আর মাঝে মাত্র একদিন। একদিন পর ১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফা নির্বাচন। এই পর্বে ৪ জেলার ৩০ টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলবে। দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের ভোট প্রচারের আজ শেষ দিন। স্বাভাবিকভাবেই সমস্ত রাজনৈতিক দল বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোট প্রচারে ব্যস্ত। তার মধ্যে নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের দিকে দিনভর চোখ থাকল সকলের। জবাব পাল্টা জবাবে নন্দীগ্রাম যেন মহাভারতের কুরুক্ষেত্র। একদিকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভা, অপর দিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহর রোড শো। যেন দুই যুযুধান প্রধান শক্তির মহারণ। অন্যদিকে এই কয়েক দিনের মধ্যেই নন্দীগ্রামের ঘরের মেয়ে হয়ে উঠেছেন সংযুক্ত মোর্চার সিপিআইএম প্রার্থী মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়। যেখানে বিমান বসু সভা করছেন, সায়নদীপ মিত্রের মতো যুব নেতারা মীনাক্ষির পক্ষে কথা বলছেন। সব দিক মিলিয়ে আজ দিনভর নন্দীগ্রাম নন্দীগ্রাম রব উঠল সর্ব স্তরে।
এ কয়েকদিনের মতো আজও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির উদ্দেশ্যে কড়া ভাষায় বক্তব্য রেখেছেন এবং একের পর এক অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেছেন, "বাইরের থেকে গুণ্ডারা আসছে। বিহার, উত্তরপ্রদেশ থেকে গুণ্ডারা আসছে। মেয়েদের উপর অত্যাচার করছে। বহিরাগত গুণ্ডাদের বাংলা থেকে দূর করে দিন।" মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর গাড়ি টাকা বিলি করা হচ্ছে। "টাকা দিলে খরচ করুন, আর ভোটে বিজেপিকে খরচা করে দিন।" উল্লেখ্য, আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাঙাবেড়া শহিদ বেদী থেকে সোনাচূড়া পর্যন্ত রোড শো করেছেন। এরপর একের পর এক জনসভায় যোগ দিয়েছেন এবং বিজেপির উদ্দেশ্যে নানা অভিযোগ এনেছেন। তিনি নন্দীগ্রামের কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, "ওরা (কেন্দ্রীয় বাহিনী) তো আর দু'দিন, তারপর তো পগার পার। তারপর আপনারা থাকবেন, আপনাদের পুলিশ থাকবে - ভয় পাবেন না।"
একই ভাবে বিজেপির আজকের সভায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি তারকার মেলা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ শুভেন্দু অধিকারীর সমর্থনে নন্দীগ্রামে রোড শো করেছেন, জনসভায় অংশ নিয়েছেন। যেখানে তিনি বলেছেন, "নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারী জিতছে। বাংলার মানুষ পরিবর্তন চাইছে। এই পরিবর্তনের জন্য নন্দীগ্রামে মমতা দিদিকে হারালেই বাংলায় আসল পরিবর্তন আসবে।" অমিত শাহর পর অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীও শুভেন্দু অধিকারীর সমর্থনে রোড শো করেছেন। নন্দীগ্রামের মহারণে কোন রাজনৈতিক দল এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে যে নারাজ তা আজকের শেষ মুহূর্তের প্রচারে স্পষ্ট।
নন্দীগ্রামের মাটিতে সংযুক্ত মোর্চার সিপিআইএম প্রার্থী মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায় এই কয়েক দিনে যথেষ্ট সাড়া ফেলে দিয়েছেন। বহু মানুষ ভয় ভেঙে ঘরের বাইরে এসেছেন। নন্দীগ্রাম বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বলা কথাকে ভিত্তি করে রাজ্য তথা জেলা সিপিআইএম নেতৃত্ব নন্দীগ্রামের মাটিতে জোর প্রচারে ব্যস্ত। এদিন নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ড থেকে সোনাচূড়া মহেশপুর হয়ে গোকুলনগর পর্যন্ত এক বিশাল নির্বাচনী শোভাযাত্রা হয়েছে। নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিআইএম প্রার্থী মীনাক্ষি মুখার্জির সমর্থনে এই শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন বামফ্রণ্টের চেয়ারম্যান কমরেড বিমান বসু, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পর্যবেক্ষক কমরেড রবীন দেব, ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক ও কামারহাটি কেন্দ্রের সিপিআইএম প্রার্থী কমরেড সায়নদীপ মিত্র ও সংযুক্ত মোর্চার অন্যান্য বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ। বিমান বসু বলেছেন, "মীনাক্ষি আজকের আগে নন্দীগ্রামের ১৭টি অঞ্চলের মধ্যে ১৫ টি অঞ্চলে প্রচার করেছে। আজ বাকি দু'টি অঞ্চলের কিছু অংশে প্রচার হল। তাতে আশাবাদী যুবনেত্রী মীনাক্ষি জিতছে। নন্দীগ্রাম কাণ্ডের আসল সত্য উদঘাটিত হয়েছে, ষড়যন্ত্রের মুখোশ খুলে গেছে।"
নন্দীগ্রামের মহারণে আজ শেষ লগ্নের প্রচারে দিনভর সমস্ত রাজনৈতিক দল কার্যত যে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ, তা রাজনৈতিক বিশ্লেষক একাংশের মত। সব জল্পনার অবসান ২ মে, তবে দ্বিতীয় দফার নির্বাচনী প্রচারের উত্তাপ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে শেষ হবে, ১ এপ্রিল নন্দীগ্রামের মাটিতে তৈরি হবে যে নতুন এক ইতিহাস তা বলাই বাহুল্য।