দেশজুড়ে ভয়াবহ আকার নিয়েছে কোভিড (COVID-19)। থামছে না করোনাক্রান্তের সংখ্যা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। সমস্ত রাজ্যের প্রায় বেহাল দশা, তবে তার মধ্যেও উল্লেখযোগ্য পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি ও মহারাষ্ট্র। কাজেই অত্যন্ত কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে রাজ্যবাসী। কোথাও বেড বা কোথাও অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু হচ্ছে হাজারো মানুষের। এদিকে গাফিলতি উঠছে চিকিৎসা ব্যবস্থায়। প্রায় সব মহল থেকেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। এমনকি স্বয়ং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের স্বামী পরভলা প্রভাকর, যিনি সরাসরি কেন্দ্র সরকারের বিরোধীতা করে বলেন, "এই মুহূর্তে জরুরি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দরকার দেশে। অথচ, হুঁশ নেই প্রধানমন্ত্রীর। সরকারি কর্তাব্যক্তিরা পরিসংখ্যান তুলে বোঝাচ্ছেন, পরিস্থিতি অতটাও খারাপ নয়। মৃত্যুকে শুধু সংখ্যা হিসাবে দেখানো হচ্ছে রোজ। আড়ালে থেকে যাচ্ছে স্বজনহারা মানুষের যন্ত্রণাকাতর মুখগুলি।"
এদিকে গত কয়েকদিনের মতো সোমবারই ঊর্ধ্বমুখী বাংলার করোনা গ্রাফ। চিন্তা বাড়াচ্ছে ক্রমবর্ধমান অ্যাকটিভ কেস। সোমবার স্বাস্থ্যদপ্তরের দেওয়া বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার কবলে পড়েছেন ১৫,৯৯২ জন। এর মধ্যে শহর কলকাতায় একদিকে আক্রান্ত ৩,৮৬৮ জন। সংক্রমণের নিরিখে প্রত্যাশিতভাবেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। একদিনে সেখানে ৩,৪২৫ জনের শরীরে মারণ ভাইরাসের হদিশ মিলেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা একদিনে সংক্রমিতের সংখ্যা ৯৮২। হাওড়া ও হুগলিতে একদিনে আক্রান্ত যথাক্রমে ৯১৪ ও ৮১৮ জন। ভোটের আগে উল্লেখযোগ্যভাবে দৈনিক সংক্রমণ বেড়েছে বীরভূমে। একদিনে সেখানে আক্রান্ত ৭০৪ জন। রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হল ৭ লক্ষ ৫৯ হাজার ৯৪২ জন। একইসঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা ৬৮ জন। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ১১ হাজার ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে কোভিড-১৯-এ। বর্তমানে করোনায় চিকিৎসাধীন ৯৪ হাজার ৯৪৯ জন।
এই পরিস্থিতিতে নতুন করে দিল্লিতে বেড়েছে লকডাউনের মেয়াদ, কর্ণাটকে জারি নাইট কার্ফু। তবে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা শোচনীয় হলেও, ভোটের জেরে লকডাউনের কোনো শব্দ নেই। তবে ভোটজনিত কারণ হোক কিংবা করোনা, এই মুহূর্তে বন্ধ হয়েছে বহু হাট বাজার। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হাওড়া ও হরি সাহা হাট, যা ব্যাপক জনপ্রিয়। অন্যদিকে, কমেছে ট্রেনের সংখ্যা। গণপরিবহন ব্যবস্থাতেও মাস্ক বাধ্যতামূলক। ফের কড়াকড়ি প্রশাসনিক ব্যবস্থা। দু’দিন আগেই বোম্বে হাইকোর্টের তরফে বিড়ি-সিগারেটের বিক্রিতেও নিষেধাজ্ঞার কথা জানানো হয়। কাজেই, সব রাজ্যের পরিস্থিতি বিচার করে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন, ভোট পর্ব মিটতেই হতে পারে লকডাউন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সকলের মনে প্রশ্ন, ফের কি বন্ধ হয়ে যাবে ট্রেন পরিষেবা? ফের বন্ধ হবে হাওড়া ও শিয়ালদহ!
এই নিয়েই মূলত সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান সুনীত শর্মা। তিনি জানালেন, "রেলকর্মীদের বড় অংশ কোভিডে আক্রান্ত, তবুও রেল বন্ধ হবে না। আপাতত এই নিয়ে রাজ্য সরকার এখনও পর্যন্ত কোনও বার্তা দেয়নি। ফলে পরিষেবা বন্ধের আশঙ্কা নেই।" পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, "কয়েকটি রাজ্য আরটি-পিসিআর ও ভ্যাকসিনের রিপোর্ট নিয়ে সেখানে যাত্রীদের যেতে বলেছে। ফলে আমরা সেরকমভাবে জানিয়ে দিয়েছি। যাতে যাত্রীরা কোনওরকমভাবে হয়রান না হন।" অর্থাৎ একথা স্পষ্ট রাজ্য সরকার লকডাউন কিংবা গণপরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ না করলে, লোকাল ট্রেন বন্ধ হবে না।