লক্ষ্য স্থির থাকলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব, এক জ্বলন্ত উদাহরণ তুষার দাস
আড়াই লাখের বেশি সাবস্ক্রাইবার নিয়ে গোল্ড প্লে বাটনের দিকে তুষার
প্রত্যেকেরই বড়ো হওয়ার পিছনেই লুকিয়ে রয়েছে হাজারো গল্প। যা সিনেমাকেও হার মানায়। তবে এর মধ্যে খুব কম সংখ্যক মানুষের গল্পই আমাদের কাছে প্রকাশ্যে আসে। তেমনই অদম্য ইচ্ছাশক্তির লড়াইয়ের এক গল্প আজ রইল।
একটা ছোট্ট মধ্যবিত্ত পরিবার। মা-বাবা আর দুই ছেলেকে নিয়ে হাসি-খুশির সংসার বলা চলে। আর পাঁচটা বাবার মতোন এই পরিবারের বাবাও চাইতেন তাঁর ছেলে যেন মন দিয়ে পড়াশোনা করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু এ গল্পের নায়কের মনে আবার ছিল ভিন্ন ইচ্ছে। পরিবারের ইচ্ছে পূরণের সঙ্গেই ছিল তাঁর নিজের স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হলেও, তার জীবনের মূল মন্ত্র ছিল 'পরিশ্রমই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি'। এই মন্ত্রকে মান্যতা দিয়েই আজ বাংলার জনপ্রিয় ইউটিউবারদের মধ্যে অন্যতম এক ইউটিউবার তুষার দাস। বর্তমানে সে প্রথম বর্ষের ছাত্র, সাবস্ক্রাইবার সংখ্যাও পেরিয়েছে আড়াই লাখ।
তবে আজ সিলভার প্লে বাটনে যার নাম একেবারে উজ্জ্বল, আদৌও ইউটিউবের দুনিয়ায় এতটাও উজ্জ্বল ছিল না তাঁর পথচলা। নিজের স্কুলের এক শিক্ষকের ইউটিউব চ্যানেল দেখে, এই প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে প্রথম তাঁর জ্ঞান। সেই থেকেই মনের মধ্যে সুপ্ত ইচ্ছে, সেও ইউটিউবে ভিডিও বানাবে। কিন্তু রাতারাতি কন্টেন্ট কোথায় মিলবে? এসময় নিজের বন্ধুদের নিয়ে এবং নিজের সাত বছরের অভিনয় শেখার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সচেষ্টায় তৈরী হতে লাগল স্বল্প দৈর্ঘ্যের চিত্র। সে সময় তুষার একাই স্ক্রিপ্ট লিখছে, একাই এডিট করছে। শুধু সঙ্গে ছিল কয়েকজন সঙ্গী অগ্নি দাস, আকাশ বিশ্বাস, দিপু ঘরামী, সাগর পাণ্ডে, দীপক দাস, সুব্রত দাস, প্রতাপ ব্যানার্জী। যাদের ছাড়া তুষারের নামের পাশে 'ইউটিউবার' শব্দটি বেমানান, এমনটাই মত তুষারের।
তবে কারণবশত শর্ট ফিল্মের এই পথও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সময় এগোতেই আসে নয়া মোড়। শর্ট ফিল্ম ছেড়ে নতুন চ্যানেল খুলে 'বোকা চন্দ্র'কে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে রোস্টিং ভিডিও বানাতে শুরু করে তুষার। অন্য ক্রিয়েটারদের ভিডিও নিয়ে কটাক্ষ এবং তাঁদের বিপরীতে গিয়ে কিছু কথা ও তাঁদের গাফিলতি তুলে ধরাই মূলত এই ভিডিওর কাজ। যা বর্তমানে ভীষন জনপ্রিয়। তবে এইরকম ভিডিও একেবারেই পছন্দ হয়নি তুষারের পরিবারের। অবশেষে এই পথেও আসে বিরতি। এরপর টিকটিক অ্যাপে ভিডিও পোস্ট করার পর, যখন তা হাজার হাজার মানুষের কাছ পৌঁছায়, ঠিক ওই সময় ব্যান হয়ে যায় টিকটক অ্যাপ।
তবে এত বাঁধার পরেও থেমে থাকেনি তুষার। পরবর্তীতে নিজের জীবনের সুখ-দুঃখের নানান বাস্তব কাহিনী ভিডিওর মাধ্যমে তুলে ধরতে থাকে সে। ভালোবাসা পেতে শুরু করে দর্শকদের। মুহুর্তেই শেয়ার হতে থাকে সমস্ত ভিডিও। মাত্র কয়েক মাসেই এক লাখ সাবস্ক্রাইবার হয়ে যায় তুষারের চ্যানেলে। এরপর সিলভার প্লে বাটন, এবং স্কুলের গণ্ডি না পেরোতেই শুরু হয় উপার্জন। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি তাকে। বর্তমানে আড়াই লাখের বেশি সাবস্ক্রাইবার নিয়ে গোল্ড প্লে বাটনের উদ্দেশ্যে এগিয়ে চলেছে তুষারের চ্যানেল।