আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা আনিস খানের মৃত্যুর ঘটনায় আবারো রাজনৈতিক উত্তাপ চরমে। রবিবার সকালে আনিসের আমতা থানা এলাকার বাড়িতে গেলে আমতা থানার এএসআই এবং পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় মৃতের পরিবারের ও গ্রামবাসীরা। ঘটনায় চরমে ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভ। তারা দাবি জানায়, আনিসকে হত্যা করেছে পুলিশকর্মীরাই, তাই তাদের তদন্তে গ্রামবাসীদের একেবারেই ভরসা নেই। সিবিআই তদন্তের দাবি ওঠে এই মৃত্যু রহস্য নিয়ে।
আমতা থানার সারদা দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা আনিস খানের হত্যা মামলায় আরও ঘনীভূত হচ্ছে রহস্য। শুক্রবার গভীর রাতে চোখের সামনে ছেলেকে খুন হতে দেখেছিলেন বাবা। অভিযোগ উঠেছিল, ওই রাতে মৃত আনিস খানের বাড়িতে চারজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি ঢুকে পড়ে বাড়ির লোককে আনিস এর ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে শুরু করে। আনিসের বাবা, ছেলে বাড়িতে নেই জানালেও তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি লেগে যায়। যেহেতু সকলে পুলিশের পোশাকে ছিলেন তাই মৃতের বাবা খুব একটা বেশি কথা বাড়াতে পারেন নি। এরপর ওই চারজনের মধ্যে একজন আনিসের পরিবারের লোকের লোকের সঙ্গে নিচে থাকে। আর বাকি তিনজন ভিতরে গিয়ে উপরে উঠে আনিসকে মারধর শুরু করে। মৃতের বাবার অভিযোগ, ছেলেকে ছাদ দিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে খুন করে ওই অজ্ঞাতপরিচয় চার ব্যক্তি। তারপরেই ওই চারজন চম্পট দেয়।
কিন্তু, মৃতের পরিবার এবং গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পুলিশকে জানানো হলেও তাদের মধ্যে গড়িমসি দেখা যায়। বহুক্ষণ ঘটনাস্থলে পড়ে থাকে আনিসের রক্তাক্ত দেহ। পুলিশ আসতে দেরি করে প্রায় সাত থেকে আট ঘণ্টা মত। আর পুলিশ এসেই মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে চলে যায়। এমনকি, অভিযোগ উঠেছে পুলিশকে ঘটনার দিনেরপর আর সেখানে দেখাও যায়নি। এমনকি ঘটনাস্থলে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকা চাপ চাপ রক্তের নমুনা পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়নি পুলিশের তরফ থেকে। ফলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দানা বাঁধতে শুরু করে, যার ফলপ্রকাশ রবিবার সকালে।
রবিবার ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছলে তাদেরকে বাড়িতে ঢুকতে দেননি আনিসের পরিবারের সদস্যরা। প্রবল বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। মৃতের বাবা সালেম খান বলেন, 'পুলিশ মেরেছে, পুলিশ আবার কি করবে। আমরা সিবিআই তদন্ত চাই।' যদিও পুলিশের তরফ থেকে সাফাই দেওয়া হয়, কোন অন্য কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে পৌঁছতে কিছুটা দেরি হয়েছিল। প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়ে দেড় ঘণ্টা পর এলাকাছাড়া হয় পুলিশ। আনিসের বন্ধুদের অভিযোগ, বেশ কিছুদিন ধরেই তাকে খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। আনিস পার্ক সার্কাস আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র নেতা ছিলেন। পুলিশকে চিঠি লিখেও এই খুনের হুমকির কথা জানানো হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন আনিসের বন্ধুরা। শুক্রবার এর ঘটনার পরেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল বলে পরিবারের অভিযোগ।
মৃত পড়ুয়ার বাবা সালিম খান দাবি করছেন, শুক্রবার মধ্যরাতে যে কয়েকজন বাড়িতে এসেছিলেন তাদের মধ্যে একজন পুলিশের পোশাক পরেছিলেন এবং তার হাতে ছিল বন্দুক। বাকি তিনজন সিভিক পুলিশের পোশাক পরেছিলেন। অভিযোগ চারতলা থেকে আনিসকে মারতে মারতে তিনতলায় নিয়ে আসেন তারা। তারপর সেখান থেকেই তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন। তবে সবথেকে অদ্ভুত বিষয়টা হলো, আনিসের মৃত্যুর পর তার মোবাইল ফোন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি পুলিশ তেমন ভাবে এই তদন্ত করছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। আনিসের পরিবারের অভিযোগ, মোবাইল ফোনটা কোথায় আনিসের? ঘটনার পর সমবেদনা জানিয়েছেন আমতা এলাকার স্থানীয় বিধায়ক। এছাড়াও সমবেদনা জানিয়েছেন ভাঙ্গড় এর বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী, রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম সহ আরো অনেকে। ঘটনার তীব্র নিন্দা করে টুইট করেছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ। তিনি টুইট করেছেন, "আনিস এর হত্যাকারীদের শাস্তি চাই। পুলিশের পোশাক পরে তারাই খুন করে যারা পুলিশ এবং সরকারকে ভিলেন বানিয়ে রাখতে চায়। পুলিশের পোশাক কোন পরিকল্পিত ছদ্মবেশ নয় তো? সরকারকে বদনাম করার কিংবা মানুষকে বিভ্রান্ত করার কোন ষড়যন্ত্র নয় তো? ওই ছেলেটির জন্য কার কি গাত্রদাহ হচ্ছিল? এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত দাবি করছি।"