতি এবং তার শ্বশুরমশাই হিমাংশু মাইতি, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের অঞ্জলি চৌধুরী এবং তার স্বামী স্বপন চৌধুরী, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের অঞ্জনা রায়, মানস দাস এবং মেদিনীপুরের তাপস দে ও সঞ্জিত অন্ডিয়া।

এছাড়াও ক্ষীরপাই পুরসভার নির্দল প্রার্থী সুনীতি হালদার এবং তার ছেলে মনোজ হালদারকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। চন্দ্রকোনা পুরসভায় নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ওসমান গনি এবং রামজীবনপুর পৌরসভা নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে ছিলেন অসিত সরকার। তাদের দুজনকেও দল থেকে বহিষ্কার করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। সকলের কার্যকলাপ নিয়ে মানস ভুঁইয়া এবং অজিত মাইতি বলছেন, দলে বিক্ষুব্ধ রাজনীতির কোনো জায়গা নেই। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণ করা দলের কার্যকলাপের বিরোধিতা করার সমান। তাই দলে ক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে। তবে শুধু তৃণমূল নয়, বেসুরোদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ভারতীয় জনতা পার্টিও। মেদিনীপুরের সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি তাপস মিশ্র, এদিন মেদিনীপুর এবং খড়গপুর পুরসভার পাঁচজনকে শোকজ করলেন। মেদিনীপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দেবব্রত চক্রবর্তী, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাবেরী মন্ডল, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সুমিতা বেরা, খড়গপুর পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়ালক্ষী এবং ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের চন্দনা সরকারকে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করার জন্য শোকজ করেছে বিজেপি। এছাড়াও এদেরকে আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে শোকজের উত্তর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে হাই কমান্ডের তরফ থেকে।