কথায় আছে, 'সব তীর্থ বারবার গঙ্গাসাগর একবার'। নদী, সমুদ্রবেষ্টিত গঙ্গাসাগরের প্রতিকূল পরিবেশের কারণেই হয়তো এই প্রবাদের প্রচলন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'কপালকুণ্ডলা' উপন্যাসে গঙ্গাসাগরে তীর্থ যাত্রীদের করুণ পরিণতির কথা লিপিবদ্ধ। সময় বদলেছে, গঙ্গাসাগরের মূল ভূখণ্ডের ভৌগোলিক মানচিত্রের বদল ঘটেছে। বদলেছে সামগ্রিক পরিকাঠামোতেও। রাস্তাঘাট, দোকান-বাজারের খোলনলচে বদলে গিয়েছে। তবুও মুড়িগঙ্গা নদীর উপর 'ভেসেল বিপত্তি'-র কোন সুরাহা হয়নি।
মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, মুড়িগঙ্গা নদীর উপর ব্রিজ হোক। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সড়কপথে মানুষের যোগাযোগ সহজেই তৈরি হোক। মানুষের সেই দাবি বাস্তবায়নে উদ্যোগী হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজেই জানিয়ে দিলেন, কেন্দ্রের সাহায্য ছাড়াই সরকার নিজের উদ্যোগেই মুড়িগঙ্গা নদীর উপর সেতু তৈরি করতে চলেছে। আর কেন্দ্রের জন্য অপেক্ষা নয়, নদীর উপর চার লেনের ব্রিজ তৈরি করতে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার।
সূত্রের খবর, আপাতত সেতু তৈরির সিদ্ধান্তে কার্যত শিলমোহর পড়ে গিয়েছে। প্রায় ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সেই সেতু। ২ কিলোমিটার থাকবে নদীর উপর, বাকি ২ কিলোমিটার দুই নদী তীরে। সেতু তৈরিতে আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। ব্রিজ তৈরিতে রাজ্য কোন বেসরকারি সংস্থাকে ৪০ শতাংশ অর্থ দেবে, বাকি ৬০ শতাংশ টোল ট্যাক্স থেকে তুলে দেওয়া হবে। গোটা বিষয়টি রাজ্য সরকারের পূর্ত দফতর দেখভাল করবে। আগামী ২ বছরের মধ্যেই ব্রিজ তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার, সূত্র মারফত তেমনটাই খবর।
এরমধ্যেই রাজ্য-কেন্দ্র সংঘাত চরমে পৌঁছেছে। রাজ্যের অভিযোগ, কেন্দ্র সরকার এই ব্রিজ তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করছে। রাজ্যের দাবি, একাধিকবার অনুরোধ জানিয়েও কোন কাজ হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, কুম্ভমেলার মতোই গঙ্গাসাগর মেলাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ এখানে আসেন। এই ব্রিজ তৈরি হলে 'বিচ্ছিন্ন' সাগর মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সহজেই একীভূত হতে পারবে।