প্রায় চার দশক আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা ফের বাংলার রাজনীতিতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। রাজ্য বিজেপির (BJP) তরফে আজ গোটা বাংলা জুড়ে পালিত হচ্ছে মরিচঝাঁপি (Marichjhanpi) দিবস। এত বছর পরেও মরিচঝাঁপি হত্যাকাণ্ডের কেন কোন বিচার হল না, সেই দাবি নিয়ে পথে নামছে বিজেপি দলের তফসিলি মোর্চা।
প্রসঙ্গত, মরিচঝাঁপি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে ১৯৭৯ সালের জানুয়ারি মাসে। সেই বছরের জানুয়ারির ২৪ থেকে ৩১-এর মধ্যেই এই ঘটনা ঘটেছিল। রাজ্যে তখন বাম নেতৃত্বাধীন জ্যোতি বসুর সরকার। সদ্য পাকিস্তান থেকে পৃথক হয়ে বাংলাদেশ আলাদা রাষ্ট্র রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। বহু ওপার বাংলার মানুষ এপার বাংলায় এসে আশ্রয় খোঁজেন। কিন্তু হতদরিদ্র, নিম্নবিত্ত মানুষদের অনেকেরই স্থান পশ্চিমবঙ্গে হয়নি। বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ থেকে আগত উদ্বাস্তুদের একাংশ দণ্ডকারণ্যে আশ্রয় নেন। কিন্তু সেখানকার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তাঁদের বেঁচে থাকা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। বাধ্য হয়ে সুন্দরবনের মানুষ বসবাসের অনুপযোগী ছোট্ট একটি দ্বীপ মরিচঝাঁপিতে তাঁরা আশ্রয় নেন। নিজেদের উদ্যোগেই মোটামুটি বাসযোগ্য করে তোলেন চারপাশ। আর তারপরেই নাকি তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের নির্দেশে সেখানে গণহত্যার ঘটনা ঘটে বলে এমন জনশ্রুতি আজও প্রচলিত।
প্রায় চার দশক আগে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা নিয়ে বাংলার রাজনীতিতে ফের চাপানউতোর তৈরি হয়েছে। রাজ্য বিজেপির তরফে রাজ্য জুড়ে পালিত হচ্ছে মরিচঝাঁপি দিবস। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল (Agnimitra Paul) তাঁর ফেসবুক পেজে বলেছেন, "বাঘ নয়, বামফ্রন্ট সরকারই খেলো তাদের। রাতের আঁধারে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হলো মরিচঝাঁপি থেকে। পাঠিয়ে দেওয়া হলো দণ্ডকারণ্যে আবার। আর সেই রাতের আঁধারে কতো লোক মারা পড়লো তা কেউ জানে না। অভিযোগ আছে বস্তায় করে লাশ নিয়ে যাওয়া বাঘের খাদ্য হিসেবে। আর বাকীগুলো ফেলে দেওযা হয় গভীর সমুদ্রে।"
যদিও সিপিএমের এক নেতৃত্বের দাবি, মরিচঝাঁপি নিয়ে যাঁরা অভিযোগ করছেন তাঁদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। বিজেপি বাংলার ইতিহাস, ভূগোল কিছুই জানে না। কোন ইস্যু খুঁজে না পেয়ে বিজেপি এমন করছে। বিষয়টিকে হালকা ভাবে দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। তাঁদের দাবি, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে আদিবাসী ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসাতেই বিজেপির এই ইতিহাসের স্মৃতি রোমন্থন। রাজ্য বিজেপির প্রবীণ নেতা তথাগত রায় এক টুইট বার্তায় বলেছেন, "২৪ জানুয়ারি ১৯৭৯ সালে পুলিশ এবং সিপিআই(এম) গুন্ডারা তাঁদের উপর নেমে গুলি শুরু করে। কেউ কেউ সাঁতার কাটতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কুমির ও হাঙর খেয়ে নেয়। বাকিরা দণ্ডকারণ্যে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। কতজন মারা গেল? কোনো অফিসিয়াল রেকর্ড নেই।"