মাথার উপর বিপুল দেনার বোঝা। শোধ দিতে না পেরে কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত। কিংবা কোথাও ছেলের চিকিৎসার জন্য প্রচুর টাকার প্রয়োজন। অসহায় পিতা উপায়ান্তর না পেয়ে কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনই ভুরি ভুরি কারণে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন কিডনি দিয়েও ফেলেছেন। তবে সরাসরি কিডনি বিক্রি করতে না পেরে এই মানুষ গুলি দালাল চক্রের শিকার। তাই অধিকাংশ জন তাঁদের প্রাপ্য অর্থ পায়নি বলে অভিযোগ। কলকাতা ও আসামের মধ্যে এমনই একটি একটি বড় কিডনি পাচার চক্রের হদিশ পেয়েছে পুলিশ। যা নিয়ে রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোয়েন্দা মহলে। কীভাবে দিনের পর দিন পুলিশের নজর এড়িয়ে এমনই একটা বড় চক্র চলত, তা এখন খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার। এক কিডনি চক্রের এজেন্ট আসামের মলিগাঁও জেলার দক্ষিণ ধরমতুলে কিডনি বিক্রেতার সন্ধানে আসে। ইতিমধ্যেই ওই এলাকা থেকে বেশ কয়েকজন কিডনি বিক্রি করে তাঁদের প্রাপ্য অর্থ পায়নি বলে ওই এজেন্টের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। অধিকাংশ কিডনি বিক্রেতার অভিযোগ, যে পরিমাণ টাকার বিনিময়ে তাঁরা কিডনি বিক্রি করেছেন, সেই পরিমাণ টাকা তো তাঁরা পাননি, বরং তাঁদের নানা অজুহাতে বারবার ঘোরানো হচ্ছে। এবার প্রশ্ন উঠেছে এই মানুষ গুলি কিডনি বিক্রি করছে কেন? সূত্রের খবর, অধিকাংশ কিডনি বিক্রেতাই দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাস করেন। অধিকাংশ জন প্রচুর ঋণের জালে জর্জরিত। দেনার দায়ে কিডনি বিক্রি করতে পা বড়িয়েছে। কিংবা কিছু মানুষ নিজের সন্তান কিংবা বাড়ির কোন সদস্যের চিকিৎসার জন্য এই পথ বেছে নিয়েছেন।
অন্যদিকে এই কিডনি বিক্রি চক্রের জাল ছড়িয়ে পড়েছে কলকাতা পর্যন্ত। আসামের বিভিন্ন গ্রাম থেকে এজেন্টরা কিডনি বিক্রিকারীদের খোঁজ দেন। তারপর কলকাতার একটি হাসপাতালে গিয়ে কিডনি দিয়ে আসেন সেই ব্যক্তিরা। অবশ্য তার আগে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাজ্য অঙ্গদান স্বীকৃতি কমিটির সামনে নিয়ে যেত। সেখান থেকে সোজা কলকাতায়। কলকাতার একটি হাসপাতালে চলত কিডনি বিক্রির কাজ।
কিছুটা সিনেমার চিত্রনাট্যের মতো শোনালেও আসামের বেশ কয়েকটি গ্রামের অসংখ্য মানুষ ইতিমধ্যেই বহু কিডনি দিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু সেই মানুষরা তাঁদের প্রাপ্য অর্থ পাননি। ইতিমধ্যেই ২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। কীভাবে প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে এতদিন এত বড় একটা চক্র চলল, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পাশাপাশি এই সব গ্রামের মানুষরা কেন কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক একাংশ। তাহলে কি আসামের গ্রামীণ অর্থনীতির করুণ ছবি স্পষ্ট নয়, এমন প্রশ্নও তুলেছেন ওয়াকিবহাল মহল।