৩০ তারিখ সংঘটিত তিন বিধানসভা কেন্দ্রের ফলপ্রকাশ হল আজ। আর সেই ফলাফলের পুরোটা জুড়েই জয়জয়াকার তৃণমূলের। বিশাল ব্যবধানে তিন কেন্দ্র থেকেই জিত হাসিল করে নিল ‘সরকারপক্ষ’। একনজরে দেখে নেওয়া যাক উপনির্বাচনের ফলাফল।
প্রথমে আসা যাক বহুচর্চিত ভবানীপুর কেন্দ্রের কথায়। এই কেন্দ্রের হেভিওয়েট ফাইটিংয়ের ফলাফল জানতে মুখিয়ে ছিল বাংলা তথা সমগ্র দেশ। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদের অন্যতম পদপ্রার্থী এবং রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়দের ‘প্রেস্টিজ ফাইট’-এর কেন্দ্র ছিল ভবানীপুর। যদিও প্রতিপক্ষের বিজেপি পদপ্রার্থী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল উপনির্বাচনের ফলাফল বেরোনোর আগের দিন পর্যন্ত নিজের জয় নিয়ে বেশ আশাবাদীই ছিলেন, তবে ফল ঘোষণা হতে দেখা গেল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই জিতেছেন। এবং জিতেছেন রেকর্ড ৫৮,৩৮৯ ভোটে। ২০১১-র ঐতিহাসিক ব্যবধানে জেতা নিজের রেকর্ডকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে তাঁর সর্বশেষ জয়।
যদিও এহেন পরিস্থিতিতেও ভবানীপুরের জয়ের আলো কোনোভাবেই ফিকে করতে পারেনি মুর্শিদাবাদের দুই কেন্দ্র জঙ্গিপুর এবং সামশেরগঞ্জে তৃণমূলের নির্বাচনী প্রদর্শনকে। জঙ্গিপুর কেন্দ্রে বাম প্রার্থীর মৃত্যুর জন্য বিধানসভা নির্বাচন সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। নির্বাচনের আগে প্রয়াত হন সামশেরগঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থীও। সে জন্য সেই কেন্দ্রেও তাৎক্ষণিকভাবে হয়নি ভোটগ্রহন প্রক্রিয়া। ৩০ তারিখ উপনির্বাচন ছিল ওই দুই কেন্দ্রেও। তাতেও ‘রেকর্ড ব্রেকিং’ প্রদর্শন তৃণমূল কংগ্রেসের।
জঙ্গিপুরের তৃণমূল পদপ্রার্থী জাকির হোসেন জিত হাসিল করেছেন ৯২ হাজার ৩৬৫ ভোটের ব্যবধানে। ২০১৬ সালেও ওই কেন্দ্র থেকে লড়াই করেন তিনি। সেইবারে তাঁর জয়ের ব্যবধান ছিল ২০ হাজারের সামান্য বেশি। তবে এবার তাঁর জয়ের ব্যবধান ছাপিয়ে গেছে আগের সব রেকর্ডকে। মোট ১ লক্ষ ৩৫ হাজার ৯৮৫ টি ভোট পেয়েছেন জাকির। দ্বিতীয় থাকা বিজেপির সুজিত দাস পেয়েছেন ৪৩ হাজার ৬২০ টি। আগের বারের থেকে এবারে জাকির হোসেনের জয়ের ব্যবধান সাড়ে চারগুনেরও বেশি। অভাবনীয় এই জয়ের পর জাকির হোসেনের বক্তব্য, এই রায় জনগনের। মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের ধারায় মানুষ বিশ্বাস রেখেছেন বলেই এই ফল।
অপরদিকে সামশেরগঞ্জ বিধানসভা থেকে তৃণমূল প্রার্থী আমিরুল ইসলাম জিতেছেন ২৬ হাজার ৩৭৯ ভোটে। আমিরুলের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ৯৬ হাজার ৪১৭ টি। অন্য দিকে দ্বিতীয় স্থানে থাকা জইদুর রহমান পেয়েছেন ৭০ হাজার ৩৮ টি ভোট। উল্লেখ্য, ২০১৬র থেকে এবারে জয়ের ব্যবধান বাড়িয়েছেন আমিরুলও। জয়ের পর আমিরুলের বক্তব্য, মানুষ ভোট দিয়েছেন উন্নয়নের পক্ষে।
তিন কেন্দ্রেই বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভের পর বিজয়ী প্রার্থীরা ভাসেন শুভেচ্ছার বন্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুভেচ্ছা জানাতে দেখা যায় সর্বভারতীয় স্তর থেকে। উপনির্বাচনে জয়লাভের পর বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ২১৩ থেকে বেড়ে দাঁড়াল ২১৫ টি তে। একক দল হিসাবে বঙ্গের রাজনীতিতে যা বিরল। ফলে এই মুহূর্তে তৃণমূল কংগ্রেসের আত্মবিশ্বাস যে তুঙ্গে, সে কথা বলতে কোনও অবকাশ রাখে না। আপাতত তৃণমূলের অশ্বমেধের ঘোড়া অপ্রতিরোধ্য। পরবর্তী ঠিকানা, ’২৪-এর লোকসভা নির্বাচন।