বনফুল ছিলেন 'পেশায় চিকিৎসক, নেশায় সাহিত্যিক'। আর ইনি পেশায় শিক্ষক হলে কী হবে, এই বছর কয়েকের মধ্যেই সাধারণ মানুষের কাছে সুন্দরবনের 'ম্যানগ্রোভ ম্যান' (Mangrove Man) নামে পরিচিত। তৈরি করেছেন 'পূর্বাশা ইকো হেল্পলাইন সোসাইটি'। সাধারণ কিছু মানুষকে সঙ্গে নিয়ে গত কয়েক বছরে সাড়ে ছ লক্ষেরও বেশি ম্যানগ্রোভ রোপণ করেছেন। নিজের পেশার পাশাপাশি সমানভাবে মানুষের পাশে থাকার তাগিদে কিংবা পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজনে বারবার ছুটে যান প্রত্যন্ত সুন্দরবন অঞ্চলে। নিজের জন্মস্থান সুন্দরবনের মাটি, নোনাজল কিংবা ম্যানগ্রোভ অরণ্যের ঘেরাটোপে তিনি উজ্জ্বল এক নক্ষত্র।
উমাশঙ্কর মন্ডল, পেশায় ভূগোলের শিক্ষক তিনি। পড়ুয়াদের পাঠ দেন ভূগোল ও পরিবেশের নিবিড় সম্বন্ধের কথা। কেবল চার দেওয়ালের গন্ডিবদ্ধ কেজো পড়াশোনা নয়, হাতে-কলমে নিজেই তৈরি করে ফেলেছেন এক নতুন দৃষ্টান্ত। দিন কয়েক আগেই প্রথম কোন বাঙালি ভারতীয় ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ (WWF) -এর ডঃ রিমিংটন পুরস্কার পেয়েছেন। পরিবেশ রক্ষার জন্য ২০১৮ সাল থেকেই এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। উমাশঙ্কর মন্ডলের (Umashankar Mandal) এই কৃতিত্বে খুশি সুন্দরবনের প্রান্তিক মানুষ। আর বাঙালির এই কৃতিত্বে গর্ব তো স্বাভাবিক!
আগামী ১২ জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দের জন্মতিথি, সঙ্গে জাতীয় যুব দিবসও বটে। পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্য নিয়ে ফের সুন্দরবনে প্রায় ১০ হাজার ৫০০ ম্যানগ্রোভ রোপণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সুন্দরবনের 'ম্যানগ্রোভ ম্যান' উমাশঙ্কর মন্ডল। পাশাপাশি শীতে কাবু অসহায় মানুষদের পাশে থাকতে কম্বল, চাদর বিতরণ, গ্রামীণ মহিলাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ন্যাপকিন প্রদান এবং বাচ্চাদের মুখে হাসি ফোটাতে শিখনসামগ্রী তুলে দিতে চান তিনি। পরিবেশ রক্ষার তাগিদে অন্তত ১০০ টি ম্যানগ্রোভ চারাগাছের দায়িত্বের আবেদন করেছেন তিনি। সঙ্গে মানুষের পাশে থাকতে চাইলে সাদর আমন্ত্রণ।
সুন্দরবনের বিপন্ন পরিবেশে দিন দিন নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের সম্ভার। যেহারে বৃক্ষনিধন কিংবা প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে জঙ্গল ধ্বংস হচ্ছে, তাতে কোন একদিন জলের অতল গভীরে তলিয়ে যাবে সুন্দরবন। অধিকাংশ বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, সমুদ্রে জলতল ক্রমশ বাড়ছে। ফলে সমুদ্র, নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলি বিপদসীমায়, সুন্দরবনও সেই তালিকায়। এমনধারা চলতে থাকলে 'ভারতের ফুসফুস' একদিন হয়তো সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাবে। এমন অবস্থায় শিক্ষক উমাশঙ্কর মন্ডলের এই কর্মকান্ড সত্যই প্রশংসনীয়, বলছেন একাংশ।