রাজ্যে বিজেপির ব্যর্থতা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। ২০১৯-এ হাওয়ার গতিতে বিজেপির উত্থান এ ভাঁটা পড়ল কীভাবে সে নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রস্তরে কারণ খোঁজার কাজ শুরু হয়েছে। নিচুতলার কর্মী-সমর্থকদের একাংশ মনে করছেন, তৃণমূলের দলছুটদের বিজেপি সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়ে 'স্বচ্ছ' বিজেপির ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব। এ নিয়ে বিজেপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সময় রাজ্যজুড়ে বিজেপির অন্দরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। বিজেপি নেতৃত্ব সেই ক্ষতে মলম লাগালেও তা নিচুস্তরের হৃদয়ের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারেনি। আবার বিজেপির আর একদল বর্ষীয়ান সমর্থক মনে করেন, ২০১৯-এ বামের ভোট রামের দিকে চলে যাওয়ার প্রবণতা একুশের বিধানসভায় ততটা কার্যকরী হয়নি। কারণ হিসাবে বিজেপির অতিরিক্ত 'আত্মবিশ্বাস'-কে কাঠগোড়ায় দাঁড় করিয়েছেন একাংশ। বিজেপির এই ব্যর্থতায় নতুন প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের আরএসএস সংগঠনের নেতৃত্বরা। তার কারণ খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন আরএসএস নেতৃত্ব।
নব্য বিজেপি এবং পুরানো বিজেপির মধ্যে নীতিগত বৈষম্যেও কারণ হিসাবে দেখছেন আরএসএস সংগঠনের একাংশ। তাঁদের দাবি গত ১০ বছরে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে জনমানসে তৈরি হওয়া বিক্ষোভ হঠাৎ করে উবে গেল কীভাবে সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য শুভেন্দু অধিকারী ছাড়া দলছুট তৃণমূলের প্রাক্তন নেতাদের অধিকাংশ নিজেদের গদি ধরে রাখতে ব্যর্থ, তাহলে তৃণমূল নেতাদের দলে টেনে বিজেপির ফায়দা হলো কোথায়? এই নিয়ে বিজেপির নানা মহলে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
অবশ্য আরএসএস সংগঠনের একাংশ মনে করেন রাজ্যে হিন্দুত্বের বার্তা তাঁরা সফল ভাবে জাগিয়ে তুলতে পেরেছেন। তা না হলে ৩ জন বিধায়কের জায়গায় ৭৬ জন বিধায়ক নিয়ে প্রধান বিরোধী দলের তালিকায় আসা সম্ভব হত না। তবে তাঁদের আরও দাবি পশ্চিমবঙ্গবাসী তাঁদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোষণ রাজনীতিতে ক্ষুব্ধ হলেও বিজেপিকে আটকাতে একজোট হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কৈলাস বিজয়বর্গীয় জানিয়েছেন, বাম কংগ্রেসের ভোট বিজেপির ঝুলিতে না গিয়ে তৃণমূলের ঘরে ফিরে গেছে। তাই বিজেপির এই ফল। অন্তত ৬৫ টি আসনে কম ব্যবধানে বিজেপি হেরেছে। তাহলে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে ২০১৯-এর বিজেপির উত্থানে কি তৃণমূলের দলবদলুদের নিয়ে বিজেপি আখেরে ক্ষতি করেছে? তবে আরএসএস সংগঠনের একাংশ মনে করেন রাজ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যেভাবে ঢেলে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে, হিন্দুরা বিজেপিকে দেয়নি। ব্যর্থতার চুলচেরা বিশ্লেষন বিজেপির অন্দরে তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক একাংশ।