পরিস্থিতি ক্রমাগত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, এই পরিপ্রেক্ষিতে তড়িঘড়ি কৃষকদের ট্রাক্টর মিছিল বন্ধ করার নির্দেশ দিল সংযুক্ত কিষান মোর্চা। সকলকে নিজে নিজে প্রতিবাদ স্থানে ফিরে যাবার আর্জি জানিয়েছেন সংযুক্ত কিষান মোর্চার শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ। এছাড়াও, তারা জানিয়েছেন আন্দোলন অব্যাহত থাকবে কিন্তু তা হবে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ। পাশাপাশি পরবর্তী পদক্ষেপ আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হবে বলে জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার নির্ধারিত সময়ের আগে রাজধানীর বুকে ট্রাক্টর মিছিল শুরু করে দিয়েছিলেন কৃষকরা। মিছিল আটকাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় কৃষকদের। দিনভর এই মিছিল নিয়ে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় দিল্লির রাজধানী চত্বর। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে লালকেল্লায় ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। যদিও পুলিশ পরে সেখান থেকে তাদের সরিয়ে দিয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়াও ট্রাক্টর উল্টে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানা গেছে।
তবে এই মিছিল নিয়ে পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। বিভিন্ন মহল থেকে কৃষকদের এই মিছিল নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। সেই পরিস্থিতিতে অবস্থা সামাল দিতে মাঠে নামে কিষান মোর্চা। একটি বিবৃতি জারি করে জানানো হয়, "কিষান প্যারেড বন্ধ করা হয়েছে। প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী যেন তাদের প্রতিবাদ স্থলে ফিরে যান। কিন্তু আন্দোলন চলতে থাকবে।" তবে তাদের দাবি কিছু দুষ্কৃতী এই মিছিলে যুক্ত হয়ে হিংসায় উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। নির্ধারিত রুট মেনে কৃষকদের একাংশ এই মিছিল নিয়ে যায়নি বলে খবর। দিনভর বিক্ষোভরত ছিল দিল্লি। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পাথরের আঘাতে অনেক পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। পাল্টা লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। সঙ্গে ফাটানো হয়েছে কাঁদানে গ্যাসের শেল। দরজা ভেঙে লালকেল্লায় ঢুকে নিজেদের পতাকা তুলেছেন কৃষকেরা।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি নির্দেশিকা অনুযায়ী দিল্লির আংশিক জায়গায় আজকের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হলো ইন্টারনেট পরিষেবা। পাশাপাশি বন্ধ করা হয়েছে মেট্রো পরিষেবা। দুপুর পর্যন্ত কৃষক আন্দোলনে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। লালকেল্লা থেকে ছড়িয়ে দেওয়ার পরে, কৃষকরা আরো প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। মঙ্গলবার দুপুর থেকে নিরাপত্তা এবং অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শিংঘু, গাজীপুর, টিক্রী, মুকারবা চক, এবং নাংলোই এলাকাতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে দুপুর ১২ টা থেকে রাত ১১:৫৯ পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে। এছাড়া দিল্লি মেট্রোর বেশ কয়েকটি স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দিল্লির আইটিও মোড়ে যখন প্রথম সমস্যা সৃষ্টি হয় তখনই দিল্লি মেট্রোর কিছু স্টেশন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকায় কৃষক আন্দোলনের সমর্থক মুখ্যমন্ত্রীরা মাঠে নামেন। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলোট, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং কৃষকদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার বার্তা দেন। একই বার্তা দেন আন্দোলনের মুখে যোগেন্দ্র যাদব, রাকেশ টিকায়েতের গলায়। তবে পরিস্থিতি তাতে কোনো ভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসেনি। প্রতিবাদী কৃষকদের লালকেল্লা থেকে সরাতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। যার ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। এরপর দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ চলতে থাকে কৃষকদের। হিংসাত্মক বিক্ষোভকারীদের হাতে পুলিশ মার খেয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী দিল্লি পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, এই কৃষক বিক্ষোভের ফলে ৮৩ জন পুলিশ কর্মী এবং একজন নাগরিক আহত হয়েছেন। শুধুমাত্র তিলক মার্গ, আইটিও এবং লালকেল্লাতেই আহতের সংখ্যাটা ৭৭। যদিও দিনভর উত্তেজনা আর পরে হিংসার সমস্ত দায় নিজের ঘাড়ে নিয়েছেন যোগেন্দ্র যাদব। তিনি জানিয়েছেন, "যেভাবে বিষয়টি এগিয়েছে, তাতে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী হিসেবে আমি লজ্জিত বোধ করছি। এই সম্পূর্ণ ঘটনার দায় আমি নিজের কাঁধে নিচ্ছি।"