তৃতীয়বার বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করার পর প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) গেলেন তাঁর আবেগের আবাসস্থল হুগলির সিঙ্গুরে (Singur)। কৃষকের জমি ফেরত পাবার জন্য সিঙ্গুরে যে মন্দির তিনি তৈরি করেছিলেন সেই সন্তোষী মাতার মন্দিরে গিয়ে পূজা দিয়ে সফরের সূচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই সভা মঞ্চ থেকে সিঙ্গুরে কৃষি এবং শিল্পের জন্য একাধিক বিকাশমূলক ঘোষণা করলেন তিনি। সিঙ্গুর অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রি-সহ একাধিক শিল্পে বিনিয়োগ নিয়ে বাংলার জনগণকে আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পাশাপাশি উত্তরপাড়ায় কোচ ফ্যাক্টরি এবং ডানকুনিতে ফ্রেড করিডোরের ঘোষণাও করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
শুক্রবার সিঙ্গুরের বাজেমেলিয়া গ্রামের সন্তোষী মন্দিরে পুজো দিয়ে সফর শুরু করলেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজের হাতে শিশুদের প্রসাদ বিতরণ করলেন তিনি। এরপর এই বাজেমেলিয়া হাসপাতালের মাঠে অস্থায়ী সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, এই সন্তোষী মাতা মন্দিরে প্রায়ই আসেন তিনি। সিঙ্গুরে যখন জমি আন্দোলন নিয়ে উত্তাল সময়, সেখান থেকেই তাঁর জীবনে সন্তোষী মাতা জায়গা করে নিয়েছে। সিঙ্গুরে যখন জমি আন্দোলনের সময় তিনি অনশন শুরু করলেন, সেই সময় থেকেই সন্তোষীর ব্রত শুরু করেছিলেন তিনি। কৃষকেরা জমি ফিরে পেলে একটা ছোট্ট মন্দির বানানোর কথা তিনি ভেবেছিলেন। সেই কথা বলতে গিয়ে তিনি বললেন, "বেচারাম মান্নাকে বলেছিলাম আমার ছোট জায়গা লাগবে। কৃষিজমি আন্দোলনে জয় এসেছে। মানুষ জমি ফেরত পেয়েছে। আমি এখানে বড় মন্দির তৈরি করব। তারপর ২০১৯ সালে এই মন্দির তৈরি করা হয়েছে।"
এর পরেই সিঙ্গুর থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে কামারকুন্ডু রেল ওভার ব্রিজ উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। সিঙ্গুরের উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, 'আগামী দিনে কোটি কোটি টাকার শিল্প আসবে এই জমি আন্দোলনের মাটিতে। ডানকুনি থেকে বর্ধমান পর্যন্ত শিল্পের সম্ভাবনা তৈরি করার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। ডেডিকেটেড রেল লাইন তৈরি করা হবে এই শিল্পের জন্য। ওড়িশার মত দিঘাতেও একটি জগন্নাথ মন্দির তৈরি হবে। দিঘাতে গিয়ে অনেকেই পুজো দিতে চান। তাই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে দিঘাতেও একটি জগন্নাথ মন্দির তৈরি করা হবে।'
তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই সমস্ত ঘোষণা শেষ হওয়ার পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে কটাক্ষ বান ছুঁড়ে দিয়েছেন বিজেপি এবং সিপিএমের নেতাবৃন্দ। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বললেন, "গত ১০ বছর ধরেই শিল্প আর কৃষি ইন্ডাস্ট্রির কথা শুনে যাচ্ছি।" তবে, কামারকুন্ডু রেলওয়ে ওভার ব্রিজ প্রকল্পে রেল এবং রাজ্য একসঙ্গে কাজ করছে। তাই ওভারব্রিজ রেলের কোন প্রতিনিধি ছাড়া শুধু মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করতে পারেন না, হুগলির জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে এমনটা জানিয়েছে রেল। তার পরেও শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একা ঐ ওভারব্রিজ উদ্বোধন করায় শমীক ভট্টাচার্য বললেন, "এ ধরণের ওভার ব্রিজ তৈরি করতে হলে টাকা দেয় রেল। এটা কেন্দ্রীয় সরকারের টাকা। অন্যদিকে অ্যাপ্রচ রোড তৈরি করতে টাকা খরচ করে রাজ্য সরকার। যে প্রকল্পের উদ্বোধন আজ মুখ্যমন্ত্রী করেছেন, নীতিগতভাবে সেটা তিনি করতে পারেন না।"
সিঙ্গুরের কৃষিভিত্তিক শিল্প নিয়ে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মোঃ সেলিম বলেছেন, 'চালাকি করে, মিথ্যাচার করে বেশি দিন চালানো যায় না। সিঙ্গুরে কি কৃষিভিত্তিক কোন ইন্ডাস্ট্রি হবে! এগ্রিকালচার পুরোটাই তো নষ্ট হয়ে গেছে সারা রাজ্যে। কৃষকেরা ফসলের দাম পাচ্ছেন না। আলু চাষীরা আলুর দাম পাননি। দক্ষিণবঙ্গে আলু চাষ করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন চাষিরা। আর মুখ্যমন্ত্রী এখন ভাষণ দিচ্ছেন, তিনি নাকি নিয়ে আসবেন কৃষিভিত্তিক শিল্প!'