চলতি বছরে করোনা (Corona) পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার ছাত্র-ছাত্রীদের সুরক্ষার কথা ভেবে বাধ্য হয়ে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিল করেছিল। সম্প্রতি এই দুই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। মাধ্যমিকে ১০০ শতাংশ উর্ত্তীন্ন হতে পারলেও, উচ্চমাধ্যমিকে (Higher Secondary Exam) রাজ্যে পাশের হার ৯৭.৭০ শতাংশ। পরীক্ষা না দিয়ে এত সংখ্যক পড়ুয়া উর্ত্তীন্ন না হওয়ায় শুরু হয়েছে বিতর্ক। এইজন্য বৃহস্পতিবার উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর থেকেই বিভিন্ন জায়গায় অশান্তি শুরু হয়েছে। শুক্রবার সেই অশান্তি বৃহত্তর রূপ ধারণ করে। বীরভূম (Birbhum), মুর্শিদাবাদ (Murshidabad), নদীয়া (Nadia), হাওড়া (Howrah) ইত্যাদি জেলার স্কুলের সামনে অকৃতকার্য পড়ুয়া এবং অভিভাবকরা একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ দেখায়। তাঁদের অভিযোগ যে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ ঠিকমত মার্কশিট বানায়নি। অনেক জায়গায় ভুল ভ্রান্তি রয়েছে। সকলকে পাশ করিয়ে দিতে হবে। এমনকি অনেক জায়গায় অভিভাবকরা অভিযোগ জানায় যে স্কুলের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ভালো নাম্বার এলেও, কলা বিভাগে নাম্বার দেওয়া হয়নি। গতকাল কলকাতার স্কুলে ফেল করায় এক পড়ুয়া আত্মহত্যা করার হুমকি অব্দি দেয়।
রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন প্রান্তে উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়াদের বিক্ষোভ নজর এড়ায়নি স্কুল শিক্ষা দপ্তরের। কেন এত সংখ্যক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ফেল করল তা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাসের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। প্রশ্ন করা হয়েছে, তবে কি সংসদের নির্ধারিত ফর্মুলা ত্রুটিপূর্ণ ছিল? আসলে চলতি বছরের মূল্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে একাদশ শ্রেণির প্রাপ্ত নম্বর। এদিকে একাধিক স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা যাতে ভালো নাম্বার পায় তার জন্য একাদশ শ্রেণির খাতা শক্ত হাতে দেখা হয়। ফলে তাতে প্রাপ্ত নম্বর বেশ কম হয়। সেই হিসাবে হয়তো অনেকেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি। ইতিমধ্যেই কোন কোন স্কুলে পড়ুয়ারা বিক্ষোভ জানিয়েছে, সেই রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে স্কুল শিক্ষা দপ্তর।
অন্যদিকে গতকাল থেকেই গোটা বঙ্গ রাজনীতি উত্তাল রয়েছে মহুয়া দাসের ফলাফল ঘোষণার বক্তব্য ঘিরে। আসলে তিনি ফলাফল ঘোষণার সময় প্রথম স্থানাধিকারী রুমানা সুলতানাকে "মুর্শিদাবাদের মুসলিম মেয়ে" বলে অভিহিত করে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন। এই বিষয়ে বিরোধী দল কংগ্রেস ও বিজেপি ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে। এবার আজ উচ্চ মাধ্যমিক সংসদ সভাপতির সমালোচনা করলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেছেন, "ধর্ম আমার বিশ্বাস। ধর্ম আমার নিজস্ব। কিন্তু সমাজ ও দেশ আমার অস্তিত্ব। তাকে মুসলিম ছাত্রী বলাটা আমি সমর্থন করি না। অত্যন্ত অন্যায় হয়েছে। ওই মেয়েটি তার মেধা দিয়ে সমস্ত পথ অতিক্রম করেছে। মেধার ভিত্তিতে প্রথম হয়েছে। ধর্মের ভিত্তিতে নয়।" অবশ্য গতকালই মহুয়া দাস বিতর্ক প্রসঙ্গে সাফাই দিয়ে বলেছিলেন, "সংসদের ইতিহাসে রুমানা প্রথম যে এতো ভালো রেজাল্ট করেছে। ওকে দেখলে বেগম রোকেয়ার কথা মনে পড়ে। মেয়েটি শিক্ষার রত্ন। আবেগের বশে বলে ফেলেছিলাম। সাংবাদিকরা মেয়েটির সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। তাই কিছু তথ্য দিয়েছিলাম, যাঁতে মেয়েটিকে তাঁরা বুঝতে পারেন। মেয়েটির গৌরব সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চেয়েছিলাম।"