বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন, আর মধ্যেই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে রাজনীতি গহ্বরে টানছে গেরুয়া শিবির। একের পর এক কুরুচিকর মন্তব্যের মধ্যেই ফের তাঁর বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। নাম না করেই দিলীপ ঘোষ বললেন, "দেশের মানুষের দুঃখ-কষ্টে যিনি নেই তাঁর কাছ থেকে কোনও নীতি কথা নয়।"
স্বাভাবিকভাবেই এই বির্তকিত মন্তব্যের জেরেই শুরু হয় রাজনৈতিক তরজা। এখানেই শেষ নয়, মঙ্গলবার দিলীপ ঘোষ আরও বলেন, "অমর্ত্য সেন বলেছেন, লাভ জিহাদের মধ্যে জিহাদ থাকতে পারে না। ধর্মান্তরকরণ বিরোধী যে আইন বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে আছে, তা অসাংবিধানিক। উনি তো তিনবার তিন ধর্মে বিয়ে করেছেন। তাঁর তো কথা বলার নৈতিক অধিকার নেই। যিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন, দেশের মানুষের দুঃখ–কষ্টে নেই, তাঁদের নীতি কথা শুনতে আমরা প্রস্তুত নই।"
এই মন্তব্যের পরেই সৌগত রায় বলেন, "অমর্ত্য সেনের গুরুত্ব বোঝা দিলীপ ঘোষের পক্ষে সম্ভব নয়।" অন্যদিকে মহুয়া মৈত্র বলেন, "কে কাকে বিয়ে করবে, কাকে ভালবাসবে, তা নিয়ে কথা বলার অধিকার অসুস্থ, বিকৃতমনস্ক আরএসএস গুণ্ডাদের কে দিয়েছে? এই সব নিয়ে আলোচনার উপর দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ভোটে জিততে চায়? পারলে উন্নয়ন নিয়ে কথা বলুন হাফ প্যান্ট পরা, হাফ বুদ্ধিহীন ধর্মান্ধরা।"
প্রসঙ্গত, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের শান্তিনিকেতনের 'প্রতীচী'র মধ্যে বিশ্বভারতীর নিজস্ব জমি ঢুকে গিয়েছে, এই অভিযোগ করে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে অর্মত্যবাবুর দাবি, "প্রায় ৮০ বছর আগে শান্তিনিকেতনের বাড়ির 'প্রতীচী' তৈরি হলেও কোনওদিন অনিয়মের কথা জানানো হয়নি। এবারও তাঁকে চিঠি দিয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কিছু জানানো হয়নি। শুধুমাত্র সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।"
এরপরে দিলীপ ঘোষের মন্তব্যের উত্তরে সোমবার বস্টন থেকে একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে অমর্ত্য সেন বলেন, "এটা খুবই চিন্তার বিষয়। জীবনযাপনের অধিকার তো মৌলিক অধিকার হিসেব স্বীকৃত। মানুষই নিজের ধর্ম বদলে অন্য ধর্মগ্রহণ করতে পারেন। সেটা সংবিধান স্বীকৃত। তাই এই আইন অসাংবিধানিক।"
অমর্ত্য সেন আরও বলেন, "সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ চাওয়া উচিত। এই আাইনকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা উচিত। ভারতের ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত নেই। এমন আইন সংবিধানকেই অপমান করে।"