দিল্লি বধ! সাত বছর পর আইপিএল ফাইনালে কেকেআর
লো স্কোরিং ম্যাচ গড়াল শেষ ওভার পর্যন্ত
২০১৪ সালের পর দীর্ঘ সাত বছরের অপেক্ষা। অবশেষে আইপিএলের ফাইনালে কলকাতা নাইট রাইডার্স। প্লে অফের দ্বিতীয় ম্যাচে কোহলির ব্যাঙ্গালোরকে হেলায় হারিয়েছিল মর্গান ব্রিগেড। ফাইনালের পথে শেষ কাঁটা ছিল রিষভ পন্থের দিল্লি ক্যাপিটালস। আজকের উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ডিসি-কে কোনোমতে হারিয়ে ফাইনালে নাইটরা। মহাষ্টমীর রাতে দিল্লি ক্যাপিটালসের ১৩৫ রানের বদলে ১ বল বাকি থাকতে প্রয়োজনীয় রান তুলে ম্যাচ পকেটে পুরে নিল কেকেআর। এখন ব্যাটে বলে শক্তিশালী কেকেআরের সামনে শেষ প্রতিপক্ষ ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস। ২০১২ সালেও পুনের স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল এই দুই দল। সেবারেই প্রথম বারের জন্য আইপিএল ট্রফি নিজেদের হাতে তুলে নেয় কলকাতা। আবারো একই সুযোগের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কেকেআর। ২০১২-র পুনরাবৃত্তি কি দ্বিতীয়বারের জন্য দেখবে ক্রিকেটপ্রেমী বাঙালি? তার উত্তর পাওয়া যাবে বিজয়া দশমীতে।
শারজার লো স্কোরিং পিচে টসে জিতে বোলিং বেছে নেন মর্গান। আজ ম্যাচের শুরু থেকেই নাইটদের বোলিং ছিল অনবদ্য। ৩২ রানের মাথায় প্রথম উইকেট খোয়ায় ক্যাপিটালস। বরুন চক্রবর্তীর বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ঘরে ফেরেন পৃথ্বী শ (১৮)। ধাওয়ান করেন ৩৬। স্টইনিস করেন ১৮। শুরু থেকেই দিল্লির রানের গতি ছিল অত্যন্ত মন্থর। ১৬ তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মাত্র ৬ রান করে আউট হন দলের ক্যাপ্টেন পান্থ। দলের রান তখন মাত্র ৯০। তবে ১৮ তম ওভারে খেলা ঘোরান শিমরান হেটমায়ার। লোকি’র বলে বিশাল দুটো ছক্কা হাঁকান তিনি। তবে তাঁকেও ফিরতে হয় মাত্র ১৭ রান করে। ম্যাচের শেষ বল পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন শ্রেয়াস আইয়ার (৩০*)। শেষ বলে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে তিনি দলের রান সমাপ্ত করেন ১৩৫ এ। নাইটদের সামনে টার্গেট ছুঁড়ে দেন ১৩৬। শারজার মতো মন্থর পিচে যা লড়াই করার জন্য যথেষ্ট। কলকাতার তরফ থেকে ২ টি উইকেট তুলে নেন বরুন। একটি করে উইকেট পান মাভি এবং লোকি।
কলকাতার হয়ে ব্যাট করতে নেমে অনবদ্য শুরু করেছিলেন গিল এবং ভেঙ্কি আইয়ার। মন্থর পিচ হওয়া সত্ত্বেও এদিন ৩ টি ছয় এবং ৪ টি চার সহযোগে একটি অর্ধশতরান উপহার দেন আইয়ার। গিলও দলের হয়ে যোগ করেন মুল্যবান ৪৬ রান। ৯৬ রান পর্যন্ত নাইটদের একটিও উইকেট ফেলতে ব্যর্থ হন দিল্লির বোলাররা। সে সময় সকলেই মনে করেছিল হয়ত হাসতে হাসতে জিতে যাবে কেকেআর। তবে আইয়ারের আউট হয়ে যাওয়ার পর থেকেই ম্যাচের রুপ বদলাতে শুরু করে। নিজেদের পাকড় ক্রমশ শক্ত করতে শুরু করেন দিল্লির বোলার-ফিল্ডাররা। ১২৩ থেকে ১৩০ রানের মধ্যে ৬ টি উইকেট খোয়ান কেকেআর ব্যাটসম্যানরা। কার্ত্তিক, মর্গান, শাকিব এবং নারিন, চার ‘মহারথী’ই আজ রানের খাতা পর্যন্ত খুলতে পারেননি। হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ যে এভাবে হাতের বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে তা দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি কোনও কেকেআর সমর্থক। শেষ ওভারে বাকি থাকে ৭ রান। তবে সেই সাত রানও মনে হচ্ছিল, কলকাতার জন্য পর্বতপ্রমান। যদিও শেষ বল বাকি থাকতেই রাহুল ত্রিপাঠির (১২*) দৌলতে কলকাতা প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয়। দিল্লির হয়ে দুটি করে উইকেট পান নরতজে, আশ্বিন এবং রাবাডা। একটি উইকেট পান আবেশ খান। হাফ সেঞ্চুরি করে ম্যাচের সেরা ভেঙ্কাটেশ আইয়ার। তবে সহজ ম্যাচ কঠিন করে জেতার বিশেষত্বে আজও অনড় কলকাতা নাইট রাইডার্স।
তবে আজকের ম্যাচ জিতে তৃতীয়বারের জন্য ইতিহাসের দোরগোড়ায় কলকাতা। আর এর আগে পর্যন্ত ফাইনালে উঠে হারের মুখ দেখেনি কেকেআর। ২০১২ সালের আইপিএল ফাইনালে কলকাতা মুখোমুখি হয়েছিল ধোনির নেতৃত্বাধীন সিএসকের। সেবার কলকাতার অধিনায়ক ছিলেন গম্ভীর। এবার মর্গান। ক্যালেন্ডারেও শেষের ২ আর ১ জায়গা বদল করেছে নিজেদের। বিজয়া দশমীতে ফাইনাল। বাঙালীদের মনে আবার জাগছে আশা। একদিকে মা ফেরত যাবেন কৈলাসে। অন্যদিকে হয়ত বহুপ্রতীক্ষিত আইপিএল ট্রফি নিয়ে সুদুর আরব থেকে কলকাতায় আসবেন মর্গান অ্যান্ড কোম্পানি।