বাদল অধিবেশনের সময় রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) ডাকা বিরোধী বৈঠকে বারবার তৃণমূল কংগ্রেসের গরহাজির নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল। মনে করা হয়েছিল বিরোধীদের ডাকা কোন বৈঠকে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল সমান গুরুত্ব পাচ্ছে না, বরং কংগ্রেস বেশি 'প্রাধান্য' পেয়ে যাচ্ছে। এই দাবি তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে তো ছিলই, এবার গতকালের সোনিয়া গান্ধীর ডাকা বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Bandyopadhyay) এমন একটি প্রস্তাবে সে কথা স্পষ্ট হল মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। এদিনের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রস্তাব রাখেন, ভবিষ্যতে বিজেপি বিরোধী জোটের পরিকল্পনা রূপায়ণে একটি 'কোর' কমিটি তৈরি করা হোক। এই কমিটি বিরোধী ঐক্য গঠনে পরবর্তীতে কী কী ব্যবস্থাপনা গ্রহণ প্রয়োজন, সে বিষয়ে দিকনির্দেশ করবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রস্তাব সোনিয়া গান্ধী-সহ বাকি নেতাদের সকলেই সমর্থন জানিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।
এদিনের এই বৈঠক হয় ভার্চুয়াল মাধ্যমে। বিকেল ৪ টের সময় শুরু হয়ে চলে প্রায় ঘন্টা চারেক। এই বৈঠকে কী কী বিষয়ের উপর আলোচনা হতে পারে তার একটা খসড়া প্রতিলিপি সমস্ত নেতা-নেত্রীদের কাছে বৃহস্পতিবার পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল এই প্রস্তাবে সমর্থন জানালে নেতা-নেত্রীরা সই করতে পারেন। যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আলোচনা না করে কোন প্রস্তাবেই সই করেননি। তিনি জানান যে আলোচনার বিষয়ে সহমত পোষণ করলেও বৈঠক ছাড়া কোন প্রস্তাবে সমর্থন জানানো ঠিক হবে না। এদিনের বৈঠকে তিনি বলেন, "ভুলে যান আমরা নেতা। আমরা কেউ নেতা নই। ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার হিসেব সরিয়ে রাখুন। আসল হল জনগনের স্বার্থে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখতে হবে। তাতে সকলকে একসঙ্গে পা মেলাতে হবে। ইগো রাখলে চলবে না।" মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রস্তাব সকলেই মেনে নেন।
এদিনের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও উল্লেখ করেছেন, বিজেপি বিরোধী শিবিরে সকলেই কাছে টেনে নিতে হবে। অর্থাৎ কংগ্রেসের সঙ্গে যে দলগুলি জোটের আওতায় নেই, তাদেরকেও কাছে টেনে নিতে হবে। এক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী দিল্লির আপ দলকেও এই জোটের সঙ্গে থাকার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। খসড়া প্রস্তাবে অনেকগুলি বিষয় থাকলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মূলত পাঁচটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিতে চেয়েছেন। সকলের জন্য কোভিড টিকা, কৃষি আইন প্রত্যাহার, পেট্রল-ডিজেলের দাম কমানো এবং আয়করের আওতার বাইরে থাকা পরিবার-পিছু সাড়ে সাত হাজার টাকা, পেগাসাস নিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্ত - এই পাঁচটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
অন্যদিকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বিভিন্ন রাজ্যে যেভাবে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর সহায়তায় প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার চেষ্টা করছেন, সে বিষয়য়টিও তিনি তুলে ধরেন। সম্প্রতি ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকার বিড়ম্বনায় পড়েছে। কীভাবে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে কাজে ধাগিয়ে বিপদে ফেলার চেষ্টা করছেন, এ বিষয়টিও এদিনের বৈঠকে তিনি তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, মাসে অন্তত একটি করে এই কোর কমিটির বৈঠক হোক। পরবর্তী কালে বিরোধী ঐক্য গঠনে এই কোর কমিটি মুখ্য ভূমিকা পালন করুক, এই মত প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।