পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এবারে হতে চলেছেন বিজেপির এনডিএ জোটের পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী। আজকে বিজেপির উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠকে তার নামের উপরে সীলমোহর লাগালেন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। তিনি জানিয়েছেন, ধনখড় এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল। তার সঙ্গে তিনি কিন্তু কৃষক সন্তান। এই কারণেই তাকে এনডিএ-র তরফে উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করা হয়েছে।
অন্যদিকে, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সম্পর্ক যেন একেবারেই তলানিতে। তৃণমূলের একাধিক নেতৃত্ব তাকে বারবার নানাভাবে আক্রমণ করেছেন। তার বক্তব্যের এবং তার কাজের সমালোচনা করা হয়েছে বারংবার। বিজেপি ঘনিষ্ঠ বলে এতদিন অভিযোগ তোলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। কালী বিতর্কের সময় শুভেন্দু অধিকারী সহ সাধুদের একটি দল যখন রাজভবনে গিয়ে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করছিল সেই সময় সেই একই সভায় যোগ দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালও। তৃণমূল, কংগ্রেস এবং বামেরা একজোটে তার বিরোধিতা করলেও, সেই জগদীপ ধনখড়কেই এবার উপরাষ্ট্র পদে প্রার্থী ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিল বিজেপি। এবার বিরোধীরা বিশেষত বাংলার তৃণমূল নেত্রী কি পদক্ষেপ নেন এবার সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক মহল।
প্রসঙ্গত, বাংলার রাজ্যপালের নাম ভারতের উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে। ৩০ শে জুলাই ২০১৯ সালে বাংলার রাজ্যপাল হিসেবে জীবনের নতুন ইনিংস শুরু করার পরে প্রথম থেকেই তৃণমূলের রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করে এসেছেন রাজ্যপাল। চিঠি এবং পাল্টা চিঠি নবান্ন এবং রাজভবনের মধ্যে চলেছে দীর্ঘ কয়েক বছর। পরিস্থিতি এমনই জায়গায় পৌঁছেছিল যে টুইটারে রাজ্যপালকে ব্লক করে দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সেই রাগারাগি এখন আর নেই। অন্তত দার্জিলিং এর বাসভবনে জগদীপ ধনখড় এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলাপচারীতা দেখে অন্তত সেরকমটাই বারবার মনে হয়।
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের তরফ থেকে সমালোচনা পেলেও অবধারিতভাবেই ভারতীয় জনতা পার্টির কাছ থেকে বারবার সমর্থন পেয়েছেন বাংলার রাজ্যপাল। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের নিজেদের রাজ্যপাল হিসেবেও তাকে সিংহাসনে বসিয়েছিলেন বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ধীরে ধীরে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হতে শুরু করেছিল বাংলার রাজ্যপালের। তাই হয়তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের তীব্র বিরোধিতা করার পুরস্কারই পেলেন জগদীপ ধনখড়। তবে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিচার করে কি কিছুটা চাপ অনুভব করছে তৃণমূল কংগ্রেস? তৃণমূলের রাজ্যসভার সংসদ শান্তনু সেন যদিও বলছেন, আমরা একুশে জুলাই নিয়ে ব্যস্ত আছি এবং আমরা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে বিশ্বাস করি। তাহলে কি তার বিরুদ্ধে এবারে একজন ভালো প্রার্থী দিতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? সর্বোপরি, এই পরিস্থিতিতে বাংলার পরবর্তী রাজ্যপাল কে হবেন? তার সঙ্গে কেমন সম্পর্ক হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের? এই সমস্ত প্রশ্নই যেন এখন কুরে কুরে খাচ্ছে তৃণমূলকে।